২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

‘ফাইল চালাচালি না করে প্রজ্ঞাপন দিন’

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংবাদ সম্মেলন
কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংবাদ সম্মেলন - ছবি : নয়া দিগন্ত

‘জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর অনেক নাটকীয়তার মধ্যে দিয়ে কোটা বাতিল প্রজ্ঞাপনের জন্য অনেক ফাইল চালাচালি হয়েছে। হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্ট পর্যন্ত এই ফাইল চালাচালি হয়েছে; কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এজন্য কোন সুপারিশ বা ফাইল চালাচালির উপর ছাত্রসমাজের কোন আস্থা নেই। ফাইল চালাচালি না করে তিন দফা দাবির আলোকে প্রজ্ঞাপন দিন।’ সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের নূর চত্ত্বরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতারা। এসময় পরিষদের আহবায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম-আহবায়ক ফারুক হাসান, বিন ইয়ামিন মোল্লা, আতাউল্লাহ, রাতুল সরকার প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় হাসান আল মামুন বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব মহোদয় যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন সেটাকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। পাশাপাশি আমাদের দাবি ছিল সকল চাকরির ক্ষেত্রে যে কোটা পদ্ধতি রয়েছে তার একটি যৌক্তিক সংস্কার। নবম গ্রেড থেকে তেরতম গ্রেড পর্যন্ত বাতিলের যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেটিকেও আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। পাশাপাশি আমরা দাবি জানাচ্ছি অন্যান্য যে গ্রেড রয়েছে সেখানে একটা যৌক্তিকভাবে কোটার সহনীয় সংস্কার করা হোক। কোটা সংস্কারের ঘোষণা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলমান থাকবে বলে ঘোষণা দেন তিনি।

আন্দোলনকারীদের যুগ্ম-আহবায়ক ফারুক হাসান বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছি, যেদিন আমাদের তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন হবে সেদিনই আমরা আন্দোলন থেকে সরে যাব। এসময় তিনি তিন দফা দাবি তুলে ধরেন। সেগুলো হলো- ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও হয়রানিমূলক সব মামলা প্রত্যাহার করা, হামলাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা এবং পাঁচ দফার আলোকে কোটা পদ্ধতির যৌক্তিক সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন দেয়া। এসময় তিনি প্রজ্ঞাপনের দাবিতে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দেন।

উল্লেখ্য, সোমবার মন্ত্রী পরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে কমিটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা না রাখার সুপারিশ করে। দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ সম্মেলন কক্ষে কমিটির আহ্বায়ক সচিব শফিউল আলম বলেন, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে প্রবেশে কোনো কোটা পদ্ধতি না রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।

সরকারি চাকরির ক্রমতালিকার নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটা পদ্ধতি থাকছে না। মুক্তিযোদ্ধা কোটাও না রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশ তৈরি করার আগে আমরা সংশ্লিষ্ট আইন বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়েছি। আইন বিশেষজ্ঞদের অভিমত হচ্ছে, কোটা রাখা বা না রাখা এটা সরকারের পলিসির ব্যাপার। মুক্তিযোদ্ধা কোটা না রাখলে এ-সংক্রান্ত উচ্চ আদালতে যে রায় হয়েছে, তা লঙ্ঘন হবে না। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদনের পর সেটি মন্ত্রিসভায় উত্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভা অনুমোদন করলে এটি কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।

পূর্বেকার খবর:  সরকারি চাকরিতে কোটা না রাখার সুপারিশ
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে চাকরির ক্ষেত্রে) সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা না রাখার সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত কমিটি। এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন আজ সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমাও দিয়েছে কমিটি।

কোটা সংস্কার, বাতিল ও পর্যালোচনার জন্য গঠিত কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের এই কথা জানিয়েছেন। তিনি আজ সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে আদালতের যে রায় আছে, তা কোটা সংস্কার বা বাতিলে কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে আইন কর্মকর্তারা মত দিয়েছেন।


চলতি বছরে ফেব্রুয়ারিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে জোরালো আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়লে গত ১১ এপ্রিল সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কমিটি সুপারিশ করলেও চাকরিতে কোটা রাখা–না রাখার সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। সরকার সিদ্ধান্ত জানালেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তা প্রজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করবে।


আরো সংবাদ



premium cement