২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভিসি অবাঞ্ছিত, ক্যাম্পাস ছাড়বেন না শিক্ষার্থীরা!

আন্দোলনরত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা - নয়া দিগন্ত

প্রশাসনের বেঁধে দেয়া সময়সীমা পার হলেও আবাসিক হলগুলো ছেড়ে যাননি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তারা হলে থাকার সিদ্ধান্তে অটল রয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে তাদের হল ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল।

জানা যায়, বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের প্রভোস্টরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় শিক্ষার্থীদের হল ছেড়ে যাওয়ার কথা বলেন তারা। কিন্তু তারপরও হল প্রভোস্টের কথায় কর্ণপাত করেননি শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

এদিকে বন্ধ ঘোষণার পরও শিক্ষার্থীরা হল ও ক্যাম্পাস ছেড়ে না যাওয়ায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করলেও শিক্ষার্থীরা প্রশাসনে রক্তচক্ষু উপেক্ষা করেই হলে অবস্থান করছেন। তারা ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রসেফর ড. এস এম ইমামুল হককে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছেন। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘোষণা দেয় শিক্ষার্থীরা।

এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত তাকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। আর ক্ষমা না চাইলে তাকে অবশ্যই পদত্যাগে বাধ্য করা হবে।

এর আগে বুধবার গভীর রাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ঘোষণা এবং বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার মধ্যে সকল শিক্ষার্থীকে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হলেও বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকে। বিক্ষোভের পর তারা হল ত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্ব-স্ব হলে গিয়ে অবস্থান নেয়। তবে বিকেল ৫টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলের আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ এবং বিকেলের মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দিলেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি হল ত্যাগ না করার ঘোষণা দিয়েছেন। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

এর আগে শিক্ষার্থীরা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়ে ভিসির ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলার প্রতিবাদ এবং ওই উক্তি প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।

এছাড়া তারা টিএসসিতে পাঠদান না করানো, সেমিনার রুমের ভাড়া ৩ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে ৫শ টাকা করা এবং সকল জাতীয় দিবস শিক্ষক-শিক্ষার্থী সমন্বয়ে উদযাপন করার দাবি তুলেছেন। এসব দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে বৈকালিন চা চক্র ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সেখানে শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এতে শিক্ষার্থীরা মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের বাইরে প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ভিসি ক্ষুব্ধ হয়ে শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলেন বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। এর প্রতিবাদে এবং ভিসির ওই উক্তি প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে একক ক্ষমতাবলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেন ভিসি।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক বলেন, গত বুধবার মুষ্টিমেয় শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের হয়রানি করেছিল। এভাবে চলতে দেয়া যায় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক-সাধারণ শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং সরকারি সম্পদের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। এই আন্দোলন সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নয়, স্বার্থাস্বেষী মহলের ইন্ধনে একটি বিশেষ গোষ্ঠী আন্দোলনের নামে অরজকতা করছে। এটা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে পড়ে। কেউ ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথাও বলেন তিনি।

এদিকে ক্যাম্পাসে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজমান থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। বৃহস্পতিবার তিনি মোবাইল ফোনে সাংবাদিকদের জানান, ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ও অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement