২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দুর্নীতির বিরুদ্ধে বলায় কারাগারে

সরকারের অবস্থান অস্পষ্ট

-

দুর্নীতির ব্যাপারে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট নয়। মানুষ বাইরে থেকে দেখেছে ঢাকার গুটিকয় ক্যাসিনো ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে ঝড়ের গতিতে পুলিশি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেটা আবার দ্রুততার সাথে থেমেও গেছে। এখন দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে আর কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হচ্ছে না। ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারদলীয় প্রার্থীদের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতি অনিয়ম ও সন্ত্রাসের মতো অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে সরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে দুর্নীতির অভিযোগের অন্ত নেই। কয়েক বছর ধরে দুর্নীতির খবর সংবাদমাধ্যমে ধারাবাহিক প্রকাশিত হয়েছে। বালিশ, পর্দার কাপড়, চেয়ার, টেবিল, খাল ও নদী খনন নিয়ে দুর্নীতির অঙ্ক সাগরচুরিকে ছাড়িয়ে গেছে। এগুলো কারা করছেন তা সরকারের অজানা নয়। নয়া দিগন্তের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, একজন সংসদ সদস্যের ব্যাপারে পত্রিকায় প্রকাশিত দুর্নীতির সংবাদ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় এক ইউপি চেয়ারম্যানকে আটক করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি হলে এমনটি হওয়ার কথা নয়।
প্রকাশিত খবরে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ-৫ (নিকলী-বাজিতপুর) আসনের সংসদ সদস্য মো: আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে পত্রিকায় দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। দেশের দুটো জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবর দুটোর শিরোনাম ছিল যথাক্রমেÑ ‘দুদকের নজরদারিতে এমপি আফজাল : স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে’ এবং ‘দুই ভাইয়ের ত্রাসের রাজত্ব’। এসব সংবাদ সিংপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হক তার ফেসবুক আইডি থেকে শেয়ার দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ছাত্রলীগের স্থানীয় এক নেতা ৮ জানুয়ারি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নিকলী থানায় মামলা দায়ের করেন। চেয়ারম্যান আনোয়ারুল হকের সাথে তার ছেলে ও আরো একজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পর ওইদিন রাতেই তাকে রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। কিশোরগঞ্জের আদালতের মাধ্যমে তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়।
খবর অনুযায়ী, গ্রেফতার হওয়া ওই ইউপি চেয়ারম্যান নিজে থেকে কোনো খবর দেননি। জাতীয় পত্রিকা কোনো দুর্নীতির খবর প্রকাশ করলে তা সেটা যাচাই-বাছাই করে। নিজস্ব সূত্রের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েই কোনো দুর্নীতির খবর সংবাদপত্র ছেপে থাকে। এরপরও অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনে তার বক্তব্য নেয়া হয়। পত্রিকা যদি যথাযথ তথ্য প্রমাণ ছাড়া কারো বিরুদ্ধে কোনো সংবাদ প্রকাশ করে, তাহলে সেই গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আইনি অনেক সুযোগ রয়েছে। আমরা জানি না কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সংশ্লিষ্ট পত্রিকার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিয়েছেন কি না। কিন্তু তার দুর্নীতির ওপর প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকার খবর ফেসবুকে পোস্ট করে একজন চেয়ারম্যানকে কারাগারে যেতে হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার নিয়েও অনেক কথা ইতোমধ্যে হয়েছে। আইনটি অন্যায়ভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে কি না তা সরকারের খেয়াল রাখা প্রয়োজন। যাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে তিনি নিজেও বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের একজন পদাধিকারী।
গত এক দশকে আমরা শুধু বড় বড় দুর্নীতির সংবাদ পেয়েছি। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর অবস্থান দেখতে পাচ্ছি না। সম্প্রতি ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের ব্যাপারে অনেকের ধারণা, কেবল লোক দেখানোর জন্যই এই অভিযান চালিয়েছে সরকার। কারণ বড় বড় অপরাধীকে নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখছি আমরা। এমন এক অবস্থায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, সরকারদলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হচ্ছেন, তারাও রোষানলে পড়ছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে সরকারদলীয় লোকজনও নিরাপদ নয়। এ অবস্থায় দুর্নীতির ব্যাপারে সরকারের কী অবস্থান সেটা ধোঁয়াশাই রয়ে গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement