২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঢাবি সাদা দলের অবস্থান ধর্মঘট

‘সংলাপ নয়, ফয়সালা হবে রাজপথে’

ঢাবি সাদা দলের অবস্থান ধর্মঘট। - নয়া দিগন্ত।

সরকারের সাথে আর কোন সংলাপ নয়, এবার রাজপথেই ফায়সালা করতে হবে বলে মনে করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাদা দলের শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। শুধু অবস্থান ধর্মঘটেই থেমে থাকবেন না বরং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনে চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তারা।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক অবস্থান ধর্মঘট পরবর্তী বক্তব্যে সাদা দলের শিক্ষকেরা এ কথা বলেন। বেগম খালেদা জিয়ার সাজা বাতিল ও তার মুক্তির দাবিতে এ অবস্থান ধর্মঘটের আয়োজন করে সাদা দল। এক ঘণ্টার এ ধর্মঘটে অর্ধ্বশতাধিক শিক্ষক অংশ নেন।

আহ্বায়ক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমানের সঞ্চালনায় এ সময় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খান, অধ্যাপক মামুন আহম্মেদ, অধ্যাপক ড. মো. ছিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান, অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফছানী।

স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, গত এক যুগ ধরে জিয়াউর রহমানের পরিবারের প্রতি নির্যাতন চলছে। নয় মাস ধরে খালেদা জিয়া কারারুদ্ধ আছেন। তাকে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের অগ্রদূত খালেদা জিয়ার নামে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা করা হয়েছে। শেয়ার বাজার লুট, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সোনা চুরি, জনতা ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক ও ফার্মারস ব্যাংক থেকে চুরি হলেও রাষ্ট্রশক্তি তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি।

অধ্যাপক ড. মো. আখতার হোসেন খান বলেন, আমি ৬৯ দেখেছি, ৭০ দেখেছি, ৭১ দেখেছি। দেখেছি ৭ নভেম্বর। ৯০ এর আন্দোলনেও স্বৈরাচার ঠিকে থাকতে পারেনি। এবারও পারবেনা। তাই এই স্বৈরাচারের পতন নিশ্চিত। তিনি আরো বলেন, ২০১৩ সালের ৫ মের সেই হেফাজত কর্মীদের রক্তের দাগ এখনো এই সরকারের হাতে লেগে আছে। আজ সেই কর্মীদের লাশের উপড় দিয়ে হেঁটে একটা গোষ্ঠী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এসেছে প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধনা দিতে।

অধ্যাপক মামুন আহম্মেদ বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে নির্যাতন, নিপীড়ন করে তার রাজনৈতিক ও ব্যক্তিজীবনকে হুমকির সম্মুখে দাঁড় করানো হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নামে যেসব মামলা দেয়া হয়েছে সেসব উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমনকি বিচারালয় থেকে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে রাজনৈতিক দলের ব্যাপারেও। বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরাতে বিএনপির গঠনতন্ত্রের পরিবর্তনকে মেনে নিচ্ছেনা আদালত। নির্বাচন কমিশনের এসব আচরণ নজীরবিহিন। যেখানে স্পষ্টভাবে কোন মামলা প্রমাণিত হয়নি সেখানে বেগম জিয়া কেন দলের প্রধান থাকতে পারবেন না? তাই আমরা এসব দেখে চুপ থাকতে পারিনি। বিবেকের তাড়নায় আজ এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।

অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফছানী বলেন, বাকশাল থেকে গণতন্ত্র এসেছে শহীদ জিয়ার হাত ধরে। যতবার গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ হয়েছে, ততবারই জিয়া পরিবার এগিয়ে এসেছে। তাই সেই গণতন্ত্র রক্ষায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির কোন বিকল্প নেই। আসন্ন সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ তরুণ বিজ্ঞানী বলেন, যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের কথা বলা হয়, সে ফিল্ডে যদি রেফারি এক পক্ষ অবলম্বন করে তাহলে কি করে নিরপেক্ষ খেলা হবে? আমাদের নির্বাচন কমিশনের অবস্থা তো পক্ষপাতদুষ্ট রেফারির মত।

অধ্যাপক ড. মো. হাসানুজ্জামান বলেন, স্বাধীনতার পরও এই জাতির যেকোন ক্রান্তিলগ্নে এগিয়ে এসেছে জিয়া পরিবার। আজ সেই জিয়া পরিবারকে বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে ধব্বংসের পায়তাঁরা চলছে। দেশে কুখ্যাত খুনী, ফাঁসির আসামীরা রাষ্ট্রিয় সহায়তায় ছাড়া পেয়ে প্রকাশ্য ঘোরাফেরা করছে, অন্যদিকে বিনা দোষে কারাভোগ করছেন সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী।

সভাপতির বক্তব্যে সাদা দলের আহব্বায়ক অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম বলেন, দেশে এখন চলছে দমন-পীড়ন, গুম খুনের রাজনীতি। ভয়াবহ দু:শাসনে গণতন্ত্র আজ ধব্বংস। দুর্নীতি গ্রাস করেছে সর্বত্র। বাক স্বাধীনতা বলে কিছু নেই এই দেশে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ ও সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৮ নামে দুটি দমন আইন পাশ করা হয়েছে যাতে দেশের মানুষ কথা বলতে না পারে। ক্ষমতার দম্ভে সরকার আজ দিশেহারা।

এ দেশে জিয়া পরিবারকে রেখে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারেনা মন্তব্য করে ঢাবির এ অধ্যাপক বলেন, শেখ হাসিনার অধীনে আমরা ৫ জানুয়ারি সহ আরো অনেক নির্বাচন দেখেছি। পত্রিকার রিপোর্ট অনুযায়ী, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ২৫৭ জন নিহত হয়েছেন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের চিত্র তো সবার জানা। সংবিধান আর আদালতের দোহাই দিয়ে নিজের দোষ আড়ালের চেষ্টা করছে সরকার এমন মন্তব্য করে তিন বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফার এক দফাও মানবেন না এমন বক্তব্য দিয়ে এর দুইদিন পরে তাদের মন চাইলো সংলাপ করবেন। এরপর সংলাপের নামে আরেকবার প্রতারণা করলেন জাতির সাথে। তাদের ইচ্ছাটা হলো আসেন সংলাপ করি, তবে তালগাছটা আমাদের।

তিনি বলেন, সরকারে মনোভাব হচ্ছে- ইচ্ছা হলো বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে সাজা দিয়েছি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেযারম্যান তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছি, নির্বাচন কমিশনকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়েছি, পুতুল বানিয়েছি। ইভিএম ব্যবহার নিশ্চিত করেছি, আমার ভোট আমি দেবো, পরের ভোটও আমি দেবো, দিনের ভোট রাতে দেবো। সময় থাকতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেবার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, এসব প্রহসন বাদ দিয়ে এখনো সময় আছে জনগনের দাবি মেনে নিন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৭ দফা মেনে নিন। আর তা না হলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে দিয়ে এ দেশে অচিরেই গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে, এ দেশের মানুষ মুক্তির স্বাদ পাবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন সম্ভব না।

এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক ড. আব্দুর রশীদ, অধ্যাপক ড. সুকোমল বড়ুয়া, অধ্যাপক শহীদুল ইসলাম, অধ্যাপক আবুল কালাম সরকার, অধ্যাপক মাহফুজুল হক, অধ্যাপক ড. মো ইউসুফ, ড. মো. মহিউদ্দিন, মোহাম্মদ দাউদ খাঁন, ইস্রাফিল প্রামাণিক রতন, নুরুল আমিন শিশির প্রমুখ।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল