২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ : সাংবাদিক আহত

সংঘর্ষের সময় ছাত্রলীগের একটি পক্ষের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মহড়া - নয়া দিগন্ত

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিলেট এমসি কলেজে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার সকালে মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠনের বসন্ত বরণ অনুষ্ঠানে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনার সময় কর্তব্যরত ফটো সাংবাদিকের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে ৪ ফটো সাংবাদিক আহত হন। হামলার শিকার ফটো সাংবাদিকরা হলেন- ইউসুফ আলী (দৈনিক সমকাল), অসমিত অভি (দৈনিক ভোরের কাগজ), মিঠু দাশ জয় (সিলেট শুভ প্রতিদিন) ও কাওসার আহমদ (সিলটিভি)।

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মোঃ জেদান আল মুসা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ছাত্রলীগের দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়ার খবর পাওয়া মাত্র শাহপরান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

জানা যায়, সোমবার সকাল ১০টায় মোহনা সাংস্কৃতিক সংগঠনের আয়োজনে শুরু হয় বসন্ত উৎসব। এ উৎসব চলাকালীন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে বসা নিয়ে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় সেখানে থাকা সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা।

ছাত্রলীগের হামলায় আহত আলোকচিত্রী অসমিত অভি বলেন, এমসি কলেজে মোহনার বসন্ত উৎসব স্থলে বসাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় দৈনিক শুভ প্রতিদিনের ফটো সাংবাদিক মিঠু দাস জয় সংঘর্ষের ছবি তুলতে গেলে তার ওপর চড়াও হয় কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা। পরে অন্যান্য সাংবাদিকরা এগিয়ে গেলে তাদের ওপরও হামলা করে ছাত্রলীগ কর্মীরা।

আহত ইউসুফ আলী জানান, ছাত্রলীগ কর্মীরা উপস্থিত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। হামলার সময় আমার হাতে থাকা ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু সকলের উপস্থিতে তা আর ছিনিয়ে নেয়া সম্ভব হয়নি।

শাহপরান (র:) থানার ওসি আখতার হোসেন বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে আছি। সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ব্যাপারটি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি।


প্রেম নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে দফায় দফায় সংঘর্ষ

জবি প্রতিবেদক, (০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)

প্রেমঘটিত বিষয় নিয়ে জটিলতা এবং ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার ও আগের ঘটনা জের ধরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি বাস ভাঙচুর ও ১৫ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হয়। ক্যাম্পাসে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক শাহীন মোল্লাসহ প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্য আহত হন।

হেলমেট পরিহিত ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের কর্মীরা লোহার রড, লাঠি, হাতুড়ি, চাপাতিসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়। এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে স্থিতিশীলতা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং দলীয় শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখতে নেতৃবৃন্দের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার ঘাটতি পরিলক্ষিত হওয়ার অভিযোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করেছে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন তথ্যটি নিশ্চিত করেন। এ ছাড়া ঘটনা তদন্ত করতে চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আছেন- সোহান খান, আরেফিন সিদ্দিক সুজন, আল নাহিয়ান খান জয়, ইয়াজ আল রিয়াদ।

জানা যায়, প্রেমঘটিত তুচ্ছ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের কর্মী আসম আইয়ুব তুহিনের ওপর ছাত্রলীগ কর্মী মেহেদী হাসান মুন, ১৩ ব্যাচের কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল রিফাতসহ কয়েকজন হামলা করে।

পরে সন্ধ্যায় সভাপতি তরিকুল ইসলামের গ্রুপের কর্মী মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান নয়ন ও রিফাত তুহিনকে সুমনা হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের সামনে এলে তাদের ওপর সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের কর্মীরা হামলা চালায়। এর জেরে রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের কর্র্মীরা একত্র হয়ে ক্যাম্পাসে শহীদ মিনারের সামনে ও বিজ্ঞান ভবনের চত্বরে অবস্থান নেয়।

একপর্যায়ে মহড়া দেয়ার সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা একে অপরকে ধাওয়া দেয়। এ সময় দুই গ্রুপের কর্মীরা লাঠি, লোহার রড, হাতুড়ি, চাপাতিসহ একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু করে। সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা সাধারণ সম্পাদকের গ্রুপের কর্মীদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাসের পেছনের গেট দিয়ে বের করে দেয়। সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে অবস্থান নেয়। সাড়ে ১১টায় সাধারণ সম্পাদক কর্মীরা প্রধান ফটক দিয়ে ক্যাম্পাসে ঢুকতে চাইলে সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা তাদের আবার ধাওয়া করে।

এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার মাঝখানে পড়ে ইটের আঘাতে আহত হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, বিজ্ঞান ভবন ও ক্যান্টিনের সামনে কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ক্যাম্পাসের ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকা চারটি বাস ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ইটের আঘাতে ভাঙচুর হয়। বেলা ১টায় ক্যাম্পাসের ভেতরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করার পর সাধারণ সম্পাদেকর কর্মীরা ক্যাম্পাসে এলে সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা তাদের ওপর আবার হামলা করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক ভবনের নিচে পরিসংখ্যান বিভাগের শ্রেণিকক্ষের দরজা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষের সময় অর্ধশতাধিক ছাত্রলীগ কর্মী হেলমেট পরিহিত ছিল। তারা ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মোটরবাইকে থাকা হেলমেটে জোর করে কেড়ে নেয়। এ দিকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার সময় রফিক ভবন ও অবকাশ ভবনের বারান্দায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে থাকলে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাদের ওপরও ইটপাটকেল ছোড়ে। অবকাশ ভবনের তৃতীয় তলা সাংবাদিক সমিতি থেকে সাংবাদিকরা ঘটনার ছবি ও ভিডিও করতে চাইলে ছাত্রলীগের মেয়ে কর্মীরা সমিতির ভেতর প্রবেশ করে সাংবাদিকদের মোবাইল কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে।

সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ কর্মী খালিদ মাহমুদ (১৩তম ব্যাচ), সামসুল হুদা গাজী (১৩তম ব্যাচ), মামুন (১২তম ব্যাচ), মাহফুজ (১২তম ব্যাচ), প্রান্ত (১২তম ব্যাচ), রেজওয়ান, ইশরাক চৌধুরী (১৪তম ব্যাচ), নোমানসহ ১৫ ছাত্রলীগ কর্মী আহত হন। তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যাল সেন্টার, সুমনা হাসপাতাল, ন্যাশনাল হাসপাতাল, মিডফোর্ট হাসপাতাল ও ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

জবি ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, গত বৃহস্পতিবার মেয়েলি একটা বিষয় নিয়ে সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে মারধর করে। রোববার এ ঘটনার সমাধানে আমাদের নিজেদের মধ্যে বসার কথা ছিল। কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা তার আগেই আমার কর্মীদের ওপর আক্রমণ করছে। আমি অসুস্থ থাকার কারণে ক্যাম্পাসে না আসায় পরে আমার ছেলেরাও সাধারণ সম্পাদকের কর্মীদের ধাওয়া করে। পরে ক্যাম্পাসে সিনিয়র নেতাদের পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি।

জবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন, পূর্বঘটনার জেরে মারামারির সূত্রপাত হয়। আমার কর্মীদের ওপর সভাপতি গ্রুপের কর্মীরা আক্রমণ করে। আজকের ঘটনায় যারা জড়িত তাদেরকে চিহ্নিত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা নেবে। তবে সংঘর্ষের ঘটনায় কেউ আহত হয়নি।

কোতোয়ালি জোনের ডিসি বদরুল হাসান বলেন, ক্যাম্পসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া চলার সময় আমরা মাঝখানে অবস্থান নিই এবং দুই পক্ষকে আলাদা রেখে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। এ সময় ক্যাম্পাসের ভেতরে ও বাইরে অতিরিক্ত দুই প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ড. নূর মোহাম্মদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সাথে আলোচনা করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement