১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫
`

শিক্ষার্থীরা কেন এত ক্ষুব্ধ

শিক্ষার্থীরা কেন এত ক্ষুব্ধ - ছবি : সংগৃহীত

দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করেও ছাত্রছাত্রীদের রাজপথ থেকে ফেরানো গেল না। বরং অনেকের মতে গতকাল শিক্ষার্থীরা আরো বেশি রাজপথে বের হয়ে আসে। অঝোর বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা রাজপথ নিয়ন্ত্রণ করেছে। অনেকে পরিবারের বাধা উপেক্ষা করে সকালে ব্যাগ নিয়ে বের হয়ে এসেছে বাসা থেকে। গতকাল শুধু রাজধানীতে নয়, সারা দেশের সব নগর বন্দরে শিক্ষার্থীরা বের হয়ে আসে রাজপথে। কিছু দিন আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করেও সারা দেশের শিক্ষার্থীরা নেমে এসেছিল রাজপথে। কিন্তু বাসচাপায় রাজধানীতে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ-প্রতিবাদ আর রাজপথে নেমে আসার যে নজির স্থাপিত হলো তা এ দেশে স্মরণাতীতকালে কেউ দেখেছি কি না তা নিয়ে বিশ্লেষণ চলছে। 

রাজধানীসহ সারা দেশের শিক্ষার্থীদের এভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসার পেছনে শুধু বাসচাপায় দুইজন শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনাকে একমাত্র কারণ হিসেবে দেখতে রাজি নন অনেকে। বরং এর পেছনে কাজ করছে দীর্ঘ দিনের জমে থাকা ক্ষোভ। বাসচাপায় নিহতের ঘটনাকে কেন্দ্র করে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের এক সুরে প্রতিবাদকে জমে থাকা সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখছেন অনেকে। অপর দিকে এ প্রতিবাদকে শুধু শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ নয় বরং অনেকে এর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে সমাজের সর্বস্তরে চলমান নৈরাজ্য, অরাজকতা, অনিয়ম, নিরাপত্তাহীনতা আর দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবেও মনে করছেন। 
কিন্তু কেন কোমলমতি লাখ লাখ শিক্ষার্থীর মনে তীব্র এই ক্ষোভ, যে কারণে সুযোগ পেলেই তারা বারবার নেমে আসছে রাজপথে? 

সম্প্রতি কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে দেশের প্রায় সব উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজপথে অংশ নিয়ে নজির স্থাপন করেন। কোটা প্রথা বাতিল বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ বক্তব্য এবং আচরণে এটা পরিষ্কার যে, সরকার এ বিষয়ে আগের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রনেতাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। সরকার সমর্থক ছাত্র সংগঠন কর্তৃক নির্যাতন করা হচ্ছে কোটা আন্দোলনকারীদের। ভয়ভীতি আর নির্যাতনের মাধ্যমে দমনের পথ বেছে নেয়া হয়েছে। কোটা সংস্কার এবং কোটা আন্দোলন বিষয়ে সরকারের সর্বশেষ অবস্থান সারা দেশের শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। 

ভ্যাট-বিরোধী আন্দোলন, ধর্ষণ, যৌন হয়রানির প্রতিবাদসহ বিভিন্ন সময় রাজপথে নামার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ অনেকটা প্রশমন হলেও একের পর এক ঘটতে থাকা নানা ধরনের অরাজকতা নতুন করে ক্ষোভের জন্ম দিচ্ছে শিক্ষার্থীসহ সব মহলে। বিশেষ করে শিক্ষা খাতে গত কয়েক বছর ধরে চলমান নৈরাজ্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মনে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। শিক্ষা খাতে গত প্রায় এক দশক ধরে চলমান অব্যবস্থাপনা, অরাজকতা আর নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার শিকার হয়েছেন শিক্ষার্থী আর অভিভাবকেরা। লেখাপড়ার নামে শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে মানসিক যন্ত্রণা, মানসিক চাপ আর নিরাপত্তাহীনতা। লাগাতার প্রশ্নফাঁস, সৃজনশীল পদ্ধতি, সমাপনী ও জেএসসি পরীক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয় ঘিরে একের পর এক অস্থিরতা লেগে আছে শিক্ষা খাতে। 

মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে একজন অভিভাবক এ প্রতিবেদককে বলেন, আপনার মনে আছেÑ গত কয়েক বছর ধরে নানা কারণে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছে। সৃজনশীলের বিরুদ্ধে আমাদের সন্তানরা বারবার রাস্তায় নেমেছে। আমিও একজন অভিভাবক হিসেবে তাদের সাথে এক হয়ে সৃজনশীলের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছি। গত কয়েক বছরে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। লেখাপড়া নিয়ে ঘরে ঘরে অস্থিরতা চলছে। সব মা-বাবা আজ চরম উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন নানা কারণে। প্রশ্নফাঁস, সৃজনশীল পদ্ধতি, সমাপনী পরীক্ষা আমাদের শেষ করে দিয়েছে। শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করা হয়েছে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষাব্যবস্থায় চলমান নৈরাজ্যের কারণে। 

শিক্ষার্থীদের সাথে রাজপথে প্রতিবাদে যোগ দিয়েছেন অনেক অভিভাবক। রাজধানীতে পরিবহন বিড়ম্বনা অনেক আগেই অসহনীয় অবস্থায় চলে গেছে। রাজধানীবাসীর নিত্যদিনের সমস্যা, বিড়ম্বনা আর হয়রানির নাম পরিবহন খাত। বিশেষ করে নারী, বয়স্ক ও শিশুদের জন্য একেবারেই অনুকূল নয় রাজধানীর পাবলিক পরিবহন ব্যবস্থা। এক দিকে রাস্তার চরম দুরবস্থা আরেক দিকে পরিবহনক্ষেত্রে নৈরাজ্য। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল আর নিরাপত্তাহীনতার সাথে এখন যুক্ত হয়েছে পাবলিক পরিবহনে ধর্ষণের ঘটনা। এটা নারীদের অধিকতর নিরাপত্তাহীনতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। রয়েছে পরিবহন খাতে উচ্চ ব্যয়ের বিষয়। পরিবহন খাতের নৈরাজ্যের শিকার সারা দেশের শিক্ষার্থীদের বড় একটা অংশ। 

পরিবহন আর শিক্ষা খাতে বছরের পর বছর ধরে চলমান নৈরাজ্য আর অস্থিরতার পাশপাশি সমাজের সর্বস্তরের অরাজকতার যে চাঞ্চল্যকর নিত্য নতুন ঘটনা ঘটছে তা-ও প্রযুক্তির কারণে দ্রুত পৌঁছে যাচ্ছে আজকের ছাত্রসমাজের কাছে। এসব বিষয়ও তাদের মনে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম দিচ্ছে। সে কারণে শিক্ষার্থীদের চলমান এ বিক্ষোভ প্রতিবাদকে বিচ্ছিন্নভাবে না দেখে সার্বিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ আর প্রতিবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন অনেকে।
দেশের বর্তমান অবস্থা মেনে নিতে পারছে না শিক্ষার্থীরা : কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদকে কী হিসেবে দেখছেন জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এ এস এম আমানউল্লাহ বলেন, প্রথমত আমি একে দেখছি সমাজের সার্বিক অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে। সমাজের সার্বিক অনাচার অত্যাচারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা কিছু করতে পারছিল না। বাসচাপায় শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনাকে সুযোগ হিসেবে নিয়েছে তারা। 

দ্বিতীয়ত পরিবহন সেক্টরে নৈরাজ্য, ডাকাতি আর হাজার কোটি টাকার চাঁদাবাজি চলছে তা শিক্ষার্থীরা অনেক আগেই বুঝে গেছে। ভুয়া লাইসেন্সের বিষয়ে তারা জানত এটা রাজপথে তাদের কথা ও কাজে পরিষ্কার। 
তৃতীয়ত রাজনীতিতে অহমিকা বোধ সৃষ্টি হয়েছে। অচলাবস্থা চলছে। এসব বিষয় শিক্ষার্থীদের মনে অনেক আগে থেকেই দাগ কেটেছে। এসব বিষয়ে তাদের কোনো কিছু বলার ছিল না। কিন্তু তারা কিছু বলতে চাচ্ছিল মনে হয়। তারা বলার সুযোগ পেয়েছে। গত চার-পাঁচ দিনের ঘটনায় দেখা যায় তারা রাস্তায় কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না, কাউকে পরোয়া করছে না। প্রফেসর আমানউল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের পোস্টারের ভাষা যদি লক্ষ করেন তাহলে বুঝতে পারবেন দেশে যে অবস্থা চলছে তারা এটা চায় না। তাদের পোস্টারের ভাষায় এটা পরিষ্কার। 

প্রফেসর আমানউল্লাহ বলেন, এটা কোনো আন্দোলন নয়, বিপ্লব নয় এটা প্রতিবাদ। এটা অনেক দিন তাদের মনে জমা হয়ে ছিল। 
পরিবহন সেক্টরের ৬০-৭০ হাজার শ্রমিক মন্ত্রীর ভাষায় কথা বলছিল। এ ধরনের আচরণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন দেশে চলতে পারে না সেটাই দেখাল শিক্ষার্থীরা।


আরো সংবাদ



premium cement
অননুমোদিত জমি ভরাট কার্যক্রমের সন্ধান পেলে দ্রুত ব্যবস্থার নির্দেশ ভূমিমন্ত্রীর ভাসানচর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক ব্যক্তিকে গলা কেটে হত্যা ইসরাইলকে পারমাণবিক স্থাপনায় আঘাতের ব্যাপারে সতর্ক করলো আইআরজিসি সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ১২৮তম প্রয়াণ দিবসে স্মরণ সভা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকদের শূন্য পদ দ্রুত পূরণের নির্দেশ ট্রেনের ইঞ্জিনের সামনে ঝুলন্ত নারীর লাশ উদ্ধার মধুর প্রতিশোধে সিটিকে বিদায় করে সেমিফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদ রাজশাহীতে ভুয়া তিন সেনা সদস্য গ্রেফতার ডেঙ্গুতে আরো একজনের মৃত্যু, আক্রান্ত ২৩ চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণ, প্রতিদ্বন্দ্বী আ'লীগ নেতাকে ইসির শোকজ বেসিস নির্বাচনে ওয়ান টিমের প্যানেল ঘোষণা

সকল