২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
বিদ্যালয়ের মাঠে বসে হাট

জাতির ভবিষ্যৎ বিপন্ন হবে

-

নয়া দিগন্তের চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধির পাঠানো একটি সচিত্র প্রতিবেদন গত শনিবার ছাপা হয়েছে। এর শিরোনাম : ‘দামুড়হুদায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ এখন বাণিজ্যিক হাট।’ প্রকাশিত ছবিটিতে দেখা যায়, স্কুলের মাঠে তরিতরকারি সাজিয়ে বিক্রেতারা বসেছেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইব্রাহিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে গড়ে উঠেছে স্থায়ী দোকান ও বাণিজ্যিক হাট। বিদ্যালয় চলাকালে এই হাট বসায় শিক্ষার্থীদের পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন ভোগান্তি। পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ভেঙে পড়েছে বিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা।’
স্কুলটি প্রায় শতবর্ষ প্রাচীন। এতে পড়ছে শ’তিনেক ছাত্রছাত্রী। এই বিদ্যালয়ে আছেন আটজন শিক্ষক। স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী এর মাঠে দোকানপাট বানিয়েছেন এবং চালু করেছেন সাপ্তাহিক হাট। বহু দিন ধরে এখানে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার হাট বসছে। তখন পাইকাররা ট্রাক ছাড়াও বিকট শব্দ করেÑ এমন যন্ত্রযানে ভর্তি করে নিয়ে আসেন তাদের কাঁচামাল। এগুলো ‘লোড-আনলোড’ করা হয় স্কুলটির মাঠেই। সেখানে শাকসবজিসহ নানাবিধ পণ্য কেনাবেচা করা হয়। মাঠের লোকজন আর যানবাহনের ভিড়ের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা কষ্ট করে কোনোমতে স্কুলে এসে পৌঁছে। কিন্তু হাটের হট্টগোলে ক্লাস করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এ কারণে বহু অভিভাবক হাটের দিন সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে চান না। এতে লেখাপড়ার নিদারুণ ক্ষতি হচ্ছে। স্কুলমাঠে হাট বসানোর দরুন ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকসহ সমাজের সচেতন মানুষ উদ্বেগ প্রকাশ করা সত্ত্বেও প্রশাসন কিংবা স্থানীয় সরকার এদিকে নজর দিচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
আলোচ্য প্রতিবেদনে জানানো হয়, হাটের ক্রেতা-বিক্রেতার শোরগোলে ক্লাসে শিক্ষক কী পড়ান তা বোঝার সাধ্য থাকে না। ফলে ছাত্রছাত্রীরা পড়ার দিকে মনোযোগ দিতে পারে না। ক্লাসরুমের পাশেই হাটের আবর্জনার স্তূপ। স্কুলমাঠের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ২৪টি পাকা দোকানঘর। এসব দোকান তৈরি করা হয়েছে স্কুলের ২০ শতক জমি দখল করে। পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রী জানায়, হাটের দিন ক্লাস করতে মন চায় না। চার পাশে চিৎকার-হৈহল্লা এবং মাইকের আওয়াজে ক্লাস করা কঠিন হয়ে যায়। অন্যান্য দিনে হাট না থাকলেও ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং মাঠে খেলাধুলা করতে কষ্ট হয়।
সর্বাপেক্ষা বিস্ময়কর হলো, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এই মাঠ সরকারিভাবেই ইজারা দেয়া হয়েছে ‘হাট’ হিসেবে। অথচ এই সরকার প্রতিনিয়ত জোরগলায় দাবি করছে, তারা শিক্ষাবান্ধব এবং এ ক্ষেত্রে অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। স্কুলটির প্রধান শিক্ষক দুঃখ করে বলেছেন, এখানকার সমস্যা সমাধানের জন্য বারবার জানানো হয়েছে ইউএনওসহ কর্তৃপক্ষকে। তবে এর কোনো সুরাহা হয়নি। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এবং সরকারি সম্পদ রক্ষার স্বার্থে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে তিনি মনে করেন। স্কুলমাঠ থেকে হাট সরিয়ে নেয়াসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে জোর দিয়েছেন স্কুল কমিটির প্রধানও। তার কথা, ‘বিষয়গুলো নিয়ে আমরা অনেকবার শিক্ষা কর্মকর্তাদের বলেছি। তারা আশ্বাস দিলেও কাজ হয়নি।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার বক্তব্যÑ ‘হাট ও অবৈধ স্থাপনা সরাতে ইউএনওকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে শুনানি সম্পন্ন হয়েছে। দ্রুত সমাধানের আশা করছি।’
‘শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড’ আর প্রাথমিক শিক্ষা এর ভিত্তি। আজকের শিশু-কিশোর জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার। এ দিকে বহু বছর ধরে সরকার অঙ্গীকার করছে ‘সবার জন্য শিক্ষা’ নিশ্চিত করার জন্য। এই প্রেক্ষাপটে বলতে হয়, স্কুলমাঠে দোকানপাট বা হাটবাজার বসতে দেয়ার অর্থ, জাতির ভবিষ্যৎকেই বিপন্ন করা। তাই অবিলম্বে ইব্রাহিমপুর প্রাইমারি স্কুলমাঠের বাজার অপসারণ করা জরুরি।


আরো সংবাদ



premium cement