২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

হাত ধরে হাঁটা : ছাত্র-ছাত্রীকে পেটাল ছাত্রলীগ

হাত ধরে হাঁটা : ছাত্র-ছাত্রীকে পেটাল ছাত্রলীগ - ছবি : সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে এক ছাত্রী ও ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ বিশ^বিদ্যালয়ের একটি হল শাখা ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। পরস্পর হাত ধরে হাঁটাকে কেন্দ্র করে একই বিভাগের ওই দুই শিক্ষার্থীকে দুই দফা মারধর করে তারা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আসাদুজ্জামান এবং লীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। অভিযুক্তরা ঢাবির সূর্য সেন হলের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং হল শাখা ছাত্রলীগের কর্মী। এ ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আশ^াস দিয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ঘটনা করা হয়। গতকাল শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী এবং ভুক্তভোগীদের সূত্রে জানা যায়, আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৫টায় আসাদ ও লীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তারা একটি রিকশা ডাকছিলেন কার্জন হলের যাওয়ার জন্য। এ সময় ১০-১২ জন ছাত্র তাদের সামনে এসে দাঁড়ায়। ওই দুই শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কি না তা জানতে চান ও প্রমাণস্বরূপ আইডি কার্ড দেখাতে বলেন। ওই দুই শিক্ষার্থী তাদের আইডি কার্ড দেখান। তা সত্ত্বেও একাধিক শিক্ষার্থী আসাদুজ্জামানকে মারধর করে। এ সময় তার সাথে থাকা লীনা তাকে রক্ষা করতে গেলে তাকেও মারধর করা হয়।

মারধরকারীরা পরে সূর্য সেন হলের ভেতরে প্রবেশ করেন। এ সময় তাদের পরিচয় জানতে আসাদ্জ্জুামানও হলে প্রবেশ করেন। এই পর্যায়ে ওই শিক্ষার্থীকে স্টাম্প দিয়ে মারধর শুরু করা হয়। তার সাথে থাকা ছাত্রী লীনা রক্ষা করতে গেলে তাকেও গাছের ডাল দিয়ে বেদম প্রহার করা হয়। মারধরের একপর্যায়ে ওই ছাত্রীর পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ উঠে গিয়ে রক্তক্ষরণ হয়।
পরে রাত পৌনে ১০টায় সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল এসে ভুক্তভোগীদের বক্তব্য শোনেন। তিনি ভুক্তভোগীদেরকে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর বরাবর একটি দরখাস্ত লিখতে বলেন। আহত ওই দুই শিক্ষার্থীকে তিনি হলে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন এবং তাদের চিকিৎসারও বন্দোবস্ত করেন।

তাদের অবরুদ্ধ করে রাখল বুয়েট ছাত্রলী‌গ

নিরাপদ ক্যাম্পা‌সের দা‌বি‌তে প্রচারণায় নাম‌লে প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাকর্মীদের কা‌জে বাধা দিয়ে তাদের অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) এ ঘটনা ঘটে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দুইটি দাবিতে বুয়েট ক্যাম্পাসে লিফলেট দিয়ে প্রচারণা চালাতে যায় প্রগতিশীল ছাত্র জোটের কেন্দ্রীয় কমিটির ১৫-২০জন নেতাকর্মী। দাবিগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ ক্যাম্পাসগুলোকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাস-দখলদারিত্বমুক্ত করে গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটার যৌক্তিক সংস্কার করা। এ দুই দাবিতে আগামী সোমবার প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিবে প্রগতিশীল ছাত্র জোট।

অভিযোগ ওঠে, প্রচারণা চালানোর সময় তাদেরকে ক্যাম্পাস শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জামি উস সানীর নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী বাধা দেয়। পরে বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার মধ্যে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় তাদেরকে জোর করে 'ক্যাম্পাসে আসা ভুল হয়েছে' এটা লিখিতভাবে স্বীকার করতে বলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তবে জোটের নেতাকর্মীরা তা করেনি বলে জানা গেছে। প্রায় এক ঘণ্টা পর তারা সেখান থেকে বের হয়ে আসে।

এ বিষয়ে প্রগতিশীল জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা জানান, দুপুরে বুয়েট ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণ করতে গেলে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আমাদের বাধা দেয়। তারা বলে যে, ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে হলে অনুমতি নিতে হবে। তিনি বলেন, যৌক্তিক দাবি নিয়ে প্রচারণা চালালে ছাত্রলীগের অনুমতি নিতে হবে কেন? এভাবে বাধা দেয়ার মাধ্যমে তারা আমাদের মত প্রকাশের অধিকার হনন করতে চায়। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা 'লিফলেট বিতরণ আমাদের ভুল' এটা জোর করে স্বীকার করতে বলে, তবে আমরা সেটা করিনি।

এসব অভিযোগের বিষয়ে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জামি উস সানী বলেন, বুয়েটে তাদের (প্রগতিশীল ছাত্র জোট) কোনো শাখা নেই। এখানে তারা লিফলেট বিতরণ করবে কেন? তাদের বাধা ও পরে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, বুয়েট ক্যাফেটরিয়াতে আমরা তাদের সাথে আলোচনা করেছি। তাদের বাধা দেয়া হয়নি। জোর করে ভুল স্বীকার করানোর কথাও অস্বীকার করেন এ ছাত্রলীগ নেতা।


আরো সংবাদ



premium cement