২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
সেচ প্রশিক্ষণে বিদেশে

অর্থের অপচয়

-

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় শুষ্ক মৌসুম ছাড়া এখানে পানির তেমন অভাব নেই। শুষ্ক মৌসুমেও পানিসঙ্কট হতো না, যদি উজানের দেশ অভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে পানি প্রত্যাহার না করত। ফলে দেশের পানিসম্পদ নিয়ে আমাদের ভাবতে হচ্ছে। তাই সুষ্ঠু পানিব্যবস্থাপনার প্রয়োজন জরুরি হয়ে পড়েছে। এই বিবেচনায় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করা অতীব জরুরি। সে জন্য প্রশিক্ষণও দরকার। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গভীর জ্ঞানই পারে স্বল্প সম্পদ কাজে লাগিয়ে সর্বোচ্চ সুফল বয়ে আনতে। এ ক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রয়োজন দেশীয় কলাকৌশলের যথাযথ ব্যবহার। পানির দেশ হওয়ায় সুদূর অতীত থেকে ভাটির দেশ বাংলাদেশে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় টেকসই জ্ঞান এ অঞ্চলের মানুষের সহজাতভাবেই থাকার কথা। তবে আমাদের মানসিক দৈন্য এমন পর্যায়ে পৌঁছেছেÑ প্রয়োজন হোক, না হোক যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। এমন দেখা গেছে, বিদেশে প্রশিক্ষণে বরাদ্দ না থাকায় অনেক প্রকল্প সামনে এগোয় না। নয়া দিগন্তের এক প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, একটি সেচ প্রকল্পের জন্য তিন দফায় বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে যাচ্ছেন ২৪ কর্মকর্তা। এটাকে বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা সফর বলা হয়েছে। যার জন্য খরচ ধরা হয়েছে এক কোটি ৬৮ লাখ টাকা। মাথাপিছু ব্যয় ধরা হয়েছে সাত লাখ টাকা। ২৫৭ কোটি টাকার এই প্রকল্পের বাধ্যতামূলক সম্ভাব্যতা যাচাই নিয়েও সন্দিহান খোদ পরিকল্পনা কমিশন। আমাদের অনেকের এই তথ্য অজানা যে, প্রায় পাঁচ শ’ বছর আগেও মুঘল আমলে এ দেশে নদীর গতিপথ ঠিক রাখতে পানিপ্রবাহে যাতে কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি না হয়; সে জন্য নৌরক্ষীরা দেখাশোনা করতেন। এটাকে এখনকার অনেক পানিবিশেষজ্ঞ বলছেন, সে আমলের পানিব্যবস্থাপনা। কিন্তু এই সময়ে এসে আমাদের সেচব্যবস্থাপনার জন্য বাইরে প্রশিক্ষণে যেতে হচ্ছে, যা জাতীয়ভাবে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াত্বের বহিঃপ্রকাশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে মুজিবনগর সেচ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, ২৫৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটি দেশের তিন জেলার ১৩টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। বৃহত্তর কুষ্টিয়া এলাকায় শুষ্ক মৌসুমে সেচকাজের ব্যবহার কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছেনি, যার কারণে আবাদযোগ্য অনেক জমি পতিত রয়েছে। এ অঞ্চলে এখনো বহু জমি সেচবহির্ভূত রয়েছে। তাই খাল পুনঃখনন ও প্রয়োজনীয় সেচ অবকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে ২৭ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানিনির্ভর সেচসুবিধা সম্প্রসারণ করতেই এ প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে। এতে করে ৬৫ হাজার ৬২০ টন খাদ্যশস্য ও শাকসবজি উৎপাদন এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কৃষকদের আধুনিক সেচপ্রযুক্তি প্রয়োগ সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করাই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। এর আগেও বৃহত্তর খুলনা-যশোর-কুষ্টিয়া সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন (প্রথম পর্যায়) ২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকায় বাস্তবায়ন হয়েছে। এ ছাড়া ১২৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে মুজিবনগর সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন শীর্ষক একটি প্রকল্পও বাস্তবায়ন হয়েছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, সেচব্যবস্থাপনার জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণে যাওয়া যতটা না প্রয়োজনে, তার চেয়ে প্রশিক্ষণের নামে সরকারি খরচে বিদেশ ভ্রমণের মওকাই অন্তর্নিহিত কারণ। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, গরিব দেশের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ অপচয়ের এই উদগ্র বাসনা কেন? সাদামাটা চোখে প্রতীয়মান হয়, এমন কর্মকাণ্ড আসলে পরোক্ষভাবে দুর্নীতি। টাকা আত্মসাৎ করা যাচ্ছে না, তাই বিনে পয়সায় অন্তত বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ হাতছাড়া করা কেন? সে জন্যেই সেচব্যস্থাপনার নামে যত ‘হাস্যকর’ প্রশিক্ষণই হোক না কেন; বিদেশে যেতে হবে। প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের নামে জনগণের অর্থের মতলবি এমন অপচয় বন্ধ করা হোক।


আরো সংবাদ



premium cement