২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘরেও জায়গা হলো না সত্তর বছরের বৃদ্ধা মায়ের

বারান্দায়ই রাত কাটিয়েছেন সত্তর বছরের বৃদ্ধা মা। - ছবি: আনন্দবাজার পত্রিকা

বারান্দায় বসে সন্ধ্যা থেকে এক নাগাড়ে কেঁদে চলেছিলেন বছর সত্তরের এক বৃদ্ধা। রাত বাড়লেও কান্না থামেনি তার। অবশেষে কান্না শুনে শুক্রবার রাতে ব্যারাকপুর কালিয়ানিবাসের ওই বৃদ্ধার পাশে এগিয়ে আসেন প্রতিবেশীরা। জানা যায়, বৃদ্ধার ছেলে-বৌমা তাদের মেয়েকে নিয়ে গুয়াহাটি বেড়াতে গিয়েছেন।

অভিযোগ, সব ঘর তালাবন্ধ করে বেড়াতে যাওয়ার আগে বৃদ্ধা মায়ের খাওয়ার ব্যবস্থাটুকুও করে যাননি তার ছেলে-বৌমা। ওই বৃদ্ধা জানান, গত বৃহস্পতিবার তার ছেলে-বৌমা ঘুরতে যান। যাওয়ার আগে দু’টি ঘর এবং রান্না ঘরে তালা দিয়ে যান। বৃদ্ধার ঠাঁই হয়েছিল বারান্দায়। সেই বারান্দা এতই অপরিসর যে, সেখানে কোনও মতে বসা যায়, শোওয়া যায় না। মায়ের খাওয়ার জন্য ছেলে বরাদ্দ করেছিলেন আধ প্যাকেট মুড়ি ও একটি ব্যাগে কয়েকটি কাপড়।

বৃহস্পতিবার সেই মুড়ি খেয়েই কাটান বৃদ্ধা মা রায়মণি ভট্টাচার্য। শুক্রবার সারা দিন কোনও মতে কাটিয়ে সন্ধ্যায় খিদে-তেষ্টায় কাঁদতে শুরু করেন তিনি। বৃদ্ধা জানিয়েছেন, তার ছেলে রতন ভট্টাচার্য এবং বৌমা স্বাতী ভট্টাচার্য দু’জনেই শিক্ষক। স্থানীয় ক্লাবের সদস্যদের সাহায্যে রায়মণিদেবী স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে ব্যারাকপুরের পুর প্রধানের কাছে বিষয়টি জানিয়েছেন। পুর প্রধান উত্তম দাস বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। বৃদ্ধার ছেলে ফিরলে কথা বলা হবে।’

প্রতিবেশীরা জানান, বৃদ্ধার ছেলে ও বৌমা দু’জনেই স্থানীয় একটি বেসরকারি স্কুলে পড়ান। তাদের বছর দশেকের একটি মেয়ে রয়েছে। স্বামী-স্ত্রী যে স্কুলে পড়ান, তার প্রিন্সিপাল কুণাল ঘটক। রতনবাবুর সহকর্মীদের মাধ্যমে খবর পান তিনি। কুণালবাবু বলেন, ‘‘খবর পেয়েই আমি রতনের বাড়ি যাই। আমাদের স্কুলে থাকার ঘর রয়েছে। সেখানে ওকে রাখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি রাজি হননি। আপাতত আমিই ওঁর জন্য দু’বেলা খাবার পাঠাচ্ছি।’’

এখন এক প্রতিবেশীর বাড়িতে রয়েছেন রায়মণিদেবী। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই তারা কালিয়ানিবাসে ভাড়া রয়েছেন। বৃদ্ধার তিন ছেলে। বড় এবং মেজ ইছাপুরে থাকেন। তারা স্বচ্ছল বলেই জানিয়েছেন তিন ছেলের মা। কিন্তু কেউ মায়ের খোঁজ রাখেন না। কেন? ছলছল চোখে রায়মণিদেবী বলেন, ‘‘ছোট ছেলেকেই সব থেকে বেশি ভালবাসতাম। আমার যা ছিল, সবটা ওকে দিয়েছি। তার পর থেকেই অন্য দুই ছেলে আর সম্পর্ক রাখেনি আমার সঙ্গে।’’ তার অভিযোগ, এর আগে শীতের রাতেও তাঁকে একাধিক বার বাড়ি থেকে বার করে দিয়েছেন তাঁর আদরের ছোট ছেলে।

এ দিন কুণালবাবু জানান, রতনবাবুর সঙ্গে তিনি যোগাযোগ করেছিলেন। তিনি উল্টে তার মায়ের সম্পর্কে হাজারো অভিযোগ করেছেন। কুণালবাবু আরও বলেন, ‘‘ওঁকে বলেছি, লোকে বাইরে গেলে বাড়ির কুকুর-বেড়ালের জন্যও ব্যবস্থা করে যায়। আশ্চর্যের কথা, তার পরে এক বারও সে ফোন করে মায়ের খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি!’’

এ দিন রতনবাবুকে বারবার ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। এমনকি এসএমএস-এর উত্তরও দেননি। খবর: আনন্দবাজার পত্রিকা

আরো পড়ুন:  ভরণ-পোষণের জন্য উচ্চশিক্ষিত ৩ ছেলের বিরুদ্ধে বাবার মামলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৮:০২


উচ্চ শিক্ষিত তিন পুত্র সন্তানের বিরুদ্ধে পিতা-মাতার ভরণ-পোষণ আইনে এবার অভিযোগ দায়ের করেছেন এক অসহায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের (বিএইচআরএফ) আইনি সহায়তায় মোহাম্মদ সাইদুল হক (৭২) মামলাটি দায়ের করেছেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত পরিসংখ্যান কর্মকর্তা এবং মিরেশরাই পূর্ব মালিয়াইশ গ্রামের ধনমিয়া বাড়ীর বাসিন্দা মরহুম মোঃ সোবহানের পুত্র।

বুধবার চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট হেলাল উদ্দীনের আদালতে অভিযোগটি শুনানি শেষে বাদির তিন পুত্র মোঃ নাজমুল হক হেলাল (৪৪), মোঃ সাইফুল হক (৩৬) ও মোঃ মাইনুল হকের (৩৪) বিরুদ্ধে আদালত সমন জারি করেন।

অভিযোগে উল্লেখ করেন, বহু কষ্টে অর্ধাহারে অনাহারে জীবনের সমস্ত অর্থ, শ্রম ব্যয় করে সন্তানদের লালন পালন ও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করেন। বড় সন্তান মোঃ নাজমুল হক হেলাল ঠিকাদার, দ্বিতীয় সন্তান মোঃ সাইফুল হক এমকম পাশ এবং সিএন্ডএফ ফার্ম রাজিয়া ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল চৌমুহুনী আগ্রাবাদে কর্মরত সিনিয়র এসিষ্টেন্ট ও তৃতীয় সন্তান মোঃ মাইনুল হক রনি ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড ঢাকার গুলশান শাখার অফিসার। বাদির সন্তানরা আর্থিকভাবে সামর্থবান হওয়া সত্ত্বেও মাতাপিতার কোনো ভরণপোষণ দেয়া দূরে থাক তাদের সঙ্গদান এবং চিকিৎসা ও ওষুধের খরচও প্রদান করে না।

বাদি ২০০৪ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে আসলে সামান্য পেনশনের টাকায় পরিবারের খরচ চালানো সম্ভব না হওয়ায় ইতিমধ্যে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। মেয়ের স্বামীদের সাহায্যে বাদি চোখের অপারেশন করলেও তিন সন্তান তাকে হাসপাতালে দেখতে পর্যন্ত যায়নি।

তিনি তিন সন্তান হতে মাসিক ৩০ হাজার টাকা নিয়মিত খোরপোষ বা মাতা-পিতার ভরণপোষণের দাবিতে অভিযোগটি দায়ের করেন। আদালত বাদির জবানবন্দি গ্রহণ ও দাখিলীয় দলিলপত্র বিবেচনায় প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে অপরাধ আমলে নিয়ে সমন জারির আদেশ দেন।

বাদি পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন মানবাধিকার আইনজীবীবৃন্দ যথাক্রমে এডভোকেট এ.এম জিয়া হাবীব আহসান, এডভোকেট এ এইচ এম জসিম উদ্দিন, এডভোকেট প্রদীপ আইচ দীপু, এডভোকেট সাইফুদ্দিন খালেদ, এডভোকেট মোঃ হাসান আলী প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল