২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
কোটা সংস্কার

পর্যালোচনা কমিটির বৈঠকে দেশ-বিদেশের তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত

কোটা
কোটা সংস্কার আন্দোলন করতে গিয়ে আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন - ছবি : নয়া দিগন্ত

কোটা সংক্রান্ত দেশ-বিদেশের তথ্য ও প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে নির্ধারিত ১৫ কর্মদিবসের মধ্যেই প্রতিবেদন দেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। কমিটির প্রথম বৈঠকে কর্মপন্থা নির্ধারণের পাশাপাশি কোটার বিষয়ে দেশি-বিদেশি তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আজ রোববার সচিবালয়ে কমিটির প্রথম বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কমিটিতে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (বিধি) আবুল কাশেম মহিউদ্দিন।

বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। বেলা ১১টার পর সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের দফতরে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসেন কমিটি। বৈঠক শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে। মন্ত্রিপরিষিদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের সভাপতিত্বে তার দফতরে অনুষ্ঠিত প্রায় দেড় ঘণ্টা এই বৈঠকে কমিটির সদস্য লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হক, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ, অর্থ বিভাগের সচিব মুসলিম চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব অপরূপ চৌধুরী, সরকারি কর্ম কমিশনের সচিব আকতারী মমতাজ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।

প্রসঙ্গত, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে গত ২ জুলাই সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে তা সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে সুপারিশ দিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটিকে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পর্যালোচনা বা সংস্কার বা বাতিলে বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে প্রয়োজনে বর্তমান কোটা পদ্ধতি সংস্কার বা বাতিলের যৌক্তিকতাসহ সরকারের কাছে আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি), অর্থ বিভাগ এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিবকে নিযে গঠিত এই কমিটিকে ১৫ কর্মদিবস, অর্থাৎ আগামী ২৩ জুলাইয়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে হবে।

কমিটির মুখপাত্র আবুল কাশেম মহিউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, এটি কমিটির প্রথম মিটিং ছিল। মিটিংয়ে মূলত কমিটির কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই কর্মপন্থার প্রথম যে স্টেপ সেটি হচ্ছে- কোটা সংক্রান্ত দেশে-বিদেশে যে তথ্য রয়েছে বা আমাদের বিভিন্ন সময়ে গঠিত কমিশন বা কমিটির যে রিপোর্ট রয়েছে সেই রিপোর্ট যতদ্রুত সম্ভব সংগ্রহ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, বেঁধে দেয়া ১৫ দিন সময়ের মধ্যেই তারা প্রতিবেদন দেওয়ার চেষ্টা করবেন। এ লক্ষ্যে আগামী সাত দিনের মধ্যে কোটা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবেন তারা। এই রিপোর্ট, প্রতিবেদন বা তথ্য যেটাই বলেন, সেগুলো প্রাপ্তির পর মূলত আমরা দ্বিতীয় মিটিংয়ে বসব।

দেশ-বিদেশের প্রতিবেদন বলতে কী বুঝায়? - এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল কাশেম মহিউদ্দিন বলেন, এটা বিভিন্ন ধরনের হবে। পত্রিকার প্রতিবেদন রয়েছে, আমাদের পিএসসির প্রতিবেদন রয়েছে, সাবেক ক্যাবিনেট সেক্রেটারি রয়েছেন কয়েকজন, তাদের কমিশন বা তাদের পারসোনাল রিপোর্টও রয়েছে, সেগুলো আমরা যত দ্রুত পারি সংগ্রহ করব। আমরা আসলে এটা নিয়ে সার্বক্ষণিক কাজ করতে চাচ্ছি। আমরা চেষ্টা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে এগুলো কালেক্ট করার। এগুলো কালেক্ট করার উপরই নির্ভর করবে পরবর্তী মিটিং।

কবে নাগাদ দ্বিতীয় মিটিং বসবেন- জানতে চাইলে আবুল কাশেম বলেন, আমাদের সময় ১৫ কর্মদিবস। আমরা চেষ্টা করছি যত দ্রুত পারি এ ১৫ দিনের মধ্যে থাকার। যদি না হয় সেটা আমরা পরবর্তীতে বলতে পারব। এখন পর্যন্ত ১৫ দিনের মধ্যেই রয়েছি।

তথ্য সংগ্রহে কদদিন লাগবে? - জানতে চাইলে যুগ্ম সচিব বলেন, যত দ্রুত সম্ভব, পারলে এক সপ্তাহের মধ্যে আমরা সংগ্রহ করব।

কমিটি বিশেষজ্ঞ কাউকে অন্তর্ভুক্ত করবে কিনা- এ বিষয়ে তিনি বলেন, এটা এখনও আমরা সিদ্ধান্ত নেইনি। রিপোর্ট পাওয়ার পর আমরা মিটিং করব। তখন আমরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কমিটি বসার বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কাশেম বলেন, আন্দোলকারী যারা তারা তো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া করছেন। তারা অনেকেই তথ্য না জেনেও আন্দোলন করছেন। এটা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেহেতু চাচ্ছেন এ বিষয়ে ভালো-সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য, সেজন্য শক্তিশালী কমিটি বাস্তবধর্মী এবং তথ্যগত যে বিষয় রয়েছে সেগুলো পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত দেবে।

বর্তমানে সরকারি চাকরিতে সংরক্ষিত কোটা ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ নেয়া হয় মেধা যাচাইয়ের মাধ্যমে। বিসিএসে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৩০, জেলা কোটায় ১০, নারী কোটায় ১০ ও উপজাতি কোটায় ৫ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণ করা আছে। এ ৫৫ শতাংশ কোটায় পূরণযোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সেক্ষেত্রে ১ শতাংশ পদে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিয়োগের বিধান রয়েছে।

প্রসঙ্গত, এ কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে বেশ কিছুদিন ধরেই আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সড়ক অবরোধও করছিলেন তারা। কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা দেন। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোটা নিয়ে যখন এতকিছু, তখন কোটাই থাকবে না। কোনো কোটারই দরকার নেই। যারা প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী তাদের আমরা অন্যভাবে চাকরির ব্যবস্থা করে দেব। এরপর সর্বশেষ গত ২৭ জুন জাতীয় সংসদে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকতে হবে, কমানো যাবে না- বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের এমন বক্তব্যকে সমর্থন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই তো আজ আমরা স্বাধীন। তাদের অবদানেই তো আমরা দেশ পেয়েছি।


আরো সংবাদ



premium cement