২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট গতিহীন

বাংলার চর্চাকে বেগবান করুন

-

‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আইএমএলআই) যেন গতিহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বাংলাসহ বিশ্বের বিভিন্ন ভাষা গবেষণা ও সংরক্ষণ এবং প্রচার-প্রসারের উদ্দেশ্যে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয় ৯ বছর আগে। এ সময়ে প্রতিষ্ঠানটির নির্ধারিত ২৩টি কাজের মধ্যে মাত্র চারটি পুরোপুরি এবং কয়েকটির আংশিক বাস্তবায়ন হয়েছে।’
আমাদের মাতৃভাষা এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা, বাংলা আন্তর্জাতিক মর্যাদা অর্জন করার ক্ষেত্রে ঢাকার মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের বাস্তবচিত্র ফুটে উঠেছে এবার মহান একুশের দিনে একটি জাতীয় দৈনিকের লিড নিউজে। সংশ্লিষ্ট রিপোর্টের কয়েকটি সূচনাবাক্য উপরে উল্লেখ করা হলো।
এতে জানানো হয়েছে, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কিছু সাফল্যের পাশাপাশি ব্যাপক ব্যর্থতা বিদ্যমান। দেশে-বিদেশে বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করা এর অন্যতম প্রধান কাজ। বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকীকরণে নানা উদ্যোগও নেয়ার কথা; কিন্তু অদ্যাবধি তেমন কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হয়নি। প্রায় ৬ বছর আগে ‘বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃভাষা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা’ করা হয়েছিল। এ বিষয়ে ১০টি বই প্রকাশ করার কথা থাকলেও আজ পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে মাত্র একটি। যে চারটি নির্ধারিত কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে আছেÑ ভাষা বিষয়ে চারটি রিসার্চ জার্নালসহ বিভিন্ন প্রকাশনা, সেমিনার এবং ওয়ার্কশপ, বিভিন্ন ভাষার লিখনবিধির আর্কাইভ ও ভাষা জাদুঘর স্থাপন প্রভৃতি। তবে প্রচার না থাকায় এই জাদুঘরে দর্শনার্থী না থাকার অভিযোগ উঠেছে।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়ার দাবিতে ৬৮ বছর আগে ঢাকার বুকে ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তখন এই ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত ঝরেছিল রাজপথে। ১৯৫২ সালের সেই একুশে ফেব্রুয়ারি স্মরণে দিনটিকে ইউনেস্কো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসরূপে ঘোষণা করেছে দু’দশক আগেই। তখন থেকে দেশে দেশে এ দিবস পালিত হয়ে এলেও খোদ বাংলাদেশেই বাংলা ভাষার চর্চা ও প্রয়োগ, এর বিকাশ ও প্রসার নেহাত অপ্রতুল। এ ক্ষেত্রে মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের বড় ধরনের দায়িত্ব পালনের কথা; কিন্তু আজো অত্যন্ত গুরুত্ববহ প্রতিষ্ঠানটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে।
জানা গেছে, বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী অনেকসময় এই ইনস্টিটিউট ভবনে অফিসিয়াল কাজকর্ম করে থাকেন। মাঝে মাঝে এখানে আয়োজন করা হয় মন্ত্রণালয়ের সভা ও সেমিনার। এখন এখানে রয়েছে মুজিব শতবর্ষ উদযাপনসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির দফতর। এই প্রেক্ষাপটে গত কিছু দিন ভবনটিতে লোকজনের পদচারণা বেড়েছে। এর আগে এটি অনেকটা নির্জন স্থানে পর্যবসিত হয়েছিল তৎপরতার অভাবে। এ দিকে, মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের কার্যক্রম প্রধানত মহান একুশে, তথা ফেব্রুয়ারি মাসকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে আলোচ্য রিপোর্টে বলা হয়, ‘বাকি ১১টি মাসই অনেকটা ঝিমিয়ে কাটে। এ প্রতিষ্ঠানের জনবলসঙ্কট তীব্র। ফলে প্রেষণে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারাই ভরসা।’
এর নির্বাহী প্রধানের পদ হচ্ছে মহাপরিচালক। ভাষা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ আলী প্রথম থেকে এ দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। তার বক্তব্য, ‘ভাষার মতো কঠিন বিষয়ের গবেষণা এবং অন্য গবেষণা সমান নয়। তাই সমীক্ষা করা হলেও তা চূড়ান্ত করে গ্রন্থ প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। জনবলকাঠামোতে পদ ৯৩টি। তবে সব পদে লোক নিয়োগ করা যায়নি। দরকার বিশেষায়িত জনবল, যা কোনো ভার্সিটি তৈরি করে না।’
জাতির একান্ত প্রত্যাশা, মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট অবিলম্বে যাবতীয় সমস্যা কাটিয়ে উঠবে। বাংলা ভাষার বিকাশ অবারিত এবং এর চর্চাকে বেগবান করে তোলার বিকল্প নেই।


আরো সংবাদ



premium cement