১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৫৪ হাজার আবেদনের স্তূপ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের

৫৪ হাজার আবেদনের স্তূপ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের - সংগৃহীত

অবসরে যাওয়া ৫৪ হাজার শিক্ষক কর্মচারীর আবেদনের বিশাল স্তূপ জমে আছে বছরের পর বছর ধরে। টাকার অভাবে তাদের অবসর সুবিধার পাওনা বুঝিয়ে দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এসব শিক্ষক কর্মচারীর সবাই বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে অবসর নিয়েছেন। তাদের কেউ বেসরকারি হাইস্কুলের, কেউ কলেজের, কেউ মাদরাসার আর কেউ কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী ছিলেন।

এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা প্রদান করে দু’টি সংস্থা। এর একটি হলো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট। আরেকটি হলো অবসর সুবিধা বোর্ড।

কল্যাণ ট্রাস্টের কাছে ২৬ হাজার এবং অবসর সুবিধা বোর্ডের কাছে ২৮ হাজার দরখাস্ত জমা রয়েছে অবসরে যাওয়া শিক্ষক কর্মচারীদের।
কল্যাণ ট্রাস্ট শিক্ষকদের বেতন থেকে প্রতি মাসে শতকরা ২ ভাগ কেটে রাখে। আর অবসর সুবিধা বোর্ড প্রতি মাসে বেতন থেকে ৪ শতাংশ কেটে রাখে। এভাবে প্রত্যেকের প্রতি মাসের বেতন থেকে মোট ৬ শতাংশ কেটে রাখা হয়। একজন শিক্ষক অবসরে গেলে এ টাকা ফেরত পান সর্বশেষ স্কেল অনুযায়ী। কিন্তু সাধারণত অবসরের চার বছরের আগে শিক্ষকরা তাদের এ পাওনা ফেরত পান না। এ সুবিধা পেতে তাদের নানা হয়রানির শিকার হতে হয় বলে জানালেন অনেকে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক ও কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ মো: শাহজাহান আলম সাজু নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে প্রতি মাসে শিক্ষকদের বেতন থেকে মোট ১৬ কোটি টাকা জমা হয়। আর প্রতি মাসে অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য দরকার হয় ৩০ থেকে ৩২ কোটি টাকা। কিন্তু আমাদের কাছে অতিরিক্ত এ টাকা নেই। তাই ক্রমাগতভাবে জমা হওয়া দরখাস্তের পরিমাণ বাড়ছে।

তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের কাছ থেকে চাকরি জীবনে যে পরিমাণ টাকা কেটে রাখা হয় তার প্রায় ১৮ গুণ বেশি তাকে দেয়া হয়। সর্বশেষ স্কেল অনুযায়ী তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার কারণে এ টাকা বৃদ্ধি পায়। এর ফলে অর্থের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় সরকার যদি আমাদের জন্য আলাদাভাবে বিশেষ বরাদ্দ না দেয় তাহলে অবস্থা আরো জটিল আকার ধারণ করবে। গত দুই বছরে সরকার ৫০ কোটি টাকা করে মোট এক শ’ কোটি টাকা দিয়েছে শিক্ষকদের জন্য। এখন যে পরিমাণ আবেদন জমা আছে তাতে শিক্ষকদের সব পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত দরকার।

শাহজাহান আলম সাজু জানান, গত ছয় মাসে ৯ হাজার ৩ শ’ ১৫ জন শিক্ষক কর্মচারীকে ১ শ’ ৮২ কোটি ৫৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। ২০১৫ সাল পর্যন্ত যারা আবেদন করেছেন তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
অপর দিকে অবসর সুবিধা বোর্ডের পরিচালক খসরুল আলম জানান, গত ছয় মাসে ৭ হাজার ২ শ’ জন শিক্ষক কর্মচারীকে ২ শ’ ২৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে। তিনি বলেন, গত দুই বছরে সরকার মোট ৬ শ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে শিক্ষকদের জন্য।
২০১৪ সাল পর্যন্ত যারা দরখাস্ত করেছেন তাদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়া প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ২০১৫ সালের আবেদনের কাজ শুরু হয়েছে। তবে কাউকে এখনো পাওনা বুঝিয়ে দেয়া শুরু হয়নি।

অবসর সুবিধা বোর্ড থেকে জানানো হয়েছে, এ মুহূর্তে দুই হাজার কোটি টাকা যদি সরকার বিশেষ বরাদ্দ দেয় তাহলে সব শিক্ষকের পাওনা সাথে সাথে বুঝিয়ে দেয়া যাবে। বছরের পর বছর ঘুরতে হবে না শিক্ষকদের। বর্তমানে শিক্ষকদের সপ্তম জাতীয় বেতন স্কেল অনুসারে অবসর সুবিধা দেয়া হচ্ছে। ২০১৫ সালের পর যারা অবসর নিয়েছেন তারা অষ্টম স্কেল অনুসারে সুবিধা পাবেন। একজন অধ্যক্ষ বর্তমানে কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা মিলিয়ে ২২ লাখ টাকা পান। ২০১৫ সালের পর যারা অবসরে যাবেন তারা পাবেন প্রায় ৪৫ লাখ টাকা করে।

আর সরকার যদি এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষকদের কল্যাণ ট্রাস্ট ও অবসর সুবিধা বোর্ডে বিশেষ বরাদ্দ না দেয় তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করবে ভবিষ্যতে। শিক্ষকদের ভোগান্তি আরো বাড়বে। পাওনা বুঝে পেতে আরো অনেক বেশি সময় লাগবে।
অনেক শিক্ষক এ প্রতিবেদকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, একজন শিক্ষকের অনেক স্বপ্ন থাকে অবসর সুবিধার টাকা নিয়ে। কিন্তু বছরের পর বছর পার হয়ে যায়, নানা হয়রানির মুখোমুখি হতে হয় তাদের এ পাওনা বুঝে পেতে। অনেকে টাকা না পেয়েই মারা যান। অবসরের পর নগদ এককালীন এ টাকা নিয়ে শিক্ষকদের স্বপ্ন অনেক সময় দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়। শিক্ষকরা বলেন, আমাদের বেতন থেকে টাকা কেটে রাখা হয়। কিন্তু সেই টাকা বুঝে পেতেও আমাদের এত কষ্ট।

সারা দেশে প্রায় ৫ লাখ এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারী রয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement