১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা

-

দেশজুড়ে হত্যা ও অস্বাভাবিক মৃত্যু বেড়েছে অনেক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থায় কোথাও কোথাও সাধারণ মানুষ আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। আইনের শাসনের ব্যত্যয় ঘটলে এমন প্রবণতা দিন দিন বাড়তে থাকে। সুশাসনের অনুপস্থিতি এর জন্য দায়ী। এটি কোনো সমাজ বা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর নয়। সমাজকে এ ধরনের প্রবণতা করে তোলে বিভীষিকাময়। তবে এ কথা মানতেই হবেÑ সাধারণ নাগরিকের মধ্যে আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা তখনই বেড়ে যায়, যখন তাদের মধ্যে বদ্ধমূল ধারণা জন্মায় যে, তারা ন্যায়সঙ্গত বিচার পাচ্ছেন না। নিজের হাতে আইন তুলে নেয়ার পেছনে যে মনস্তাত্ত্বিক কারণ কাজ করে, তা হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের কাছ থেকে আইনানুযায়ী যথাযথ কর্তব্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা। একই সাথে বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠলে দেশে বা সমাজে এই বিষবৃক্ষ শেকড় গেড়ে বসে। শেষ পর্যন্ত আইন হাতে তুলে নেয়ার বিষফল ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের দেশে আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এর সর্বশেষ একটি উদাহরণ হলো, গত সোমবার গরু চোর সন্দেহে গণপিটুনির শিকার হয়ে যশোরের অভয়নগরে তিনজন নিহত হয়েছেন। একই দিন কুমিল্লার চান্দিনায় এক চা-দোকানিকে হত্যা করে মহাসড়কে লাশ টুকরো টুকরো করে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টাকা ও মোবাইলের লোভে হত্যা করা হয়েছে একজনকে। ফরিদপুরে ৩২ মামলার আসামি এক যুবকের লাশ পাওয়া গেছে। অন্য দিকে, দিনাজপুরে পুলিশের সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দু’জন নিহত হয়েছেন। নয়া দিগন্তে গতকাল প্রকাশিত প্রধান প্রতিবেদনে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশবাসী অসহায়ভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন, সদ্যবিদায়ী বছরে দেশে ‘ছেলে ধরা’ গুজব ছড়ানো হলে বেশ কয়েকজন গণপিটুনির শিকার হয়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুবরণ করেন। তাদের করুণ মৃত্যু সবাইকে ভাবিয়ে তোলে। লক্ষণীয় বিষয় হলো, গুজব ছড়িয়ে দুর্বৃত্তরা অনেক সময় ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে তৎপর থাকে। সমাজে তারা অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করে নিজেদের হীনস্বার্থ চরিতার্থ করতে সচেষ্ট হয়। এটি রোধ করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। আইন হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সচেতন নাগরিকসমাজ উদ্বিগ্ন না হয়ে পারে না। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সাথে কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার ঘটনা কোনোভাবেই দেশের আইনশৃঙ্খলার অনুকূল নয়। ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, দোষীদের প্রচলিত আইনের আওতায় বিচারের মুখোমুখি করা দিন দিন দুরূহ হয়ে উঠছে। কিন্তু এতে দেশের আইনশৃঙ্খলার কতটুকু উন্নতি হয়েছে বা হচ্ছে, তা প্রশ্নসাপেক্ষই থেকে যাচ্ছে। অন্য দিকে, বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে দোষী হলেও ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার উপেক্ষিত হয়। অথচ বিচার পাওয়া প্রত্যেক নাগরিকের সংবিধানস্বীকৃত অধিকার। এই অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করার অর্থ, মানবাধিকার ভূলুণ্ঠিত করা। এটি কেউ সমর্থন করতে পারেন না।
বিচারবহির্ভূত হত্যার মাধ্যমে অপরাধ কমিয়ে আনা আদৌ সম্ভব কি না তা পর্যালোচনা করা জরুরি। দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যার পরও আমাদের সমাজে দিন দিন নানা অপরাধের মাত্রা বেড়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়। গত সোমবার ঘটে যাওয়া একই দিনের এতগুলো ঘটনাই এর বড় প্রমাণ। তাই এ কথা বলা অত্যুক্তি হবে না যে, আমাদের সমাজবাস্তবতায় সাধারণ নাগরিকরা আইন-আদালতের প্রতি এক ধরনের আস্থাহীনতায় ভুগছেন।
এ প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি, বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এলেই জনগণের মধ্যে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা বন্ধ করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে দেশে আইনের শাসন যথাযথভাবে প্রতিষ্ঠাই হচ্ছে একমাত্র পথ। এর কোনো বিকল্প নেই।


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল