২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ডাকসু নির্বাচন

সবার দাবি হলের বাইরে ভোটকেন্দ্র, ছাত্রলীগের না

কেন্দ্রিয় ছাত্র সংসদ - সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন করতে ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ পরিষদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় উপস্থিত দু’টি ছাত্র সংগঠন ব্যতীত বেশির ভাগ সংগঠনের নেতারা আবাসিক হলের বাইরে ভোট কেন্দ্র রাখার দাবি জানান।

পাশাপাশি ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নিশ্চিতের দাবিও জানান তারা। তবে আগে থেকেই আবাসিক হলগুলোয় ভোটকেন্দ্র স্থাপনের দাবি জানিয়ে এসেছে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। গতকালও তারা এমন দাবি জানান। একই দাবি জানায় জাসদ ছাত্রলীগ। এদিকে প্রার্থীদের বয়সসীমা নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মধ্যে মতবিরোধ দেখা যায়। তবে সর্বোপরি মার্চেই নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান। গতকাল বিকেলে পরিবেশ পরিষদের সভায় উত্থাপিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ভিসি এবং ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে এসব বিষয় উঠে আসে। সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব বিষয়ে জানান তারা।

গতকাল সোমবার ভিসি কার্যালয়সংলগ্ন আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত প্রায় চার ঘণ্টার বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান।

এ সময় প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদ, প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সামাদ, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ছাত্রলীগ, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রমৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র আন্দোলনসহ ১৪টি ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় ও বিশ^বিদ্যালয় শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনা সভায় ছাত্র সংগঠনের নেতারা প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তাদের বিভিন্ন দাবির বিষয় তুলে ধরেন। এ সময় ভোটকেন্দ্র নিয়ে সংগঠনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন দাবি উঠে। জানা যায়, হলের মধ্যে কেন্দ্র করার দাবি জানান ছাত্রলীগ ও জাসদ ছাত্রলীগ। অন্য দিকে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন অ্যাকাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র রাখার দাবি জানায় ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশনসহ বাকি ১২ সংগঠনের নেতারা। এ সময় তারা ভোটের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য ভোটকেন্দ্রগুলোকে সিসিটিভির আওতায় আনার দাবি জানান।

ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসাইন বলেন, ছাত্রদলসহ সব ছাত্র সংগঠনের পক্ষে থেকে মধুর ক্যান্টিন, আবাসিক হলগুলোয় সহাবস্থানের দাবি করা হয়েছে। ভোটার এবং প্রার্থিতার ক্ষেত্রে যারা ডাকসুর ফি প্রদান করে সবাইক সুযোগ দিতে হবে। এখানে কোনো প্রতিবন্ধকতা করা যাবে না। ভোটকেন্দ্র অ্যাকাডেমিক ভবনে স্থানান্তরের জন্য গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের মাধ্যমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও বিশ্বাসযোগ্য করার দাবি জানানো হয়। এ সময় তার পাশে উপস্থিত থাকা ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, ছাত্রলীগ আমাদের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে এলে বিভিন্ন সময় মারধর করে। তিনি ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দায়িত্বশীল ভূমিকা প্রত্যাশা করেন। পরে ছাত্রদল নিয়মিত মধুর ক্যান্টিনে যাবেন বলে ঘোষণা দেন তিনি।

তবে ভোটকেন্দ্র হলেই রাখার পক্ষে মত দিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম হলকেন্দ্রিক। তাই ভোটকেন্দ্র হলের মধ্যে করা হোক। সহাবস্থানের বিষয়ে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে সহাবস্থান আছে; কিন্তু ছাত্রদলকে ইতিবাচক ধারায় আসতে হবে। বয়স নিয়ে তিনি বলেন, ত্রিশ বছর বয়সী যে কেউ প্রার্থী ও ভোটার হতে পারবে।

ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দি বলেন, অ্যাকাডেমিক ভবনে ভোটকেন্দ্র আনার জন্য প্রশাসনের কাছে বেশির ভাগ ছাত্র সংগঠন দাবি জানিয়েছে। আমরাও একই দাবি জানিয়েছি। তিনি সান্ধ্যকালীন ছাত্রদেরও ভোটার করার দাবি জানান।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে ভোটকেন্দ্র করার দাবি জানিয়েছি, যাতে সবার জন্য সহাবস্থান থাকে। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আচরণবিধি কমিটির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা শুনেছি যারা এই দুই কমিটিতে দায়িত্ব পেয়েছেন তারা সবাই একটা দলের। আমরা চাই সব সংগঠনের নেতাদের পরামার্শ নিয়ে এসব কমিটি গঠন করা হোক।

এদিকে ভোটার ও প্রার্থীদের বয়স নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে খোদ ছাত্রলীগে। জানা যায়, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী চাকরিতে প্রবেশের বয়সের সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্রার্থী ও ভোটারদের বয়স ত্রিশ বছর রাখার দাবি জানান। কিন্তু ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন এই বক্তব্যের দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি শুধু নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ভোটার ও প্রার্থী করার দাবি জানান।

সভা শেষে ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সভায় গঠনতন্ত্র ও আচরণ বিধি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। গঠনতন্ত্র নিয়ে যে সুপারিশ করা হয়েছে তা সিন্ডিকেট সভায় উঠবে। সেখানে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আচরণ বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমাদকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সে বিষয়টি দেখবেন। তফসিলের বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা একটা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে তফসিল দেয়া হবে। আমরা এবং আমাদের সিন্ডিকেট সদস্যরা একটা বিষয়ে একমত যে, যারা ভোট দিতে পারবে তারা প্রার্থী হতে পারবে। এ সময় তিনি বলেন, আগামী মার্চেই ডাকসু নির্বাচন হবে সে লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement