১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাবিতে সিন্ডিকেট সভাকে ঘিরে আওয়ামীপন্থীদের তুলকালাম

-

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট সভাকে ঘিরে তুলকালাম ঘটেছে পুরাতন রেজিস্ট্রার ভবনে। সভায় প্রবেশ নিয়ে উপাচার্যপন্থী আওয়ামী শিক্ষক ও ভিসি বিরোধী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতি। সভাস্থলের আশেপাশে ছাত্রলীগের অবস্থা ও শোডাউন। বাম ছাত্রসংগঠনের বিভাগ উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবি এবং বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের আইআইটি বিভাগের নিয়োগ নিয়ে দাবি উত্থাপন করে। ফলে উত্তেজনাকরণ পরিস্থিতি বিরাজ করে সভাস্থলের আশেপাশে।

বুধবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে একবছর তিনমাস পরে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত এ সিন্ডিকেট সভা বসে। এসময় সিন্ডিকেট সদস্য ও বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি মোতাহার হোসেন মোল্যা সভাকক্ষে প্রবেশ করতে চাইলে ভিসি বিরোধী শিক্ষকরা পথরোধ করেন এবং সিন্ডিকেট সভায় অংশগ্রহণ না করার অনুরোধ করে। এ নিয়ে উপাচার্যপন্থী ও উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকরা হাতাহাতি ও ধস্তাধস্তিতে জড়িয়ে পড়েন। কয়েক মিনিট হৈ চৈ পরে মোতাহার মোল্যা বাধা উপেক্ষা করে ভিতরে ঢুকতে সক্ষম হয়। এরপর নির্ধারিত সময়ের আধাঘন্টা পর সিন্ডিকেট সভা শুরু হয় এবং উপাচার্যবিরোধী ৩ সিন্ডিকেট সদস্য ও প্রো-ভিসি অধ্যাপক আমির হোসেন সভা বর্জন করেন চলে আসেন।

হাতাহাতির ঘটনায় উপাচার্যবিরোধী ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’র সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, আমরা মোতাহার মোল্যার সাথে কথা বলতে চেয়েছি কিন্তু তিনি আমাদের মাড়িয়ে চলে গেছেন। প্রশাসন যেভাবে বিভিন্ন লোক এনে ভীতির পরিবেশ তৈরী করেছে সে সভায় আমরা থাকতে পারিনি তাই বর্জন করেছি।

এবিষয়ে ভিসিপন্থি অধ্যাপক এ এ মামুন বলেন,‘তারা একজন সিন্ডিকেট সদস্যকে ভিতরে ঢুকতে বাধা দেয়,লাঞ্ছিত করে।আমরা আগেই পূর্বাভাস পেয়েছি তারা এমন কাজ করতে পারে তাই আমরাও দীর্ঘ প্রতিক্ষিত সিন্ডিকেট সভায় যে ব্যাহত না হয় সেজন্য অবস্থান নিয়েছি।আর একজন দায়িত্বরত প্রো-ভিসি সভা বর্জন করে সপদে আসিন থাকার নৈতিক বৈধতা হারিয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

এদিয়ে আইআইটি বিভাগের পরিচালক নিয়োগ ও নতুন শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের দাবি ছিল, ‘নিয়মানুসারে অধ্যাপক ফজলুল করিম পাটওয়ারীকে পরিচালক করতে হবে এবং নতুন নিয়োগ স্থগিত রাখতে হবে। কেননা আইআইটিতে পরিচালন না থাকায় স্বয়ং ভিসি ওই পদে আসীন হয়েছে এবং ভিসির সাথে বিভাগের প্রতিশ্রুতি ছিল যতদিন পর্যন্ত না পরিচালন নিয়োগ হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত তিনি শুধু ‘দৈনন্দিন কাজ’ করবেন কিন্তু কোন বিভাগের প্রতিনিধি ছাড়াই ভিসি একাই দ্বৈত পদের ক্ষমতায় নতুন চার শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জাতয়িতাবাদী শিক্ষক ফোরাম বলেছে,‘ভিসি শিক্ষকদের সাথে প্রতিশ্রুত ভঙ্গ এবং অসৌজনমূলক আচরণ করেছে। তিনি গত চার তারিখ আমাদের সাথে আলোচনা করার কথা বলে নিজ অফিসে প্রবেশ করে এবং আমরা অপেক্ষা করতে থাকি কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই বলেন সাক্ষাত করতে পারবেনা।শিক্ষকদের করিডোরে অপেক্ষমাণ রেখেই তিনি নিয়োগ বোর্ডের সভা শুরু করে। যা অসৌজনমূলক ও নিন্দনীয়।শিক্ষক সমাজ এধরণের স্বেচ্ছাচারিতাকে আর প্রশয় দিবেনা। জাবির বিশেষত্ব ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষায় আমরা দূর্বার আন্দোলন করতেও দ্বিধা করব না।

তবে বৃহস্পতিবার বিকালে ভিসিপন্থি ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শের শিক্ষক পরিষদ’ নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে বলে,‘আইআইটিতে কোন অন্যায় করা হয়নি বরং ভিসি ফারজানা ইসলাম পরিচালক পদে সহযোগী অধ্যাপক মেসবাহ উদ্দিনকে দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে সমস্যার সমাধান করেছেন।’

এদিকে এ সিন্ডিকেট সভায় ১৮জন শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন,‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ। তারা বলছে,‘নিয়মানুসারে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির ছয়মাস অতিবাহিত হয়ে গেলে আবার নতুন বিজ্ঞপ্তি দিতে হয় কিন্তু এ আঠারো জনকে দেড়বছর আগের বিজ্ঞপ্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়ছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগের নতুন নিয়ম করেছে। সেই নিয়মও মানা হয়নি এ নিয়োগে। নতুন নিয়মে এ আঠারো জনের অনেকে আবেদন করারও যোগ্যতা নেই। আইআইতে ৪ শিক্ষক নিয়োগে কোন বিভাগীয় প্রতিনিধি রাখা হয়নাই। বাংলা বিভাগের নতুন ৪ জন শিক্ষক নিয়োগে নতুন আইনকে অমান্য করা হয়েছে। এর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কর্মবিরতিও পালন করেছে ভিসি বিরোধীরা।

তবে শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারী অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন,‘নিয়মের কোন ব্যতয় ঘটেনি। ছয় মাস পরে নিয়োগ দেয়া যাবেনা এমন আইন নেই বরং বলা আছে পুরাতন প্রার্থীদের নতুন আবেদন করা লাগবেনা তাদের পূর্বের আবেদনই কার্যকর হবে। তাই নতুন নিয়ম তাদের জন্য বাধা নয়।

এদিকে বিভাগ উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচ পালন করে বাম ছাত্রসংগঠনগুলো। কিন্তু এ বিষয়ের সুরাহা সিন্ডিকেটে নয় বিভাগের নিজস্ব বিষয় বলে দাবি করেন ভিসিপন্থিরা। কিন্তু বামসংগঠন বলছে প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে এর মিমাংসা করতে পারত।


আরো সংবাদ



premium cement