১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিক্ষক, ক্লাসরুম ও অবকাঠামো সংকটে সরকারী কবি নজরুল কলেজ

সরকারী কবি নজরুল কলেজ। - সংগৃহীত

বাংলাদেশের প্রাচীনতম শীর্ষস্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারী কবি নজরুল কলেজ। এটি ছিল পূর্ববাংলার মুসলমানদের জন্য প্রথম সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৮৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত শিক্ষার আলো ছড়িয়ে বাংলাদেশের মানুষকে শিক্ষিত করে তোলা ও শিক্ষার হার বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রাচীনতম এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি ১৯৯২ সাল থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। বর্তমানে কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রয়েছে। ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়।

ইংরেজ শাসনামল থেকে শিক্ষার আলো ছড়ানো প্রাচীনতম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে অনার্স, মাস্টার্স ও এইচএসসিসহ প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। শিক্ষার্থী অনুযায়ি প্রতিষ্ঠানটিতে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক ও ক্লাসরুম। সিডিউলের ক্লাসের জন্য বাহিরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। বঞ্চিত হচ্ছে আবাসন ব্যবস্থা ও যানবাহন ব্যবস্থা থেকে এই প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া ১৬ হাজার শিক্ষার্থী। শহীদ শামসুল আলম হল নামে মাত্র একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। যা বসবাসের জন্য উপযুক্ত নয়। লাইব্রেরী থাকলেও সেখানে নেই পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় বইপুস্তক। লাইব্রেরী সকাল সাড়ে আটটা থেকে বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত খোলা থাকে, যা শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় সময় মিটাতে সঙ্গম নয়।

শিক্ষার্থীদের দাবি রাত আটটা পর্যন্ত লাইব্রেরী খোলা থাকলে শিক্ষার্থীরা পড়শুনা করতে আরো আগ্রহী হবে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো ক্যান্টিনের ব্যবস্থা। ফুটপাতের অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খেয়েই দিন কাটছে ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর।

প্রাচীনতম এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠার পটভূমি:
১৮৭৪ সালে ঢাকায় কলকাতা মাদ্রাসার আদলে মোহসীনিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরে এটি ঢাকা মাদ্রাসা নামে প্রসিদ্ধ হয়। মাদ্রাসাটি হাজী মুহম্মদ মোহসীন ফান্ডের আর্থিক সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ১৯১৫ সাল পর্যন্ত এই মাদ্রাসার ব্যয় নির্বাহ করা হয় উক্ত ফান্ড থেকেই। এটি ছিল পূর্ব বাংলার মুসলমানদের জন্য প্রথম সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯১৫ সালেই উক্ত প্রতিষ্ঠানটি উচ্চ মাদ্রাসায় রুপান্তরিত হয়। ১৯১৬ সালে মাদ্রাসার অ্যাংলো-পার্সিয়ান বিভাগটি পৃথক হয়ে ঢাকা গভর্নমেন্ট মুসলিম হাই স্কুল নাম ধারণ করে। ১৯২৩ সালে মাদ্রাসা ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজে রাপান্তরিত হয় এবং ১৯৬৮ সালে কলেজের নামকরণ হয় সরকারী ইসলামিয়া কলেজ। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুর ইসলামের নামে কলেজটির নতুন নামকরণ হয় কবি নজরুল সরকারি কলেজ। ১৯৭২ সালেই কলেজটি ডিগ্রি কলেজে উন্নীত হয়। ১৯৭৮ সালে কলেজটিতে সহশিক্ষার প্রচলন হয়।

কলেজের কৃতি শিক্ষার্থী:
প্রফেসর মুহাম্মদ আবদুল হাই, ড. কাজী দীন মুহম্মদ, সাবেক উপরাষ্ট্রপতি ও বিচারপতি নুরুল ইসলাম, কবি ও সাহিত্যিক কায়কোবাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, সৈয়দ সাজ্জাদ হোসাইন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আবুল ফজল ও ইতিহাসবিদ সৈয়দ মোহাম্মদ তাইফুর।

কলেজটির বর্তমান অবস্থা:
বর্তমানে কলেজটিতে ইন্টারমিডিয়েট ও ১৭টি বিষয়ে অনার্স এবং মাস্টার্স করা যায়। ইন্টারমিডিয়েটের শিক্ষার্থীসহ কলেজটিতে প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এই ১৬ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১০৭ জন শিক্ষক, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। শিক্ষার্থীদের জ্ঞানার্জনের চাহিদা মিটাতে কলেজ কর্তৃপক্ষ ১০ জন গেস্ট শিক্ষকের ব্যবস্থা করেছে। কলেজটির তিনটি ভবন ও একটি কম্পিউটার ল্যাব রয়েছে। কলেজটিতে ৩৯টি সিসি ক্যামেরা দ্বারা এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। ফেইস আইডি দ্বারা শিক্ষার্থীদের হাজিরা নেয়ার ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ক্লাস টেস্টের মার্ক অনলাইনে দেখা যায় এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অনলাইনের মাধ্যমে পরীক্ষার নাম্বার জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার জন্য একটি লাইব্রেরী রয়েছে। শহীদ শামসুল আলম হল নামে একটি আবাসিক ছাত্রাবাস রয়েছে।

নানা সমস্যায় জর্জরিত পূর্ব বাংলার মুসলমানদের জন্য প্রথম সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারী কবি নজরুল কলেজের বর্তমান উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. খালেদা নাসরিন বলেন, ব্রিটিশ আমল থেকেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি বাংলার মানুষের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। বর্তমানে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আধুনিকতার ছোয়ায় উন্নত হয়েছে। তাদের শিক্ষার মানও বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সংকট রয়েছে। প্রায় প্রতিটি বিভাগেই ক্লাসরুমের সংকট রয়েছে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোর সংকট দেখা দিয়েছে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সমস্যার কথা অবহিত করেছি।


আরো সংবাদ



premium cement