১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দিল্লিতে দাঙ্গায় আক্রান্ত সংখ্যালঘু

ভারত সরকারের অবস্থান কী?

-

ভারতের হিন্দুত্ববাদী উগ্র জাতীয়তাবাদী সরকারের সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি শেষ পর্যন্ত দেশটিতে আবারো সংখ্যালঘু নিধনের দাঙ্গার সূত্রপাত করেছে। খোদ রাজধানী দিল্লিতে উগ্র জাতীয়তাবাদীরা সংখ্যালঘু মুসলিমদের প্রকাশ্যে হত্যা ছাড়াও তাদের সম্পদ লুটপাট এবং বাড়িঘর ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আগুনে জ্বালিয়ে দিচ্ছে কয়েক দিন ধরে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে না। সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, দিল্লি পুলিশ কোথাও কোথাও দাঙ্গাকারীদের প্রশ্রয় দিয়েছে কিংবা দাঙ্গাকারী দুর্বৃত্তদের শক্তি বৃদ্ধি করেছে। ভয়াবহ নৃশংসতার শিকার হওয়া মুসলিমরা পুলিশের সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থায় রাজধানী দিল্লিতে গুজরাটের মতো আরেক দাঙ্গার আশঙ্কা করছেন অনেকে। ১৯৮৪ সালে উগ্র হিন্দুদের পরিচালিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দিল্লিতে তিন হাজার শিখ ধর্মাবলম্বী হত্যা করার রেকর্ড রয়েছে। দিল্লি রাজ্য সরকারের মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সাহায্য চেয়েও পরিস্থিতি মোকাবেলায় সফল হতে না পারায় সেখানে ভয়াবহ ভীতি বিরাজ করছে।
ভারতের পার্লামেন্টে সম্প্রতি পাস করা, বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়ে এ দাঙ্গার সূত্রপাত। মনে হচ্ছে দাঙ্গাকারীরা এ আন্দোলন প্রতিরোধের চেয়ে সংখ্যালঘুদের উৎখাত করার অন্যায় সুযোগ খুঁজছিল। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে এমন অনেক ঘটনার শিকার সংখ্যালঘুরা। দাঙ্গাবাজদের সাম্প্রদায়িক নখরে অনেকবার রক্তাক্ত হয়েছে এ উপমহাদেশ। আর সাম্প্রতিক সময়ে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি সরকারের উত্থানে এটি নতুন করে ভারতে দেখা দিয়েছে। বিজেপি নেতাদের পক্ষ থেকে নাগরিকত্ববিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক হুমকি দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ, বিজেপির এক নেতা পুলিশকে লক্ষ্য করে বলেছেন, ‘আন্দোলনকারীদের যদি উৎখাত করা না হয় তাহলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সফর শেষ হলে তারা আন্দোলনকারীদের ঝেঁটিয়ে বিদায় করবেন।’ উসকানিদাতারা বিজেপি সমর্থকদের দিল্লির বিভিন্ন স্পটে জড়ো হওয়ার আহ্বানও জানায়। গত রোববার বৈষম্যমূলক নাগরিকত্ববিরোধী আন্দোলনকারীদের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় বিজেপি সমর্থকরা। এরপর একপর্যায়ে মুসলিমদের ওপর সঙ্ঘবদ্ধ হামলার সূচনা করে তারা। দিল্লির মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে গিয়ে দলবেঁধে বিজেপির উগ্র সমর্থকরা আক্রমণ চালাচ্ছে। আহতদের হাসপাতালে নিতে গিয়েও মুসলমানরা আবারো হামলার শিকার হচ্ছে বিজেপি পরিচালিত সঙ্ঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রের। নতুন করে হামলার আশঙ্কায় মুসলিম অধ্যুষিত কিছু এলাকা থেকে মানুষ ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে দেখা যায়, মুসলিমরা সেখানে এক ভয়াবহ অবস্থার শিকার হচ্ছেন। পরিস্থিতি সম্পূর্ণরূপে সংখ্যাগুরু উগ্র হিন্দুদের নিয়ন্ত্রণে। এমন পরিস্থিতি ২০০২ সালে গুজরাটে দেখা গিয়েছিল। সেখানে মুসলিম অধ্যুষিত পাড়া-মহল্লা যখন একের পর এক জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছিল, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে তখন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মাসের পর মাস উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী মোদির গুজরাটে মুসলিম নিধন চালিয়েছে। দিল্লিতে সূচিত দাঙ্গায় একই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। অন্তত প্রথম তিন দিনে ভারতের রাজধানীতে কর্তৃপক্ষের সামনে সংঘটিত ভয়াবহ দাঙ্গার একই স্বরূপ দেখা যাচ্ছে। মোদি সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিলে সঙ্ঘবদ্ধ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী সন্ত্রাস চালাতে পারে না। এ দাঙ্গার উসকানিদাতারা চিহ্নিহ্নত। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের কঠোর অবস্থান নেয়াই প্রত্যাশিত। তবে ভারত সরকারের নীতিতে এমন অবস্থান সাম্প্রতিক সময়ে মোটেও দেখা যায়নি।
ভারত রাষ্ট্র হিসেবে সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করেছে। নাগরিকত্ব দেয়ার নীতি হিসেবে তারা ধর্মকে প্রধান মানদণ্ড করেছে। এর প্রতিক্রিয়া সমাজে ভয়াবহরূপে পড়তে শুরু করেছে। এর জের ধরে যদি সংখ্যালঘু নিধনের পদক্ষেপ নেয়া হয় তার পরিণামও বহুদূর গড়াবে। এর প্রভাব উপমহাদেশের অন্য দেশগুলোর ওপরও পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে এসব ব্যাপার গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে। অবশ্য ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন নেতৃত্বকে এ ব্যাপারে একেবারে বেপরোয়া মনে হচ্ছে। ভারত সরকার অবশ্যই দায়িত্বশীল অবস্থান গ্রহণ করবেÑ এমন প্রত্যাশা সব শান্তিকামী মানুষের।


আরো সংবাদ



premium cement