২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বায়ুদূষণে শীর্ষে বাংলাদেশ

জরুরি ব্যবস্থা নেয়া দরকার

-

বিশ্বে ‘অনন্য রেকর্ড’ করেছে বাংলাদেশ। টানা তৃতীয়বারের মতো শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে বায়ুদূষণে। আর রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে গতবারের মতোই দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও সুইজারল্যান্ডভিত্তিক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইকিউ এয়ার-এর ‘বিশ্বের বায়ুর মান প্রতিবেদন-২০১৯’ থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ২০১৯ সালে বিশ্বের ৯৮টি দেশের সার্বক্ষণিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে এবং মঙ্গলবার প্রকাশ করা হয়েছে। প্রতি ঘনমিটার বাতাসে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর সূক্ষ্ম বস্তুকণা পিএম-২.৫-এর পরিমাণ দেখে বায়ুর মান নির্ণয় করা হয়। গত বছর বাংলাদেশে প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ২.৫-এর মাত্রা ছিল ৮৩.৩। আগের বছর যা ছিল ৯৭.১। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মান অনুযায়ী, প্রতি ঘনমিটারে যা থাকার কথা ১০-এর কম। এই পরিমাপক থেকে বোঝা যায়, বাংলাদেশের অবস্থা কত বেশি ভয়াবহ।
শীতকালে বৃষ্টি কম হওয়া এবং শুকনো আবহাওয়ার কারণে এমনিতেই বায়ুতে ধূলিকণার পরিমাণ বেড়ে যায়। তার ওপর দেশে নির্বিচারে মানহীন ইটভাটা প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উন্নয়নের প্রয়োজনেই ইটভাটার দরকার এটা জানা কথা। মানুষের জীবনমান বাড়ার সাথে সাথে যানবাহনের সংখ্যা বাড়বে এটাও স্বাভাবিক। কিন্তু ইটভাটা বা যানবাহনের মান নিয়ন্ত্রণে সরকারের বিশেষ প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রণালয় সবই আছে। তারা মান নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। স্বাভাবিকভাবেই বায়ুদূষণ মারাত্মক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। প্রশাসন ব্যর্থ হওয়ায় বায়ুদূষণ রোধে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সব সংস্থাকে উদ্যোগ নিতে গত এক বছরে একাধিকবার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি সংস্থা পরিবেশ অধিদফতর বায়ুদূষণ রোধে বেশ কিছু উদ্যোগও নেয়। কিছু ইটভাটা বন্ধ করা হয়, কিছু যানবাহন ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয় এবং রাস্তাঘাটে পানি ছিটানোর কিছু লোক দেখানো ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু তা বাংলাদেশের রেকর্ড সৃষ্টির অন্তরায় হতে পারেনি। আমরা ঠিকই বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর দেশ হওয়ার রেকর্ড ছুঁয়েছি।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর যত মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণজনিত অসুখবিসুখে। সারা বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ। প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষণের কারণে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। পাঁচ বছর আগে কিন্তু বাংলাদেশ সবচেয়ে দূষিত দেশ ছিল না। এখন এ দেশে দূষণজনিত কারণে নিঃসন্দেহে অনেক বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। কত মানুষ যে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার হিসাব নেই। বিশ্বব্যাংক বলেছে, বাংলাদেশে দূষণের শিকার দরিদ্র নারী ও শিশুরা ব্যাপকভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। কারণ, তাদের বেশির ভাগই দূষিত এলাকায় বসবাস করেন; যেখানে সিসা দূষণেরও ঝুঁকি রয়েছে। এর ফলে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা বিকাশে এবং স্নায়বিক ক্ষতি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, রাসায়নিক মিশ্রণ আছে, এমন দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে থাকলে চোখ, নাক বা গলার সংক্রমণ বা ক্ষতির কারণ হতে পারে। সেইসাথে ফুসফুসের নানা জটিলতা, যেমন ব্রঙ্কাইটিস বা নিউমোনিয়া, মাথাব্যথা, অ্যাজমা এবং নানাবিধ অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বায়ুদূষণের সাথে ডায়াবেটিসেরও সম্পর্ক রয়েছে। দীর্ঘ দিন বায়ুুদূষণের মধ্যে থাকলে ফুসফুসের ক্যান্সার এবং হৃদরোগ হতে পারে। এমনকি সেটি মস্তিষ্ক, লিভার বা কিডনির সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে। গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
লক্ষণীয় হলোÑ বাংলাদেশে উল্লিখিত সব রোগের প্রাদুর্ভাব গত কয়েক বছরে ব্যাপকভাবে বেড়েছে। এ ছাড়া বায়ুদূষণ বা সাধারণভাবে পরিবেশ দূষণের কারণে জাতীয় পর্যায়ে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিও ঘটে। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য : দূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে ৬৫০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়, যা মোট জাতীয় উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় সাড়ে তিন শতাংশ। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জরুরি অবস্থার মতো উদ্যোগী হতে হবে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা কতটুকু আমরা জানি না।


আরো সংবাদ



premium cement