১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ইরান পরিস্থিতি উত্তেজনাপূর্ণ

সংযত থাকতে হবে

-

আরো কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলা হচ্ছে ইরানকে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের ৪০ বছরের সুদীর্ঘ ও নির্মম অবরোধে এমনিতেই শ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে মুসলিম দেশটি। গত ৩ জানুয়ারি বাগদাদে মার্কিন ড্রোন হামলায় সে দেশের জেনারেল কাসেম সোলাইমানির নিহত হওয়া, এরপর ৮ জানুয়ারি ইরাকে দু’টি মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে প্রতিশোধমূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় ইরানের ওপর স্নায়বিক চাপ চরম পর্যায়ে। খুবসম্ভবত এই চাপ থেকেই ঘটে গেছে গুরুতর ‘মানবিক ভুল’। প্রতিশোধ গ্রহণের মাত্র দুই ঘণ্টার মধ্যে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রে ইউক্রেনের একটি যাত্রীবাহী বিমান ধ্বংস হয়েছে। বিমানটিতে ১৭৬ জন আরোহী ছিলেন, যাদের বেশির ভাগই ইরানি এবং ইরানি বংশোদ্ভূত কানাডীয় নাগরিক।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে নিয়ে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে ইরান। বলেছে, মানবিক ভুলের কারণেই এ ঘটনা ঘটেছে। যে ব্যাখ্যা দিয়েছে ইরানি বিমানবাহিনী, এতে বলা হয়েছে, রাডারে অত্যধিক সঙ্কেত পাওয়ায় মার্কিন হামলার শঙ্কা দেখা দিয়েছিল এবং ওই শঙ্কা থেকেই ‘ভুলটা ঘটে গেছে’।
এখন এ ঘটনা নিয়ে ইরানকে সম্ভাব্য সব উপায়ে কোণঠাসা করার চেষ্টা করবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। তার আলামত স্পষ্ট হয়ে গেছে তেহরানে ছাত্রদের বিক্ষোভে খোদ ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতের তাৎপর্যপূর্ণ উপস্থিতির ঘটনায়। ইউক্রেনের বিমান ধ্বংসের প্রতিবাদে দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এ বিক্ষোভ করছিল। বৈরী রাষ্ট্রে এ ধরনের বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মদদ থাকে, সেটা সবাই জানেন। কিন্তু একজন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রদূত স্বয়ং বিক্ষোভ সমাবেশে হাজির থাকেন, এমনটা অভাবিত বলতে হয়। এবার সেটাই ঘটেছে; আর এ থেকে তাদের বেপরোয়া ভাবটি প্রকাশ পেয়েছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূতকে আটক করে ফিরিয়ে এনেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইটে ইরানিদের সরাসরি উসকানি দিয়েছেন। তারা এখন ইরানের ক্ষমতাসীন নেতৃত্বের ওপর আঘাত হানার জন্য স্বদেশের মানুষের ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহুতি দিচ্ছেন।
দীর্ঘ ৪০ বছরের মার্কিন অবরোধে ইরানের অর্থনীতির অবস্থা অনেকটাই নাজুক। প্রতিরক্ষা প্রস্তুতি এবং মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থান ধরে রাখার জন্য দেশটিকে বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি খুবই সঙ্কটময়। সেই জটিলতার সুতোয় নতুন গিঁট লেগে গেল ইউক্রেনীয় বিমান ধ্বংসের ঘটনায়। অবশ্য একটি যুদ্ধপরিস্থিতির মধ্যে এ ধরনের ভুলের অনেক দৃষ্টান্ত আছে। ৩০ বছর আগে ১৯৮৮ সালে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের একটি যুদ্ধজাহাজ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ধ্বংস করা হয়েছিল ইরানের একটি বেসামরিক বিমান। ওই বিমানের ২৯০ জন আরোহীর সবাই তখন নিহত হন। এ ঘটনায় ইরানকে প্রায় ১৩২ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এত বড় ঘটনার দায় কখনো স্বীকার করেনি। সে ক্ষেত্রে ইরান ভুল স্বীকার করে বরং সততা ও আন্তরিকতার পরিচয় দিয়েছে। এটি অভ্যন্তরীণ ক্ষোভ প্রশমনে কার্যকর হতে পারে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মতো শত্রুদেশ ইরানের ‘অনিচ্ছাকৃত’ ভুলকে ‘ইচ্ছাকৃত’ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করবেই। যুক্তরাজ্যভিত্তিক থিংকট্যাংক রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক জাস্টিন ব্রঙ্ক বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইউক্রেনের বিমান বিধ্বস্ত করার কোনো যৌক্তিক কারণ ইরানের নেই।
তেহরানের স্বীকারোক্তির পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ইরানের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক ক্ষমা প্রার্থনা, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেয়া, তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছেন। তার আরেকটি দাবি হলো, ‘বিচার নিশ্চিত করতে আমাদের ৪৫ জন বিশেষজ্ঞকে দুর্ঘটনার তদন্তে প্রবেশাধিকার ও সহযোগিতা দিতে হবে।’ কিন্তু ইউক্রেনীয় বিশেষজ্ঞের নামে ইরানের কোনো বৈরী দেশের বিশেষজ্ঞ ইরানে ঢুকে পড়ার সুযোগ নেন কি না, সে বিষয়ে ইরানিদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। সেই সাথে সতর্ক থাকতে হবে যেন উত্তেজনাবশে নতুন কোনো ভুল তাদের না ঘটে। আমাদের বিশ্বাস, ঠাণ্ডা মাথায় ঘটনাবলি বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করেই কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হবে, যাতে ইরানের বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা বজায় থাকে।

 


আরো সংবাদ



premium cement