২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
হাসপাতালগুলো তামাকমুক্ত নয়

আজো পদÿেপ নেয়া হয়নি কেন?

-

রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলো ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন’ মেনে চলছে না। বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বৃহত্তম এ নগরীর শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি হাসপাতালে ধূমপানসহ তামাকের ব্যবহার আজো চলছে অবাধে। ঢাকার বেশির ভাগ হাসপাতালে ‘ধূমপানমুক্ত এলাকা’ লেখা কোনো স্টিকার পর্যন্ত নেই। পত্রপত্রিকায়, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালিত জরিপের সূত্রে এ তথ্য উলেøখ করা হয়েছে। গত এপ্রিল মাসের এ জরিপের ফলাফল গত সপ্তাহে প্রকাশ করা হয়। প্রধানত সরকারি হাসপাতালে এ জরিপ পরিচালিত হয়েছে।
এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৬৫ শতাংশ হাসপাতালে দেখা গেছে, লোকজন তামাকসহযোগে পান খেয়ে হাসপাতালের ভেতরেই এখানে সেখানে পিক্ ফেলছে। আমাদের দেশের মানুষ আজো চিকিৎসার জন্য সাধারণত সরকারপরিচালিত হাসপাতালগুলোর ওপর নির্ভরশীল। ঢাকার এ ধরনের প্রায় অর্ধশত হাসপাতালের ৭১ শতাংশ হাসপাতালের ভেতরে, সিঁড়িতে, বারান্দায়, প্রবেশ ও বহির্গমন পথে, এমনকি আউটডোর ও ইনডোর বিভাগে, লোকজনকে প্রকাশ্যে সিগারেট টানতে দেখা যায়। প্রায় অর্ধেক হাসপাতাল কর্তৃপÿ এ মর্মে নোটিশ দেয়াকেও অপরিহার্য মনে করে না যে, ‘এ স্থান তামাকমুক্ত।’ আর যারা এ সতর্কবাণী দিয়ে থাকেন, তাদের অনেকেই এ ব্যাপারে আইন বা নিয়মরীতি মেনে চলেন না। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনে কী কী দিকনির্দেশনা মেনে চলার কথা রয়েছে, তা বেশির ভাগ হাসপাতালের জানা নেই আজো। বেশ কয়েকটি হাসপাতালের চত্বরে সিগারেটসহ তামাকজাত পণ্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। শতকরা ৮০ ভাগ হাসপাতালের মাত্র ১০০ মিটারের মধ্যেই সিগারেট কিংবা এ ধরনের তামাকজাত পণ্য বিক্রি করার দোকান আছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, ঢাকায় মাত্র ৬ শতাংশ হাসপাতাল তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পুরো মেনে চলছে।
ধূমপান, তথা ÿতিকর তামাক সেবনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে বিপুল প্রচারণা চলে আসছে। এ জন্য প্রতি বছর দিবস পালনসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এর পেছনে এ পর্যন্ত বিরাট অঙ্কের অর্থও খরচ হয়ে গেছে। সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠনও তামাক ব্যবহারের মারাত্মক ÿতির বিষয় নানাভাবে উপস্থাপন করে এ ব্যাপারে জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির কাজে নিয়ত তৎপর। কিন্তু অতীব দুঃখ ও উদ্বেগের সাথে বলতে হয়, বাংলাদেশে ধূমপায়ীসহ তামাকসেবীর সংখ্যা দিন দিন না কমে বরং বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে, ‘আধুনিক ও শিÿিত’ হিসেবে পরিচিত তরুণসমাজের মধ্যে ধূমপানের প্রবণতা এখন আগের চেয়ে বেশি। আর গ্রাম থেকে শহরÑ সর্বত্র সব শ্রেণীর মানুষের নানাভাবে তামাক সেবন তো আছেই। এ ÿেত্রে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কার্যকারিতা পরিলÿিত হয় না। এ ব্যাপারে মানুষের অজ্ঞতা ও অসচেতনতার চেয়েও কর্তৃপÿের উদাসীনতা ও আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নিষ্ক্রিয়তাই অধিক দায়ী বলে মনে করা যায়। দেশে বিড়ি-সিগারেটের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ হলেও সুকৌশলে এর প্রচার চালানো হয়। প্রকাশ্যে ধূমপানের জন্য জরিমানার বিধান থাকলেও সংশিøষ্ট দায়িত্বশীল লোকজনও অনেক সময় তা মেনে চলেন না। ফলে অন্যরা বেপরোয়া হয়ে ধূমপানসহ তামাক সেবনে উৎসাহ পাচ্ছে। তামাকের কারণে জাতির দৈহিক বা স্বাস্থ্যগত ÿতির মাত্রা অপূরণীয়। এতে জাতীয় অর্থনীতিও হয়ে থাকে বিরাট ÿতির শিকার। তদুপরি, গত কয়েক বছরে কয়েকটি জেলায় ফসলের জমিতে তামাক চাষের প্রতি প্রলুব্ধ করে সবার সর্বনাশ ডেকে আনা হচ্ছে। এমন প্রেÿাপটে, খোদ চিকিৎসালয় বা হাসপাতালে তামাকের ব্যাপক ব্যবহার অব্যাহত থাকা নিঃসন্দেহে গভীর উদ্বেগের কারণ।
আমরা আশা করি, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রয়োগ, কৃষিজমিতে তামাক চাষ না করা, মানুষের মধ্যে তামাকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টির নিয়মিত ও কার্যকর উদ্যোগ প্রভৃতি পদÿেপ নিয়ে সরকার জাতিকে বাঁচাতে আর বিলম্ব করবে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement