১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম সমাবর্তন আজ

নবীন গ্রাজুয়টদের বাঁধভাঙ্গা আনন্দ। - ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ৫১তম সমাবর্তন আজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠসহ মোট তিনটি ভেনুতে অনুষ্ঠিত হবে এই সমাবর্তন। আলাদা ভেনুতে হবে সাত কলেজের সমাবর্তন। সমাবর্তনে অংশ নিতে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সর্বাধিক সংখ্যক গ্র্যাজুয়েট রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন। বিগত বছরগুলোর তুলনায় বেড়েছে পদক ও ডিগ্রি। সে হিসাবে এ বছর পদক ও ডিগ্রি গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছেন রেকর্ডসংখ্যক গ্র্যাজুয়েট। সমাবর্তনের পূর্বপ্রস্তুতিমূলক মহড়াও শেষ হয়েছে।।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আব্দুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল শ্রেণিকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় উঠে আসে। সংবাদ সম্মেলনে এবারের সমাবর্তনের প্রস্তুতি, নিরাপত্তাসহ অন্যান্য দিক তুলে ধরেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামান। এ সময় প্রোভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, কোষাধ্য অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দিন, শিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রক্টর ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

ঢাবি ভিসি আখতারুজ্জামান বলেন, ৫১তম সমাবর্তনে বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করবেন ঢাবির সাবেক অধ্যাপক জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। এতে সভাপতিত্ব করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ। ভিসি বলেন, সমাবর্তনে অংশ নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ ও ইনস্টিটিউটের ২১ হাজার ১১১ জন গ্র্যাজুয়েট রেজিস্ট্রেশন করেছেন। কৃতী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৬টি স্বর্ণপদক, ৮১ জনকে পিএইচডি ও ২৭ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত তথ্য মতে, বিগত যেকোনো সমাবর্তনের তুলনায় এ বছর রেকর্ডসংখ্যক গ্র্যাজুয়েট অংশ নিচ্ছেন। পাশাপাশি সর্বাধিক সংখ্যক পদক ও ডিগ্রি গ্রহণের অপেক্ষায় রয়েছেন গ্র্যাজুয়েটরা। সর্বশেষ ৫০তম সমাবর্তনে ১৭ হাজার ৮৭৫ জন গ্র্যাজুয়েটকে ডিগ্রি প্রদান করা করা হয়। সে তুলনায় এ বছর গ্র্যাজুয়েট বেড়েছে ৩ হাজার ২৩৬ জন। ৫০তম সমাবর্তনের তুলনায় এ বছর বেড়েছে পদকপ্রাপ্ত শিক্ষক-শিার্থীর সংখ্যা। গত সমাবর্তনে ৯৪টি স্বর্ণপদক প্রদান করা হলেও এবার স্বর্ণপদক পাচ্ছেন ৯৬ শিক্ষার্থী। বেড়েছে পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রিও। গত সমাবর্তনে ৬১ জনকে পিএইচডি এবং ৪৩টি এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হলেও এবার ৮১ জনকে পিএইচডি ও ২৭ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হবে। এর আগে ৪৯তম সমাবর্তনে ছয় হাজার ১০৪ জনকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়। ২৯ স্বর্ণপদক, ২০ জনকে এমফিল ও ৪২ জনকে পিএইচডি প্রদান করা হয়।

এ বছর মোট তিনটি ভেনুতে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হবে। এগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ (মূল ভেনু), ইডেন মহিলা কলেজ এবং ঢাকা কলেজ। আগের কাঠামোর মতোই বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে অন্য ১০৪টি (রাজধানীর সাত কলেজ বাদে) অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেবে। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের ভেনুতে থাকবেন।

এ ছাড়া অধিভুক্ত সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা পৃথক দুটি ভেনু থেকে ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সমাবর্তনে শামিল হবেন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের ছাত্রীরা ইডেন কলেজ ভেনুতে থাকবেন। বাকি পাঁচটি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজ ভেনু থেকে এতে অংশ নেবেন। এই দুই ভেনুতে দুই হাজার করে মোট চার হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেবেন। এবার প্রথমবারের মতো ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে পৃথক দু’টি ভেনু থেকে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেবেন। এটি একটি অসাধারণ উদ্যোগ হবে।

সার্বিক বিষয়ে ঢাবি ভিসি বলেন, সমাবর্তনকে ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। কারণ সমাবর্তন দিবস শিার্থীদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দিবসটির জন্য শিার্থীরা অধীর আগ্রহে অপো করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের সংস্কৃতি চালু রয়েছে। ভবিষ্যতে এই সংস্কৃতি অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যেই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানের সার্বিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত করা হয়েছে। এ সময় তিনি গ্র্যাজুয়েটরা যাতে নির্বিঘ্নে চলাফেরা করতে পারে সে জন্য সমাবর্তন প্রাঙ্গণের রাস্তা ব্যবহারকারী জনসাধারণকে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করতে অনুরোধ করেন।

এ দিকে সমাবর্তন উপলে উৎসবমুখর পরিস্থিতি বিরাজ করছে পুরো ক্যাম্পাসে। গাউন পরে, মাথায় হ্যাট লাগিয়ে সমাবর্তনের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন গ্র্যাজুয়েটরা। একে অপরের সাথে ছবি তুলছেন, কেউ আবার গাউন পরে কার্জন হল, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলের পুকুরপাড়, টিএসসি, রাজু ভাস্কর্য, বটতলা, অপরাজেয় বাংলা, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের ‘নূর চত্বর’, মধুর ক্যান্টিন, সিনেট ভবন, স্মৃতি চিরন্তন প্রভৃতি স্থান ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এক কথায় সমাবর্তনপ্রত্যাশী গ্র্যাজুয়েটদের পদচারণায় গোটা ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। জানতে চাইলে নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করে দর্শন বিভাগ (শিক্ষাবর্ষ ২০১২-১৩) থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করা খাইরুল ইসলাম বলেন, প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছে সমাবর্তনের দিনটি খুবই মূল্যবান। একই সাথে আবেগ, ভালোবাসা এবং সম্মানের। এ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতেই বন্ধুবান্ধব-শিক্ষকদের সাথে প্রিয় কিছু মুহূর্তকে ফ্রেমে বন্দী করে রাখছি।

সমাবর্তন উপলক্ষে ‘পরিচ্ছন্ন বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের প্রত্যয়’ প্রতিপাদ্যে ক্যাম্পাস পরিচ্ছন্ন কর্মসূচি পালন করেছে ট্যুরিজম অ্যান্ড হস্পিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগ। ভিসি অধ্যাপক ড. মো: আখতারুজ্জামানের উদ্বোধনের পর বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়াসহ বিভাগের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী দুই ঘণ্টাব্যাপী কার্জন হল, দোয়েল চত্বর এলাকা পরিচ্ছন্ন করেন।


আরো সংবাদ



premium cement