২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নদী দখল-দূষণ রোধ

আইনের সংশোধন প্রয়োজন

-

বাংলাদেশে এখনো আর্থ-সামাজিক পটভূমিতে নদ-নদীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তবতা হচ্ছেÑ দেশের প্রায় প্রতিটি নদ-নদী দখল-দূষণে বিপর্যস্ত। ইতোমধ্যে দেশের মানচিত্র থেকে ১২টি নদী সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে গেছে। অনেক নদীই মৃতপ্রায়। সেগুলো ক্ষীণ ধারায় প্রবহমান। এমন প্রেক্ষাপটে উচ্চ আদালত তুরাগ ও দেশের অন্যান্য নদীকে জীবন্তসত্তা হিসেবে দেখতে একটি রায় দিয়েছেন। দেশের নদ-নদী রক্ষায় নিঃসন্দেহে এই রায় একটি মাইলফলক। আদালতের নির্দেশে জাতীয় নদীরক্ষা কমিশনকে দেশের সব নদ-নদীর অভিভাবকত্ব দিয়ে দেখাশোনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গত বছরের ২৯ জানুয়ারি নদীদূষণকে ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে ঘোষণা দেয়া এবং অপরাধীদের আরো কঠোর শাস্তি দেয়ার কথা বলেছেন হাইকোর্ট। এর আগে নদী কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনে সারা দেশে ৪৯ হাজার ১৬২ জনের নামে নদী দখলের অভিযোগ করা হয়। প্রতিবেদন মতে, পানি উন্নয়ন বোর্ড এখনো দেশের সব প্লাবন ভূমি শনাক্ত করতে পারেনি। ফলে বিনা বাধায় চলছে কলকারখানা এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অবৈধভাবে জমি বরাদ্দ। নদীর বুক থেকে অবৈধ অবকাঠামো অপসারণ করতে ভ্রাম্যমাণ আদালত নিয়ে অভিযান পরিচালনা করার ক্ষমতা কমিশনকে দেয়া উচিত বলেও প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে।
নদ-নদী দখল-দূষণমুক্ত করতে নদীরক্ষা কমিশন আদালতের নির্দেশে সারা দেশে প্রথম দফায় অভিযান চালায়। কিন্তু নদী রক্ষার বর্তমান আইন অত্যন্ত দুর্বল ও ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় উচ্ছেদ অভিযান কিছুতেই সফল হচ্ছে না। আইনে নদীরক্ষা কমিশনকে অভিযান পরিচালনার ক্ষমতা দেয়া হলেও অপরাধীর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার বিধান নেই। এতে করে অপরাধীরা বারবার একই অপরাধ করলেও আইনি দুর্বলতার কারণে পার পেয়ে যাচ্ছে। যার ফলে কমিশনের কাজে সফলতা আসছে না। হাত-পা বেঁধে পানিতে সাঁতার কাটতে দিলে যা হয়; কমিশনের অবস্থাও এখন হয়েছে তেমনি। ত্রুটিপূর্ণ আইনে দখল-দূষণ থেকে নদী রক্ষায় পরিচালিত প্রথম দফা অভিযান বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হচ্ছে, আইনের সংশোধন না হলে দ্বিতীয় দফা অভিযানেও সফলতা আসবে না। তাই আইন সংশোধন করে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী নদী রক্ষায় অভিযান পরিচালনা করা সময়ের দাবি। তা না হলে আকাক্সক্ষার ‘মুক্ত নদীপ্রবাহ’ অধরাই থেকে যাবে। আইনের দুর্বলতা ছাড়াও উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সরঞ্জাম ও আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে অভিযান হোঁচট খাচ্ছে। নদী দখল করে রেখেছেন অনেক প্রভাবশালী। এসব নদী উদ্ধারে গেলে দখলদাররা নদীর জায়গা নিজেদের বলে দাবি করেন। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে সেসব জায়গা পরিমাপ করতে না পারায় চূড়ান্ত কোনো পদক্ষেপ নেয়া যায় না। আইনের মারপ্যাঁচে অপরাধীরা পার পাচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় সমন্বিত প্রযুক্তি ব্যবহার দরকার। কারণ প্রযুক্তির ব্যবহার করতে পারলে কারো পক্ষে অবৈধভাবে নদীর জমি নিজেদের বলে দাবি করা সম্ভব হবে না।
নদী দখল ফৌজদারি অপরাধ হলেও বর্তমান আইনে দূষণকারীরা শুধু জরিমানা দিয়েই পার পেয়ে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দূষণকারীদের কেবল জরিমানা না করে ক্ষেত্রবিশেষে কারাদণ্ড দেয়ার বিধান রাখা হলে দূষণ অনেকাংশে কমে আসবে। নদী দূষণকারীরা বড় বড় শিল্পকারখানার মালিক হওয়ায় নতুন আইনে নিশ্চিত করতে হবে যে, নদী দখল-দূষণের মতো জঘন্য কাজে যারা লিপ্ত, তাদের কারাগারে যেতে হবে। বিচারের মুখোমুখি হয়ে আইনের আওতায় শাস্তি পেতে হবে। এ জন্য সার্বিক বিবেচনায় নদ-নদী দখল ও দূষণমুক্ত করতে বর্তমান আইনের সংশোধনী এনে কঠোর বিধান প্রণোয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। নদী দখল-দূষণ রুখতে না পারলে আমাদের সবাইকে এর চড়া মূল্য দিতে হবে, কথাটি সরকারের দায়িত্বশীলদের মনে রাখা দরকার। কারণ তারাই জনগণের হয়ে অন্যায়কারীদের রুখতে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ।


আরো সংবাদ



premium cement