২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে নিয়ে যা বললেন রাষ্ট্রপতি

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। - ছবি: বাসস

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের রসিক মানুষ হিসেবে বেশ খ্যাতি আছে। সংসদের স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার থাকাকালীন সংসদ সদস্যসহ দেশবাসী সেটা দেখেছেন। তবে রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তার রসিকতা যেন সব কিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। গত ৬ অক্টোবর (শনিবার) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫১তম সমাবর্তনে যোগ দিয়ে ভারতীয় নায়িকা ও বিশ্বসুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে নিয়ে রসিকতা করলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ।

আচার্য হিসেবে সমাবর্তনে বক্তব্য দিতে গিয়ে রসিকতা করবেন না- এমনটি যেন মানায় না রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে। কিছুদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনে ‘হেলিকপ্টার’ ও ‘হাতের ব্যায়াম’ নিয়ে তার বক্তব্যে মজেন গ্র্যাজুয়েটরা। এরও আগে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি মজা করে বলেন, ‘বুড়া বাতিল না হলে পথ পরিষ্কার হচ্ছে না’।

সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বঙ্গভবনে এসে আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার স্ত্রী (রাষ্ট্রপতির স্ত্রী) নাকি ফোন দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন, ‘প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বঙ্গভবনে আসার কী দরকার!’

সাবেক বিশ্বসুন্দরী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া।

 

‘এই ধরনের একটা সুযোগ নষ্ট, এটা সে ঠিক করেনি। আসার পর যদি ঘটনা ঘটতো অন্তত এই উপ-মহাদেশের একটা মেয়েকে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে সুদর আমেরিকা যেতে নাও তো হতে পারত। সবই কপাল-ভাগ্য, কিছু করার নেই’- বলেন রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির এই হাস্যরসের বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। লিখিত বক্তব্যের বাইরে স্বভাব-সুলভ মজার কথাবার্তায় সমাবর্তন প্রাঙ্গণ মাতিয়ে রাখেন রাষ্ট্রপতি।

স্মৃতিচারণ করে আবদুল হামিদ বলেন, ‘কবে আমি বিয়া করছি...আজকে হিসাব অন্যভাবে বলবো- ১৭০ কোটি ২ লাখ ৯২ হাজার ৪০০ সেকেন্ড হয়ে গেছে। হঠাৎ বলতে পারবেন না সময় কতদিন হয়েছে। আসলে হয়েছে ৫৪ বছর দু’দিন। এটা হওয়ার কারণ হলো কী- এ বাচুপানকে মোহাব্বতের মতো কম বয়সে বিয়া কইরা ফালাইছিলাম।’

কিশোরগঞ্জের আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, ‘৫৪ বছরে একটা মহিলা তো মোটামুটি আমার সবকিছুই বুইঝা ফেলছে। ভালো-খারাপ, কী করতে পারি না পারি। এটা কিন্তু তার কন্ট্রোলের ভেতরে। আমি যখন ৭/৮ বছর আগে স্পিকার ছিলাম, যখন আমি নারী নির্যাতন বিল পাস করি তখন আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলাম, আপনি নারী নির্যাতন বিল পাস করছেন, ভালো কথা; কোন অসুবিধা নেই। পুরুষ নির্যাতন বিল পাস করাও তো প্রয়োজন।’

‘তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেন, এটা এই মুহূর্তে প্রয়োজন নেই। পরে দেখা যাবে, যদি হয়; তবে করা হবে। ছয় বছর চলে গেছে এখনও কিন্তু করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী খবর-টবর রাখেন না, আসলে খালি আমার ঘরেই নয়, সারা বাংলাদেশেই পুরুষ নির্যাতন যে কিছু হচ্ছে না, এই কথাটা ঠিক নয়। এটা কিন্তু মারাত্মকভাবে হচ্ছে। ভুক্তভোগীরাই এটা টের পাচ্ছে।’ তার এই কথায় সমাবর্তনে উপস্থিত সবাই হেসে উঠেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘কয়েক মাস আগে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া...প্রিয়াঙ্কা চোপড়াকে তো সবাই চেনেন। আমি যদিও বুড়া বয়সে চিনি, এই ছেলেদের তো না চেনার কোনো কারণ নেই। এই প্রিয়াঙ্কা চোপড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে ঢাকা আসছিলেন। বাংলাদেশে অন্য দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী আসলে তারা বিভিন্ন পর্যায়ে দেখা করে সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির কাছে বঙ্গভবনে আসেন। সবাই আসেন।’

তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রীকে বললাম এবার তো প্রিয়াঙ্কা চোপড়া আসবে। আসার একদিন আগে এই কথা বললাম- পরে শুনেছি সে (রাষ্ট্রপতির স্ত্রী) নাকি টেলিফোন করে প্রধানমন্ত্রীকে বলেছেন, প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বঙ্গভবনে আসার কী দরকার!’

হর্ষধ্বনি উঠতে থাকে সমাবর্তন মাঠে। এর মধ্যেই রাষ্ট্রপতি বলে চলেন, ‘ইট ওয়াজ জাস্ট কন্সপাইরেসি, ষড়যন্ত্র। শেষ পর্যন্ত প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বঙ্গভবনে আসা ক্যানসেল, তিনি আসেননি।’

‘প্রিয়াঙ্কা চোপড়া যাওয়ার কয়েক মাস পরে শুনলাম সে আমেরিকা গেছে, তার চেয়ে ১০ বছরের, ১০ বছরের না আরও বেশি ১২/১৪ বছরের নিক নামের ছেলেরে বিয়া করছে, আমেরিকা গিয়ে। আমি তো তার চেয়ে ৩০/৩৫ বছরের বড়। সে যদি ১২/১৩ বছর নিচে নামতে পারে তাহলে সে ৩০/৩৫ বছর উপরেও তো উঠতে পারত’ বলেই রাষ্ট্রপতিও হাসতে থাকেন। আর হাসির রোল পড়ে যায় উপস্থিত গ্র্যাজুয়েটদের মধ্যে।

এরপর তিনি বলেন, ‘এই ধরনের একটি সুযোগ নষ্ট, এটা সে ঠিক করেনি। আসার পর যদি ঘটনা ঘটত অন্তত এই উপ-মহাদেশের একটা মেয়েকে সাত সমুদ্র তের নদী পার হয়ে সুদূর আমেরিকা যেতে নাও তো হতে পারত। সবই কপাল-ভাগ্য, কিছু করার নেই।’

আবদুল হামিদ বলেন, ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে আসলে সাময়িক সময়ের জন্য হলেও মনটা চাঙ্গা হয়ে যায়।’

এর আগে ২০১৪ সালের ৭ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮তম সমাবর্তনে বক্তব্য দিতে গিয়ে রসিকতা করে রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ বলেন, ‘আপনারা জানেন যে আচার্য হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সমাবর্তন অনুষ্ঠানে এটিই আমার প্রথম যোগদান। আরেফিন সিদ্দিক যেভাবে বললেন, জিল্লুর রহমান সমাবর্তনে যোগ দেওয়ার কয়েক দিন পরই ইন্তেকাল করেছেন। এরপর থেকে আমার মনের অবস্থা যে কী, সেটা আপনারা ভালোই বুঝতে পারছেন।’

রাষ্ট্রপতির এ কথা শুনে সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে।

 

আরো পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তনগঠনমূলক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিতে গ্রাজুয়েটদের প্রতি রাষ্ট্রপতির আহবান

বাসস, ০৬ অক্টোবর ২০১৮


জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়তে জাতি গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দিতে তরুণদের, বিশেষ করে সদ্য গ্রাজুয়েটদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি বলেন, আমরা শুধুমাত্র আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। স্বাধীনতার সংগ্রাম শেষ হয়েছে, কিন্তু দেশ গড়ার সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। ক্ষুধা ও নিরক্ষরমুক্ত দেশ গঠন না হওয়া পর্যন্ত এই সংগ্রাম অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি শনিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আয়োজিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

রাষ্ট্রপতি গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশে বলেন, তোমরাই জাতির ভবিষ্যৎ। আগামীতে তোমরাই দেশ পরিচালনা করবে। তোমাদের সঠিক নেতৃত্বে দেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ। জীবনে চলার পথে তোমাদের আদর্শ থাকতে হবে। সে আদর্শ হবে ন্যায় ও সত্যের পক্ষে। তোমরা কখনো সত্যের সাথে মিথ্যার, ন্যায়ের সাথে অন্যায়ের আপোষ করবে না।

রাষ্ট্রপতি ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতির সাথে বর্তমান ছাত্র রাজনীতির তুলনা করে বলেন, ষাটের দশকের ছাত্র রাজনীতি ছিল সম্পূর্ণ আর্দশভিত্তিক। সেখানে ব্যক্তি বা গোষ্ঠির স্বার্থ মূখ্য ছিল না।

রাষ্ট্রপতি ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ভূয়সী প্রশংসা করে এই নির্বাচন কেউ যাতে ভণ্ডুল করতে না পারে, এ লক্ষ্যে সতর্ক থাকতে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, ডাকসু নির্বাচন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়ক হবে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করে দেশের রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনতে রাজনীতিতে সবোর্চ্চ পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহবান জানান। বিশিষ্ট এই রাজনীতিবিদ বলেন, কেবলমাত্র বাল্যকালের পর থেকে যারা রাজনীতি করে আসছে, তারাই কেবল এই রাজনীতি করতে পারে।

রাষ্ট্রপতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ডিপ্লোমা ও সান্ধ্যকালীন কোর্সের উল্লেখ করে ডিপ্লোমার নামে ডিক্রি দেয়া যায় কিনা এবং সান্ধ্যকালীন কোর্সে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম ও ঐতিহ্য ব্যাহত হয় কিনা, সে বিষয়টি ভেবে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই ছাত্রদের বৃহত্তর স্বার্থের কথা বিবেচনা করতে হবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিষয়কে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।

রাষ্ট্রপতি বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবির্ক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান। তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে জাতির প্রত্যাশা পূরণে সর্বদাই একজন চালকের ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি সময়ের চাহিদা এবং বৈশ্বিক জনশক্তির বাজারের কথা বিবেচনা করে বিভিন্ন বিভাগ সম্প্রসারণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহবান জানান।

অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান সমাবর্তন বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন। সমাবর্তনে মোট ২১ হাজার ১১১ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন এবং এদের মধ্যে ৭২ জন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে স্বর্ণপদক গ্রহন করেন।

অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, মন্ত্রিসভার সদস্যবর্গ, উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবর্গ, কূটনৈতিক মিশনের প্রধানগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান উপাচার্যগণ জাতীয় অধ্যাপকগণ, ঢাবি সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্যগণ অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।

ঢাবি সমাবর্তন অনুষ্ঠানটি ডিজিটাল মিডিয়ার মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ক্যাম্পাসে প্রজেক্টরের মাধ্যমে দেখানো হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরে নিহতদের বাড়ি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী টিকটকে ভিডিও দেখে পুরস্কার, প্রভাব ফেলছে মানসিক স্বাস্থ্যে পাট শিল্পের উন্নয়নে জুট কাউন্সিল গঠন করা হবে: পাটমন্ত্রী মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরেও নেতাকর্মীরা আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে : সালাম নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৪০ শতাংশে উন্নীত করতে কাজ করছে সরকার : পরিবেশ সচিব সৌরশক্তি খাতে আবার মাথা তুলে দাঁড়াতে চায় জার্মানি ‘সরকারের সদিচ্ছার অভাবেই বিচার প্রক্রিয়ার ধীর গতি’ মোদি কি হিন্দু-মুসলমান মেরুকরণের চেনা রাজনীতিতে ফিরছেন? টাঙ্গাইলে বৃষ্টির জন্য ইসতেসকার নামাজ ফুলগাজীতে ছাদ থেকে পড়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু দোয়ারাবাজারে শিশু হত্যা মামলার আসামিসহ গ্রেফতার ২

সকল