২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
খেলাপি ঋণ আদায়ে নতুন আইন

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমেই সম্ভব

-

বিপুল খেলাপি ঋণের বোঝা দেশের অর্থনীতিকে স্থবির করে তুলছে, বিশেষ করে ব্যাংক খাতকে ঠেলে দিচ্ছে পঙ্গুত্বের দিকে। ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ দেয়ার সক্ষমতা হারাতে বসেছে। এমনকি দৈনন্দিন ব্যাংকিং কার্যক্রম চালানোর মতো ‘তারল্য’ও থাকছে না কিছু ব্যাংকের। সরকার তথা অর্থমন্ত্রী খেলাপি ঋণ আদায়ে নানা রকম আশ্বাস-অঙ্গীকার ঘোষণা করেছেন; ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন। বাস্তবে কিছুই করতে পারেননি। বরং একের পর এক ঋণখেলাপিদের নানা ধরনের সুবিধা দেয়া হয়েছে।
জাতীয় অর্থনীতির এক বিপর্যয়কর সন্ধিক্ষণে এসে শোনা গেল, খেলাপি ঋণ আদায়ে কঠোর আইন করা হচ্ছে। একটি দৈনিকের খবর, কোনো ব্যাংক খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যর্থ হলে নতুন আইন অনুযায়ী, সেই ঋণ আদায়ের দায়িত্ব দেয়া যাবে সরকারের প্রস্তাবিত নতুন সংস্থা ‘অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন’কে। বিশেষায়িত এই প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণ আদায়ে সম্ভাব্য সব ধরনের মতা পাবে। প্রতিষ্ঠানটি প্রয়োজনে ঋণখেলাপির ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিক্রি করতে কিংবা লিজ দিতে পারবে। ঋণখেলাপির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দখল, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন, ঋণ পুনর্গঠনও করতে পারবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানটিই এত মতা পেতে যাচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক ‘বাংলাদেশ অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট করপোরেশন আইন, ২০২০’ নামে একটি আইনের খসড়া এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছে বলে খবরে জানানো হয়েছে। এই নতুন আইন প্রণয়ন ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান গঠনের খবরে এ দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমরা আশ্বস্ত ও আশাবাদী হতে চাই। কারণ ঋণখেলাপিরা যে বিপুল অর্থ লোপাট করছে সেটি মূলত সাধারণ নাগরিকদেরই ট্যাক্সের টাকা। এর প্রতিটি পাই-পয়সা কোথায় কিভাবে ব্যয়, পাচার বা লোপাট হচ্ছেÑ তা নিয়ে দেশবাসী উদ্বিগ্ন। বিপুল খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব হলে দেশের অর্থনীতি যেমন সমৃদ্ধ হবে তেমনই নাগরিকরাও তার সুফল পাবেন। কিন্তু সত্যিই কি এই আইন কোনো সুফল বয়ে আনতে পারবে?
আমরা জানি, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় সব ক্ষমতা কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের আছে। কিন্তু নানা কারণে তা প্রয়োগ করতে পারেননি তারা। ঋণখেলাপিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিষিদ্ধ করে যেসব আইন ও বিধি প্রণয়ন করা হয়েছিল সেগুলো থেকে ক্রমাগত পিছিয়ে এসেছে নির্বাচন কমিশন ও সরকার। মূলত রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া শুধু আইন দিয়ে কোনো সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। এই আইন করার পর ব্যাংকগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায় আর কোনো ঋণ দেবে নাÑ এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবেন না। ঋণখেলাপিদের রাজনৈতিক কারণে অথবা তাদের প্রভাব বিবেচনায় আর কোনো সুবিধা দেয়া হবে না, এমনটা ভাবার অবকাশ নেই। কারণ সরকার কঠোর হতে যাচ্ছে এই খবরটি যে দিন বেরিয়েছে সে দিনই অন্য পত্রিকার খবরে জানা যায়, খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছে নির্বাচন কমিশন তথা বর্তমান সরকার।
এখানে সরকারের প্রসঙ্গ আসছে এ জন্য, বর্তমানে যে নির্বাচন কমিশন দেশে রয়েছে তারা সরকারের নির্দেশনা, সম্মতি বা অনুমোদন ছাড়া নিজের বিবেচনায় বা উদ্যোগে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন, এটা বিশ্বাস করার মতো যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেননি। ইসি গণপ্রতিনিধিত্ব আইনের সংশোধনী আনতে যাচ্ছে। খসড়া আইনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে ঋণ ও বিদ্যুৎ, গ্যাস, টেলিফোন বা পানির বিলখেলাপিদের বিশেষ ছাড়সহ পাঁচটি সংশোধনীর প্রস্তাব দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ েেত্র মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন পর্যন্ত এসব বিল জমা দেয়ার সুযোগ পাবেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম একটি দৈনিককে বলেছেন, ‘সরকারের পলিসি পরস্পরবিরোধী। এক দিকে ঋণখেলাপিদের বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে, আবার অন্য দিকে নিয়ে তাদের ধরার চেষ্টা করছে। তবে আমার শঙ্কা হলো, এ আইন পাস হলে নিঃসন্দেহে আদালতে রিট হবে এবং আইনটি স্থগিত হয়ে যাবে।’ আমাদের বিশ্বাস, নতুন আইন বা প্রতিষ্ঠান জরুরি নয়, বাংলাদেশ ব্যাংককে তার নির্ধারিত দায়িত্ব পুরোপুরি স্বাধীনভাবে পালন করতে দিলেই সমস্যার সমাধান সম্ভব।


আরো সংবাদ



premium cement