আড়াই ঘণ্টায় সমাপনী পরীক্ষা নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা
- মেহেদী হাসান
- ১০ নভেম্বর ২০১৮, ১৪:৩১, আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৮, ১৫:২৫
পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষার সময় আড়াই ঘণ্টা। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা। অনেকবার পরীক্ষার সময় বৃদ্ধির দাবি করা হয়েছে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে কিন্তু সময় বাড়ানো হয়নি। তারা বলেন, সময় বাড়ানো না হলে প্রশ্ন কমানো হোক। কিন্তু তাও করা হচ্ছে না। পরীক্ষায় যে পরিমাণ প্রশ্নের উত্তর লিখতে হয় তা কোনো অবস্থাতেই শিক্ষার্থীদের পক্ষে আড়াই ঘণ্টায় লিখে শেষ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। বিশেষ করে গণিতের প্রশ্ন নিয়ে তীব্র ক্ষোভ এবং হতাশা প্রকাশ করলেন অভিভাবকরা। পরীক্ষার সময় না বাড়িয়ে কেন শিশুদের এভাবে কষ্ট দেয়া হচ্ছে তা বুঝে উঠতে পারছেন না তারা।
শাহজাহানপুর রেল কলোনির অভিভাবক আবু জাফর বলেন, আমাদের সময় পরীক্ষায় যা লিখতে হতো তার থেকে দ্বিগুণ, তিনগুণ বেশি লিখতে হচ্ছে এখন পঞ্চম শ্রেণী ছাত্রদের। সে হিসেবে সময় বাড়ানোর কথা কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো সময় আরো কমানো হয়েছে। অষ্টম শ্রেণী থেকে সব পাবলিক পরীক্ষার সময় ৩ ঘণ্টা। কিন্তু পঞ্চম শ্রেণীতে সময় রাখা হয়েছে আড়াই ঘণ্টা।
তিনি বলেন, আমরা দশটি অঙ্ক করে ১০০ নম্বরের উত্তর করেছি। কিন্তু এখন সে তুলনায় চার থেকে পাঁচগুণ বেশি অঙ্ক করতে হয় শিশুদের। গণিত পরীক্ষার মান বণ্টন দেখিয়ে আবু জাফর বলেন, ২০ নম্বরের ২০টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন এবং জ্যামিতি ছাড়া আরো আটটি প্রশ্নের উত্তর করতে হয় গণিতে। এর মধ্যে রয়েছে সরল অঙ্ক, লসাগু, গসাগু, সাধারণ ভগ্নাংশ, দশমিক ভগ্নাংশ, শতকরা, পরিমাপ, উপাত্ত বিন্যস্তকরণ, সময় সম্পর্কিত সমস্যা।
এই আটটি অঙ্কের প্রশ্নে আসলে ২০ থেকে ২৫টি অঙ্কের সমাধান করতে হয়। একটি অঙ্কে তিন থেকে চার ধরনের নিয়ম অনুসরণ করে তিন থেকে চারটি প্রশ্নের সমাধান করতে হয়। অথচ নম্বর থাকে মাত্র আট। এটা কোন ধরনের নির্যাতন শিশুদের প্রতি তা বুঝতে পারি না।
তিনি বলেন, ২০টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন থাকে যার প্রতিটির মান মাত্র ১। অথচ ১ নম্বরের অনেক অঙ্ক করতে ৫ মিনিটেরও বেশি সময় লেগে যায়। এক নম্বরের একটি অঙ্কে দুই থেকে তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। তিন থেকে চার অঙ্কের গুণ ভাগ করে সমাধান বের করতে হয়। এভাবে ২০টি ১ নম্বরের অঙ্ক করতে এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায় অনেকের।
বাকি দেড় থেকে দুই ঘণ্টায় কোনো অবস্থাতেই অন্য প্রশ্নের সমাধান করতে পারে না তারা। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে তারা মনোযোগ দিতে পারে না। আর মনোযোগ দিতে না পারার কারণে অনেক সহজ অঙ্কও তারা ভুল করে আসে। তারপর রয়েছে সৃজনশীলের সমস্যা। বাসায় যে অঙ্ক তারা করে তা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আসে। ফলে প্রায় সব ছাত্রই স্কুলের গণিত পরীক্ষায় খারাপ ফল করে।
আবু জাফর বলেন, আমার মেয়ে স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় গণিত পরীক্ষা দিয়ে বলেছে খুব সহজ প্রশ্ন হয়েছে। খুব ভালো পরীক্ষাও দিয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার খাতায় নম্বর পেয়েছে মাত্র ৫৩। স্কুল থেকে খাতা দেয়ার পর দেখেছি অনেক সহজ অঙ্ক ভুল করেছে শুধু সময়ের অভাবে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে। যেসব অঙ্ক এসেছে তা সবই সে পারত যদি পর্যাপ্ত সময় পেত। তিনি বলেন, গণিতে ভালো করতে হলে সবচেয়ে বেশি দরকার মনোযোগ। কিন্তু এক দিকে শিশু তার ওপর সময় স্বল্পতা। সব মিলিয়ে বিরাট বোঝা চাপানো হয়েছে তাদের ওপর।
রাজধানীর সিপাহীবাগের বাসিন্দা সেলিম শরীফও গণিত বিষয়ে একই ধরনের সমস্যা তুলে ধরে বলেন, ইংরেজির অবস্থাও একই। যে প্রশ্ন আসে তা পড়তে আর বুঝতেই তো লেগে যায় আধা ঘণ্টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা। উত্তর লিখবে কখন। ইংরেজিতে দুটি টেক্সট দেয়া থাকে যা থেকে ৭৪ নম্বরের উত্তর লিখতে হয়। এর মধ্যে একটি আসে বই থেকে। আরেকটি আসে বইয়ের বাইরে থেকে। বইয়ের বাইরে থেকে আসা টেক্সট থেকে চিঠি পর্যন্ত লিখতে বলা হয়।
সেলিম বলেন, ইংরেজি যে প্রশ্ন তা ঠিক মতো বুঝে লিখতে তিন ঘণ্টায়ও কুলায় না। কিন্তু সময় দেয়া হয়েছে মাত্র আড়াই ঘণ্টা।
সেলিম বলেন, সমাজ এবং বিজ্ঞানেও একই অবস্থা। সব প্রশ্নের উত্তর যাতে ঠিক মতো করতে পারে সে জন্য আমার মেয়েকে দ্রুত হাতের লেখা প্র্যাকটিস করাতে হচ্ছে। তাকে পরীক্ষায় যে দ্রুত লিখতে হচ্ছে তা আমরা এসএসসিতেও লিখেছি কি না সন্দেহ। এটা ছোট ছাত্রদের ওপর নির্যাতনের শামিল।
জাকির নামে সিপাহীবাগের আরেক অভিভাবক বলেন, আমার মনে হয় সরকার শিশুদের লেখাপড়া করতে দিতে চায় না। তাদেরকে নিরুৎসাহিত করার জন্যই বই আর পরীক্ষা এত কঠিন করা হয়েছে। শিশুদের পরীক্ষার সময় তিন ঘণ্টা করলে তাতে কী ক্ষতি হতো আমরা বুঝতে পারছি না।
চলতি মাসের ১৮ তারিখ থেকে শুরু হবে পঞ্চম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষা। শিশুদের এ পরীক্ষা নিয়ে ভীষণ অস্থির সময় পার করছেন সারা দেশের লাখ লাখ অভিভাবক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা