২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বিজয় দিবসের ডাক

বিভেদের দেয়াল সরে যাক

-

আজ ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় দিবস। আজকের এই দিনে বিশ্বের বুকে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতা আসে। জাতির একদল সাহসী নাগরিক অগ্রভাগে থেকে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়ে বিজয় নিশ্চিত করেছেন। তাদের সাহস ও শক্তি জুগিয়েছেন দেশের মুক্তিকামী প্রায় সাত কোটি মানুষ। বিপুলসংখ্যক মানুষের আত্মবলিদানের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হতে আর দুই বছর বাকি। এই দীর্ঘ সময়ে বিশ্বের বুকে দেশটির অবস্থান কোথায়, সেটি মূল্যায়নের সময় এসেছে।
প্রায় পাঁচ দশকে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক খাতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতের অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। উন্নয়নের কিছু কিছু সূচক বৈশ্বিক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তবে বৈষম্য হ্রাস করে একটি সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র অর্জনের ক্ষেত্রে আমরা এখনো পিছিয়ে রয়েছি। গ্রাম ও শহরের জীবনযাত্রায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশে বড় বড় শহর গড়ে উঠেছে। এগুলোতে চোখ ধাঁধানো উঁচু উঁচু ভবনের সমাহার। বিশেষ করে ঢাকার কথা উল্লেখ করতে হয়; এটি এখন দুই কোটির বেশি মানুষের বসবাসের শহর। চোখ ধাঁধানো উন্নয়ন চমকে যাওয়ার মতো। অন্যান্য শহরেও এমন উন্নয়নের ব্যাপক উপাদান দেখা যাবে। গ্রামেও এর ছোঁয়া লেগেছে। বদলে গেছে গ্রামের পরিবেশ। বাইরের এমন চাকচিক্য দেখে মনে হতে পারে, বাংলাদেশ একটি ধনী দেশ না হোক মধ্যম মানের দেশে পরিণত হয়েছে। বাস্তবে এমনটি হয়নি।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের প্রথম বাজেট ছিল ৭৮৬ কোটি টাকার। এর বিপরীতে আমরা যদি সাম্প্রতিক বছরগুলোর জাতীয় বাজেট দেখি আশ্চর্য না হয়ে পারা যাবে না। ২০১৮-১৯ সালে সংসদে চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট পাস হয়। ২০১৯-২০ সালের চলতি বাজেট পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার। টাকার অঙ্কে আমাদের আর্থসামাজিক চিত্র দেখে মনে হতে পারে, এ দেশে উন্নয়নের বিপুল জোয়ার বয়ে গেছে। বাস্তবে এখনো মানুষের মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য। এখনো দেশে রয়েছে অনাহারি মানুষ। অন্য দিকে মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে সম্পদ পুঞ্জীভূত হয়েছে। ফলে অর্থনীতির আকার বেড়েছে, কিন্তু সেটি সব মানুষের জন্য সমান উন্নয়ন বয়ে আনতে পারেনি। এর বদলে বড় বড় দুর্নীতি অনেক বেড়েছে।
রাজনীতি ও প্রশাসনে গণতন্ত্রচর্চায় আমরা অনেক পিছিয়ে রয়েছি। বিশেষত রাজনৈতিক বিভাজন এখন প্রকট। সব মতপথের মানুষের জন্য সমান ব্যবস্থা করা যায়নি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করতে পারেনি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিকশিত হয়ে ওঠেনি। মানবাধিকার নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। জনগণ সেবা গ্রহণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো নিরপেক্ষ অবস্থান পান না। তবে জনগণের মধ্যে সচেতনতা আগের চেয়ে বেড়েছে। জনগণ তাদের অধিকার নিয়ে আরো সোচ্চার হলে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও তাদের পক্ষে অবস্থান নেয়ার সুযোগ হবে আশা করা যায়।
স্বাধীনতাকামী মানুষ একটি চেতনা নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। আজ সেই চেতনাকে স্মরণের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা দেখেছি, প্রায় একই সময় পাড়ি দিয়ে অনেক দেশই উন্নতির শিখরে পৌঁছে যেতে পেরেছে। তারা নির্মাণ করতে পেরেছে একটি বিকশিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা। এশিয়ায় এমন অনেক দেশ রয়েছে। সমৃদ্ধ একটি দেশ প্রতিষ্ঠা আমাদের পক্ষেও সম্ভব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কাগজ-কলমে আটকে না রেখে, সেটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে তা করা যেতে পারে। সে জন্য দরকার জাতীয় ঐকমত্য। ফেলে দিতে হবে বিভেদের সব দেয়াল। তৈরি করতে হবে সাম্য।


আরো সংবাদ



premium cement