২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`
২০২০ সালেও সড়কে মৃত্যুর মিছিল!

মানুষ নতুন আইনের প্রয়োগ চায়

-

দেশের সড়কে মৃত্যুর মিছিলে লাশের সারি কেবলই দীর্ঘ হচ্ছে। এ নিয়ে আন্দোলনের তীব্রতা বিভিন্ন সময় চরম আকার ধারণ করেছে। বিশেষ করে ঢাকায় ২০১৮ সালে সহপাঠীর মৃত্যুর পর ছাত্ররা রাস্তায় নেমে আসে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি স্কুলের শিশুরাও এ আন্দোলনে রাজপথ কাঁপিয়ে দিয়েছে। ছাত্রীরাও নেমে এসেছিল। সরকার তাদের দাবির প্রতি নতি স্বীকার করলেও শেষ পর্যন্ত তাও কাজে আসেনি। আন্দোলনের ফলে ২০১৮ সালে সরকার একটি আইন করেছে। কিন্তু রাস্তায় মানুষের প্রাণ হারানোর মাত্রা কমেনি। ‘যাত্রীকল্যাণ সমিতির’ হিসাবে, ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশে সাত হাজার ৮৫৫ জন প্রাণ হারিয়েছেন। চলচ্চিত্র অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন সড়কে তার স্ত্রী নিহত হওয়ার পর অব্যাহত আন্দোলনে আছেন দু’যুগ ধরে। আন্দোলনে রয়েছেন আরো অনেকে। দুর্ভাগ্য আমাদের এ জাতির, সড়ক এখনো রয়েছে আগের মতোই অনিরাপদ।
বাংলাদেশের সড়কে দুর্ঘটনার প্রধান কারণ যানবাহনের ত্রুটি এবং চালকের বিভিন্ন ভুল ও অদক্ষতা। এ দুটো ব্যাপারে যাত্রী সাধারণের কিছুই করার থাকে না। প্রধানত যানবাহনের চালক এবং এর সাথে যুক্ত পরিবহন শ্রমিকরা এসব ত্রুটিবিচ্যুতির ব্যাপারে জানেন। এর সাথে জড়িত পরিবহন মালিকও। একজন দক্ষ বিচক্ষণ চালক বাছাই করা মালিকের দায়িত্ব। এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করলে রাস্তায় ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন চলতে পারে না এবং অদক্ষ ও বেপরোয়া চালক গাড়ি চালানোর সুযোগ পেতে পারেন না। আমরা বরং পুরো ব্যাপারটি উল্টোভাবে দেখি। একজন চালক নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত গাড়ি চালান। ঈদ মৌসুমে চালকেরা বিশ্রাম ছাড়াই একটানা গাড়ি চালিয়ে যান। এতে ক্লান্তি ঝিমুনি এবং মানবিক দুর্বলতার কারণে রাস্তায় দুর্ঘটনা ঘটে যায়। মালিক চাইলে এটি অনেকটাই রোধ করা সম্ভব।
যাত্রীকল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৫০ শতাংশের বেশি দুর্ঘটনার কারণ ও শিকার হচ্ছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও মোটরসাইকেল এবং ১৯ শতাংশ ক্ষেত্রে বাস দুর্ঘটনা। এগুলোর জন্য শেষ পর্যন্ত সরকারকেই দায় নিতে হয়। প্রত্যেকটি ব্যাপারে সরকার চাইলে আবার শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করে সবাইকে জবাবদিহিতার মধ্যে এনে রাশ টেনে ধরতে পারে। ‘সড়ক আইন-২০১৮’ বাস্তবায়নের পর্যায়ে এসে আমরা বিরাট বিশৃঙ্খলা দেখলাম। সরকার শক্তভাবে আইন কার্যকর করতে পারেনি। পরিবহন শ্রমিকদের নামে একশ্রেণীর রাজনৈতিক নেতাকে ড্রাইভিং আসনে দেখা গেল। সবাইকে দায়বদ্ধতার মধ্যে আনার ক্ষেত্রে রাজনীতিসংশ্লিষ্ট মালিক ও শ্রমিক নেতারা বিরাট বাধা হয়ে দাঁড়ালেন। সরকারকে দেখা গেল সড়কের নিরাপত্তার চেয়ে এই নেতাদের প্রতি বেশি দায়বদ্ধতা দেখাতে।
দেশের সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করতে হলে মালিক, শ্রমিক, সরকার ও জনসাধারণ সবার নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ভূমিকা প্রয়োজন। কিছু ব্যক্তির কাছে সড়ক পরিবহন আর জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। আমরা দেখেছি সড়ক নিয়ে আন্দোলনকারী ইলিয়াস কাঞ্চনের বিরুদ্ধে শ্রমিক নেতাদের অশালীন আস্ফালন। জনগণের নিরাপত্তার স্বার্থেই সরকারের কঠোর হওয়া উচিত। নতুন সড়ক আইন যথাযথভাবে কার্যকর করতে হবে। এ আইনে কোনো দুর্বলতা থাকলে প্রয়োজনে তার সংশোধন হতে পারে। ২০১৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ৮ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। এই ধারায় চলতে থাকলে এ বছরও আরো সাত থেকে আট হাজার বা তারও বেশি মানুষ হয়তো সড়কে প্রাণ দেবে। মৃত্যুর এ সংখ্যা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের চেয়ে কম নয়। এভাবে নির্বিকার থেকে মানুষের প্রাণ হারানোকে মেনে নেয়া কাম্য হতে পারে না। ছাত্ররা সে জন্যই ২০১৮ সালে ‘জাস্টিস’ বা সুবিচার চেয়ে রাস্তায় নেমে এসেছিল। আমরা চাই তাদের সেসব দাবি অবিলম্বে মেনে নেয়া হোক।

 


আরো সংবাদ



premium cement