২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভর্তির আবেদন না করা কলেজগুলো বন্ধের কথা ভাবছে শিক্ষা বোর্ড

ভর্তির আবেদন না করা কলেজগুলো বন্ধের কথা ভাবছে শিক্ষা বোর্ড - ছবি : সংগৃহীত

ইনস্টিটিউট আইডেনটিফিকেশন নম্বর বা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নম্বর (ইআইএন) ধারী যেসব কলেজে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি আবেদন করেনি তাদের বিরুদ্ধে ভর্তি প্রক্রিয়া শেষে ব্যবস্থা নেয়ার চিন্তাভাবনা করছে শিক্ষা বোর্ড। এ ছাড়া যেসব কলেজশিক্ষার্থীদের অগোচরেই তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে ভর্তি আবেদন আগে-ভাগে করেছে, অর্থাৎ ভুয়া ও শিক্ষাবাণিজ্য করা আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার পরিকল্পনা করছে বোর্ড। কলেজ ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়া পরপরই তাদের বিরুদ্ধে এবার কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন ঢাকা বোর্ড কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো: হারুন-অর-রশিদ। তিনি জানান, বর্তমানে অষ্ট্রেলিয়া সফররত বোর্ড চেয়ারম্যানও এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তারই ভিত্তিতে প্রাথমিক মনিটরিং কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। কলেজ ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন হবার পর পরই এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া শুরু হবে।

অপর এক প্রশ্নে জবাবে কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো: হারুন আরো বলেন, অতীতে কী হয়েছে, জানি না। এবার তালিকা করেই ব্যবস্থা নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, উক্ত দু’টি বিষয় নিয়ে অভিযুক্তদের শোকজ করা হবে। প্রয়োজনে তাদের ডেকে এনে সমস্যা জানতে চাওয়া হবে। তারপরই বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কাজ শুরু হবে। অভিযুক্তদের ব্যাপারে তাদের বিগত তিন বছরের কার্যক্রম ও অবস্থাও পর্যালোচনায় নেয়া হবে। 

ভুয়া ভর্তির আবেদন করা কলেজের কৃতকর্মকে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের জন্য অবর্ণনীয় হয়রানি ও দুর্ভোগ হিসেবে অভিহিত করে কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মো: হারুন বলেন, আমার কাছে কিশোরগঞ্জ ও গোপালগঞ্জ থেকেও অভিভাবকেরা এসে অভিযোগ করেছেন। তাদের হয়রানি ও দুর্ভোগ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না। এ ধরনের অপকর্মের শাস্তি অবশ্যই হওয়া উচিত। 

এ দিকে গত ১০ জুন ভর্তির আবেদনের প্রথম তালিকা প্রকাশের পর দেখা গেছে, এবার একাদশ শ্রেণীর ভর্তিতে সারা দেশের ১০৩৬টি কলেজ শিক্ষার্থীশূন্য রয়েছে। এর মধ্যে ১৭৩টি কলেজ কোনো শিক্ষার্থী আবেদন করেনি। আর ৮৬৬টি কলেজে ভর্তি হতে পছন্দ দিলেও শিক্ষার্থী পায়নি। তবে আরো দুই দফা ভর্তি নিশ্চয়নের সুযোগ রয়েছে। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড কর্তৃক প্রকাশিত একাদশ শ্রেণীর ভর্তির আবেদনের ফলাফল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৩ লাখ ১৯ হাজার ৬৭৫ জন ভর্তির জন্য অনলাইন ও মোবাইলের এসএমএস’র মাধ্যমে আবেদন করেছিল। এর মধ্যে ১২ লাখ ৩৮ হাজার ২৫২ জন ভর্তির জন্য কলেজ নির্বাচন করা হয়েছে। বাকী ৮১ হাজার ৪২৩ জন কোনো কলেজ পায়নি। তারা কলেজে ভর্তির জন্য আবারো আবেদন করতে হবে। 

আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সূত্রে বলা হয়েছে, ইআইএনধারী সারা দেশে ১৬ হাজার ৪০৬টি কলেজে অনলাইনে ভর্তির আবেদন করার জন্য মনোনীত ছিল। এদের মধ্যে দুই হাজার ৩৬১টি কলেজে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীরা আবেদন করেছেন। ১৭৩টি কলেজে কোনো শিক্ষার্র্থী ভর্তির জন্য আবেদনই করেননি। ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী সর্বনি¤œ পাঁচটি কলেজ পছন্দ দিতে পারেন। সে অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা ৮৬৬টি কলেজ পছন্দের তালিকায় রাখলেও অন্য কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে মেধামানুসারে বোর্ড থেকে কলেজ নির্ধারণ করে দেয়ায় ৮৬৬টি কলেজ শিক্ষার্থী শূন্য রয়েছে। এ ব্যাপারে ঢাকা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক হারুন নয়া দিগন্তকে বলেন, কলেজগুলোর বিগত তিন বছরের শিক্ষার্থী ভর্তির তথ্য এবং শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনার বিষয় পর্যালোচনা করা হবে।

তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ ব্যাপারে কোনো আপস করার কোনো সুযোগ নেই। বোর্ড সূত্রে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী না পাওয়া বেশির ভাগ কলেজ ঢাকা শহরে অবস্থিত। প্রয়োজন ও যোগ্যতার শর্তপূরণ না থাকলেও বোর্ডের এক শ্রেণীর কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বাণিজ্যের স্বার্থে নতুন নতুন কলেজে পাঠদানের অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এ সাথে সংযুক্ত ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়েরই কলেজ শাখার কর্মকর্তারা। গত বছরও একাদশ শ্রেণীতে ১৩৫টি কলেজে একজন শিক্ষার্থীও ভর্তি হয়নি। তাদের বিরুদ্ধে বোর্ড থেকে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement