২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
চরমে পৌঁছেছে অবক্ষয়

পারিবারিক বন্ধনও শিথিল হচ্ছে

-

আমাদের সামাজিক অবক্ষয় চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। নৈতিকতার বাঁধন দিন দিন আলগা হয়ে যাচ্ছে। এই বাঁধন আর কাজ করছে না। বিভিন্ন ধরনের বিকৃতির ভয়াবহ বিস্তার ঘটেছে। মানুষের ভোগলিপ্সা মাত্রাতিরিক্ত জেগে উঠেছে। মাছের পচন শুরু হয় মাথা থেকে। জাতীয় জীবনে আমাদের যে অধোগতি সে জন্য কর্তৃত্বশালীদের দায় অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সব জায়গায় বস্তুগত উন্নতির জয়গান আমরা দেখতে পাচ্ছি। কেবল আয়-উন্নতি বাড়িয়ে বেশি করে ভোগ করার মধ্যে জীবনের অর্থ খোঁজার অপচেষ্টা লক্ষণীয় মাত্রায় বেড়ে গেছে। ফলে মানুষের মানবিক বোধবুদ্ধি ক্রমেই ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। মনোজগতে পাশবিকতার বিষবৃক্ষ শেকড় গজিয়ে এখন তা মহীরুহে রূপ নিয়েছে। ধর্ষণের প্রকোপ সীমাহীন বেড়ে গেছে।
বাংলাদেশে একশ্রেণীর মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি উল্লেখ করার মতো। উদ্বৃত্ত অর্থের সাথে সাধারণত তাদেরই বেশি সংযোগ হচ্ছে; যারা ক্ষমতার সাথে সংশ্লিষ্ট। বিশেষ করে সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাছে বিপুল অর্থের সংস্থান হচ্ছে। উদ্বৃত্ত অর্থ আয়ের সাথে নীতি-নৈতিকতার বালাই থাকছে না। অবৈধ উৎস থেকে আয় বা যেনতেনভাবে আসা অর্থ খরচের বিষয়েও মানুষ লাগামহীন হয়ে পড়ছে। খাওদাও আর ফুর্তি করোÑ এই হয়ে পড়েছে অনেকের যাপিত জীবন। ফলে মানুষ উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে পাশবিক সুখ খোঁজে। সমাজে ছড়িয়ে পড়া নানা অনিয়মের মূল কারণ ‘কালো অর্থনীতি’।
শুক্রবার একটি পত্রিকার খবরÑ রংপুরে ঘরে ঢুকে কলেজছাত্রী ধর্ষণ। অন্য একটি খবরে বলা হয়েছে, গাজীপুরে জন্মদিনের দাওয়াতে ডেকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা এখন দেশে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়ে। এসব ঘটনা এখন আর আমাদের ভাবিত করে না। মানুষের অনুভূতিও ভোঁতা হয়ে যাচ্ছে। এর আগের দিনের পত্রিকায় পাওয়া গেল মৌলভীবাজারে দুই বান্ধবীকে গণধর্ষণের খবর। দুই কলেজছাত্রী পরিচিত বন্ধুদের সাথে বেড়াতে যান। বন্ধুরা নির্জন স্থানে নিয়ে তাদের ধর্ষণ করে। সমাজে নারী-পুুরুষের অবাধ মেলামেশার একটি নির্ধারিত নিয়ম থাকা বাঞ্ছনীয়। নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব বিশেষ মুহূর্তে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। একটি সমাজে ভোগ যখন প্রাধান্য পায়, তখন সেখানে তরুণ-তরুণীদের মনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একই দিন স্বামীকে বেঁধে রেখে ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে। এ ছাড়া আরো চারজন ধর্ষিত হয়েছেন বলে একটি পত্রিকা সে দিন খবর দিয়েছে।
কামরাঙ্গীরচরে অন্য ধরনের একটি ধর্ষণের খবর প্রকাশ পেল। খবরে জানা গেল, ঋণগ্রস্ত বাবা নিজের মেয়েকে উঠিয়ে দিলো ধর্ষকের হাতে। খবর অনুযায়ী, ওই বাবা ছয় হাজার টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না। আবুল নামের ওই ধর্ষক এর পরিবর্তে তার মেয়ের সাথে প্রেম করার সুযোগ চায়। ধারের মাত্র ছয় হাজার টাকার বিনিময়ে মেয়েকে তিনি আবুলের কাছে তুলে দেন। ১৩ বছরের কিশোরীটিকে সে এক বছর ধরে ধর্ষণ করেছে। অবশেষে প্রতিবেশীর সহায়তায় ধর্ষকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বাবাকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ঘটনাটি আমাদের একটি ভয়াবহ বার্তা দিলো। তা হলো আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমতাভিত্তিক নয়। ফলে একজন মানুষ মাত্র ছয় হাজার টাকার জন্য নিজের কন্যাশিশুকে জঘন্য কাজের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। অন্য ব্যাপারটি হচ্ছে, পারিবারিক পর্যায়েই নারীদের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। নৈতিক বাঁধন আমাদের এতটাই ঢিলে হয়ে গেছে যে, আমরা নিজের মেয়ের ধর্ষণের বিনিময়ে অর্থনৈতিক লাভালাভ গুনছি।
একটি মানবিক সমাজ নির্মাণ যদি আমাদের লক্ষ্য হয়ে থাকে, তাহলে বলতে হবে সে দিকে আমরা এগোচ্ছি না। আমরা একটি চোখধাঁধানো কসমেটিক উন্নয়নের দিকে ধাবিত হচ্ছি। এর ফলে মানুষের একাংশের কাছে অর্থবিত্ত বাড়ছে। মানবিকতার বালাই না থাকায় সে অর্থবিত্ত সমাজে সৃষ্টি করছে অনাচার। অন্য দিকে, একদল লোক অর্থের অভাবে নিজেদের পরিবারের সর্বনাশ ডেকে আনতে কসুর করছে না। আমাদের উন্নয়ন লক্ষ্যকে তাই নতুন করে ঢেলে সাজাতে হবে। যে পথে অগ্রসর হচ্ছি তার রাশ টেনে ধরতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement