১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৩ বৈশাখ ১৪৩১, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
‘বাউ সয়েল টেস্টিং কিট’ বাড়িয়েছে উৎপাদন

অপার সম্ভাবনার বাংলাদেশ

-

মৃত্তিকা বা জমির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন ‘সয়েল টেস্টিং কিট’। এটি ব্যবহার করে ফসলের বর্ধিত উৎপাদনের মাধ্যমে সুফল পাচ্ছেন এবং লাভবান হচ্ছেন দেশের কৃষকরা। ফসলের চাহিদা মোতাবেক, কোন্ কোন্ সার প্রয়োজনীয়, তা যথাসময়ে সুপারিশ করতে এই কিট বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে এটা জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে আরো জানা যায়, ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত নাম, ‘বাউ’ দ্বারা পরিচিত এই টেস্টিং কিট দিয়ে মাটির ক্ষারত্ব ও অম্লত্ব, নাইট্রোজেন, পটাশিয়াম ও ফসফরাস নির্ণয় করে ফসলের জন্য সঠিক মাত্রায় নির্ধারিত সার দেয়া সম্ভব হচ্ছে। ফলে পরিমিত সার ব্যবহার করেই একই জমিতে একরপ্রতি আগের চেয়ে প্রায় দেড় গুণ ফসল উৎপাদন করছেন কৃষকরা। অস্ট্রেলিয়ার একটি দাতা সংস্থা এবং বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে ধানসহ বিভিন্ন ফসলের জমিতে পরিমিত মাত্রার সার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে একটি প্রকল্প পরিচালিত হয়েছে। এর অংশ হিসেবে ময়মনসিংহ শহরের অদূরবর্তী, সুতিয়াখালী গ্রামের কৃষকরা বাউ সয়েল টেস্টিং কিট প্রয়োগ করে আমন ধান ও অন্যান্য শস্যের চাষ শুরু করেন। দেখা গেছে, আগের চেয়ে কম সময়ে ও কম খরচে মাটি পরীক্ষা করে, সার দিয়ে চাষাবাদের মাধ্যমে এখন বেশি লাভবান হওয়া যায়। চাষিরা জানান, আগে নেহাত অনুমানসাপেক্ষে অধিক সার দিয়েও ভালো ফলন পাওয়া যেত না। একজন চাষি দুই একরে গত মৌসুমে ১২০ মণ ধান পেয়েছিলেন। কিন্তু বাউ টেস্টিং কিটের সাহায্যে পরিমাণ নির্ধারণ করে সার দেয়ায় এবার তিনি একই জমিতে পেলেন ১৮০ মণ ধান। আরেক কৃষক তার ২৪ বিঘা জমির অর্ধেকে সার দিয়েছিলেন নিছক আন্দাজ করে এবং বাকি অর্ধেক জমিতে উল্লিখিত কিটের পরামর্শ মেনে সার প্রয়োগ করা হয়। দেখা গেছে, শেষোক্ত জমিতে পরিমিত সার প্রয়োগ করায় ফলন হয়েছে বেশি। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞানীদের অভিমত, মাটির স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিশেষ কিটটি সস্তা, পরিবেশ অনুকূল এবং সহজেই ব্যবহারোপযোগী। এটি ব্যবহার করা হলে চাষের মাটির গুণগতমান রক্ষা পাবে। দেশের যেকোনো এলাকার কৃষকই এর মাধ্যমে উপকৃত হবেন। যেহেতু এখনো কিটটি বাজারে আসেনি, তাই আপাতত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকাবিজ্ঞান বিভাগের ল্যাবরেটরি থেকে তা সংগ্রহ করা যাবে। তবে ভবিষ্যতে বাজারজাত করা হবে এই কিট।
আমরা মনে করি, কৃষিপ্রধান ও জনবহুল এ দেশের প্রেক্ষাপটে, প্রধান খাদ্যশস্য ধানসহ বিভিন্ন ফসলের পর্যাপ্ত চাষাবাদে আলোচ্য কিটটি বিরাট অবদান রাখতে পারে। নির্বিচারে ইটভাটা তৈরি এবং অন্যান্য কারণে অহরহ ফসলি জমির মাটি কেটে নেয়া হচ্ছে। এতে মৃত্তিকার উপরিস্তর লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় হ্রাস পাচ্ছে মাটির উর্বরতা। তাই বাউ সয়েল টেস্টিং কিটের উপযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। যা হোক, আবার প্রমাণিত হলোÑ আমাদের বাংলাদেশ শুধু সমস্যায় আক্রান্ত নয়; সেইসাথে বিপুল সম্ভাবনায় পরিপূর্ণ। এ দেশের বিজ্ঞানীরা গবেষণার অনুকূল পরিবেশ পেলে জাতিকে নতুন নতুন উদ্ভাবনে সমৃদ্ধ করতে পারেন।


আরো সংবাদ



premium cement