এভাবে পরিবেশ রক্ষা করা যাবে না
- ১৭ জানুয়ারি ২০২০, ০০:০০
একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় পাশাপাশি দু’টি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। একটির শিরোনাম ‘পাঁচ জেলায় ৩৪৯টি ইটভাটা বন্ধ’। অন্যটির শিরোনাম হলো ‘উচ্ছেদের পরও ভাটায় পোড়ানো হচ্ছে ইট’। একই পৃষ্ঠার শীর্ষদেশে বড় একটি ছবি। নিচে ক্যাপশনে লেখা : ‘অভিযান চালিয়ে বন্ধ করে দেয়ার কয়েক দিন পর আবার চলছে ইট পোড়ানো।’ এ ছবি নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার। দেখা যাচ্ছে, ভাটায় ইট পুড়ছে আর কালো ধোঁয়া উঠছে একটি চিমনি দিয়ে।
ইটভাটার প্রচলন আগে থেকেই ছিল। তবে নির্মাণকাজের দ্রুত প্রসার এবং পরিবেশের ব্যাপারে অসচেতনতা মিলিয়ে গত কয়েক বছরে পরিবেশবৈরী অজস্র ইটভাটা বিশেষ করে রাজধানীর চার পাশসহ সারা দেশে অবাধে গজিয়ে উঠেছে। এতে আগে ব্যাপকভাবে পোড়ানো হতো বনজসম্পদ ধ্বংস করে বিভিন্ন গাছের গুঁড়ি। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের কড়াকড়িতে সাম্প্রতিককালে ইটভাটায় কয়লা ব্যবহারের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। কয়লা পরিবেশদূষণের একটি বড় উৎস। আর ব্যাপকভাবে এটাকে যখন ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসেবে নির্বিচারে ব্যবহার করা হয়, তখন পরিবেশ যে ধ্বংস হওয়ার পথই সুগম করা হচ্ছে, তা বলা নিষ্প্রয়োজন। বাংলাদেশে প্রকৃতি ও পরিবেশ ধ্বংসের যে তাণ্ডব চলছে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ এবং দায়িত্বসচেতনতার অভাবে, তাতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে ইটভাটায় অবৈধভাবে পোড়ানোর মাধ্যমে সৃষ্ট বাতাসে ক্ষতিকর নানা উপাদান।
আলোচ্য প্রতিবেদনে জানানো হয় যে, বৃহত্তর ঢাকার পাঁচটি জেলায় সাড়ে ৫ শ’রও বেশি অবৈধ ইটভাটার মধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ শ’টি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। হাইকোর্টে এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দিয়েছে সংশ্লিষ্ট অধিদফতর। ইটভাটার ব্যাপারে আইন মেনে না চলায় বৃহত্তর ঢাকা অঞ্চলে পাঁচ কোটি টাকার মতো জরিমানা করা হয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর উচ্চ আদালতের একই বেঞ্চ ঢাকা নগরী ও পাশের এলাকাগুলোতে বায়ুদূষণের কারণ ও প্রতিরোধসংক্রান্ত নীতিমালা তৈরি করার জন্য উচ্চ ক্ষমতার কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। একই সাথে আদেশ প্রদান করা হয়েছে, ঢাকা অঞ্চলের জেলা পাঁচটিতে অবৈধ সব ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যেই বন্ধ করে দেয়ার জন্য। এর বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন পেশ করার জন্য ৫ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারিত ছিল। সে প্রতিবেদন এক সপ্তাহ বিলম্বে হলেও দাখিল করা হয়েছে। বন্ধ করে দেয়া ইটভাটার মধ্যে সর্বাধিক ১৮৬টি গাজীপুর জেলায় এবং সর্বনিম্ন ৯টি মুন্সীগঞ্জের।
আলোচ্য খবরে অপর দিকে জানানো হয়েছে, লাইসেন্স না থাকা এবং পরিবেশ দূষিত করায় নারায়ণগঞ্জে বেশ কিছু ইটভাটা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্চ আদালতের নির্দেশে উচ্ছেদ করার পর কিছু ভাটায় আবার ইট পোড়ানো শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্য দিকে, পরিবেশ অধিদফতরের স্থানীয় উপপরিচালক জানান, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে নারায়গঞ্জ জেলায় ৭৯টি ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। বন্ধ করা হয়েছে ১০টি ভাটা, জরিমানা করা হয়েছে ৯৮ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। অবশ্য আদালতে মামলার দরুন ২০টি ইটভাটার ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়নি।’ এই সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, গতানুগতিক পদ্ধতিতে পরিচালিত ভাটাগুলো দীর্ঘ দিন পরিবেশ দূষিত করলেও উচ্চ আদালতে ভুল তথ্য দিয়ে তারা ইট পুড়িয়ে আসছে।
এ সপ্তাহে সরেজমিন দেখা গেছে, কোনো কোনো ইটভাটায় চুলায় কয়লা দেয়া হচ্ছে এবং সেই সাথে বিভিন্ন কাজ চলছে। শ্রমিকদের কাছ থেকে জানা যায়, উচ্ছেদ অভিযানের মাত্র তিন-চার দিন পরেই আবার ইট পোড়ানো শুরু হয়ে গেছে। একজন মালিকের দাবি, ভাটার অনুমতির আবেদন জানিয়ে এটা করা হচ্ছে। আরেক ভাটার মালিক জানান, লিখিত অনুমতি না থাকলেও মৌখিকভাবে প্রশাসনের অনুমোদন নেয়া হয়েছে ইট পোড়ানোর জন্য।
নিয়মিত অভিযান এবং তার ফলোআপ কার্যক্রমের কঠোরতা ছাড়া ইটভাটা বন্ধ করা, তথা পরিবেশদূষণ রোধ সম্ভব নয় বলেও সবাই মনে করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা