১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাবির শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ

ঢাবির শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ - ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে শিশু নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগী ৯ বছরের মেয়ে শিশুটি তাদের বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ করতেন। দীর্ঘদিনের নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার ভোরে বাসা থেকে পালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের উদায়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে আশ্রয় নেয়। পরে পুলিশ সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে। সর্বশেষ তথ্যমতে সে উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অক্ষ্যকের তত্ত্ববধানে আছেন।

অভিযুক্ত শিক্ষক দম্পতি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবর্তী এবং ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সুতপা ভট্টাচার্য। ঘটনাটি তদন্ত করে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী।

নির্যাতনের শিকার ওই শিশুর নাম আনিতা (০৯)। তার গ্রামের বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়। উদ্ধারকৃত ওই শিশু এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে আছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী।

জানা যায়, ভুক্তভোগী আনিতা গত ৩-৪ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোড আবাসিক এলাকায় অভিযুক্ত শিক্ষক দম্পতির বাসায় কাজ করতো। শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, তারা ভুক্তভোগীকে বিভিন্ন সময় শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। ঠিকমতো খাবার না দেয়া এবং বাসার ভেতরেই তাকে অবরুদ্ধ রাখতেন।

দীর্ঘদিনের এ নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে মঙ্গলবার ওই শিশু নির্যাতন বাসা থেকে বেরিয়ে পরে। এরপর বাসার পাশের উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে পালিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে খবর পেয়ে উদয়ন স্কুল থেকে প্রক্টর টিমের মাধ্যমে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষকদ্বয়ের এক প্রতিবেশী বলেন, আনিতাকে যখন মারধর করতো, তখন আমরা এর প্রতিবাদও করেছি। তার নাম নিয়েও তাদের আপত্তি ছিলো। কাজের মেয়ের নাম কেন এতো আধুুনিক হবে এটা নিয়ে তারা ওই শিশুকে খোটা দিতো। তাকে তিন বেলা খেতে না দিয়ে এক বেলা খেতে দিতো। শিশুটিকে দেখলেই বুঝতে পারবেন।’

একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গত মঙ্গলবার ওই শিক্ষকের কোয়ার্টারে পুলিশ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসেছিল। তারা কোর্য়াটারের মধ্যে এ বিষয়ে একটি মিটিং করেছে।

জানা যায়, অভিযুক্ত গোবিন্দ চক্রবর্তী বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের প্যানেল নীল দল করেন। সামনে নীল দলের নির্বাচন। তাই বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে অনেকের অভিযোগ।

এ বিষয়ে নীল দলের পরিচালনা কমিটির সদস্য ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল জানান, এমন একটি ঘটনা শুনেছি। তবে যদি তারা এই কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকেন তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নিয়ে সুশাসন নিশ্চিত করা। অভিযুক্ত শিক্ষক অধ্যাপক গোবিন্দ চক্রবতী নীল দলের সমর্থক বলেও জানান তিনি।

নির্যাতনের বিষয়ে অভিয্ক্তু শিক্ষক দম্পতির কাছে জানতে চাইলে তারা অভিযোগ অস্বীকার করেন।  নির্যাতনের শিকার আনিতা এখন উদয়ন স্কুলের অধ্যক্ষ উম্মে সালেমা বেগমের বাসায় আছে বলে জানা গেছে। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে এ বিষয়ে উম্মে সালেমা ফোনে কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবহিত। ওই শিক্ষক কেন এ ধরনের কাজ করেছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কী ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না। পরে জানাবো।


আরো সংবাদ



premium cement