২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
দুদক সুপারিশের ফলোআপ করবে

জরুরি হলেও এত বিলম্বে কেন?

-

সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা সংস্থায় দুর্নীতি প্রতিরোধে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়নের বিষয়ে ফলোআপ করবে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত সপ্তাহে কমিশনের এক জরুরি সভায় এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়।
নয়া দিগন্তের এক খবরে আরো উল্লেখ করা হয়, ওই সভায় সংস্থার চেয়ারম্যান ও সরকারের সাবেক সিনিয়র সচিব ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ‘প্রাসঙ্গিক গবেষণা থেকে জানা যায়, ফলোআপ গণশুনানি বাস্তবায়িত হওয়ায় গণশুনানি বিবেচিত হচ্ছে দুর্নীতি প্রতিরোধের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে। ফলোআপ কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগের গণশুনানিগুলো ততটা ফলপ্রসূ হয়নি।’
আইন মোতাবেক দুদক গত চার বছর ধরে নিয়মিত রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সরকারের কাছে দুর্নীতি ও অনিয়ম রোধের লক্ষ্যে সরকারের নানা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়সহ সরকারি বিভাগ ও সংস্থাগুলোতে বিরাজমান নানাবিধ দুর্নীতির সম্ভাব্য উৎস চিহ্নিত করে তা রোধ করার জন্য অনেক সুপারিশ পাঠানো হচ্ছে। কোনো কোনো সময় অনিয়ম চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়।
উপরিউক্ত সভায় দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধের লক্ষ্যে দুদক গঠিত প্রাতিষ্ঠানিক টিমের রিপোর্ট ও বার্ষিক রিপোর্টে বর্ণিত সুপারিশমালা এবং দুর্নীতি রোধে কেবিনেট ডিভিশনসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে যেসব রিপোর্ট ও চিঠি পাঠানো হচ্ছে, এগুলো বাস্তবায়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে দুদকের একজন মহাপরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। তিনি এর বাস্তবায়নের অগ্রগতির ব্যাপারে দুদককে রিপোর্ট আকারে অবহিত করবেন। দুদকপ্রধান প্রসঙ্গক্রমে জানান, এর অভিজ্ঞ কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের আইন, বিধিবিধান, পরিচালন-পদ্ধতি, অর্থ অপচয়ের দিকগুলো পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে প্রতিষ্ঠানটির সীমাবদ্ধতা, প্রতিবন্ধকতা এবং দুর্নীতির সম্ভাব্য উৎস তা প্রতিরোধের জন্য সুপারিশ তৈরি করেন, যা বাস্তবায়নযোগ্য। দুদক সর্বাধিক মাত্রায় শ্রম ও মেধা দিয়ে এই রিপোর্টগুলো পর্যালোচনাপূর্বক অনুমোদন দিয়ে থাকে। দুর্নীতি প্রতিরোধে এসব রিপোর্টের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু এগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কি না, তার সঠিক চিত্র আমাদের কাছে নেই। হয়তো কোনো ক্ষেত্রে এর বাস্তবায়ন চলছে; আবার কোনো ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। তাই এ জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। জানা গেছে, দুদক সচিবের নেতৃত্বে একটি টিম গঠিত হচ্ছে যারা গত চার বছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে পাঠানো পত্র ও সুপারিশের পূর্ণাঙ্গ ডাটাবেজ এক মাসের মধ্যেই দুদকের কাছে পেশ করবেন।
দুদক একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং একে কার্যকরভাবে পরিচালনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক দায়িত্ব। দেখা যাচ্ছে, এত দিন দুদক দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে কেবল সুপারিশ করেছে; কিন্তু এসব সুপারিশ কার্যকর হওয়ার বিষয়ে মনোযোগী হয়নি। এখন বিলম্বে হলেও এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। কথায় বলে, ইবঃঃবৎ খধঃব ঞযধহ ঘবাবৎ (মোটেও না হওয়ার চেয়ে দেরিতে হওয়াও ভালো)। তবে দুদকের এ ব্যাপারে আরো আগেই পদক্ষেপ নেয়া উচিত ছিল। এ দেশে ফলোআপ করা হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কিংবা প্রতিষ্ঠানের টনক পুরোপুরি নড়ে না। সে ক্ষেত্রে সুপারিশের ফলোআপ মোটেও করা না হলে অবস্থা কী দাঁড়াবে, সহেজই অনুমেয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement