১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ব্যাংকঋণের সুদের হার

বিশেষ সুবিধা তুলে নেয়া উচিত

-

দেশের আর্থিক খাতের কার্যক্রমে সুষ্ঠুতা আনা যাচ্ছে না। সরকারি খাতের একেকটি প্রতিষ্ঠানে যেভাবে লুটপাটের রাজত্ব চলছে, তার প্রমাণ রূপপুরের বালিশ কাণ্ড থেকে শুরু করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কুরআন ছাপানোর মতো বিভিন্ন প্রকল্পে পুকুরচুরির ঘটনায় প্রমাণিত। ব্যাংকগুলোতে ঋণদানের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটের ঘটনাও এখন পুরনো। সেই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। ঋণখেলাপিদের নানা রকম সুবিধা দিয়ে উৎসাহিত করার প্রক্রিয়াও বন্ধ হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে সরকারের ঘোষণার পরও তা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, এমনটি কেউ বলছেন না। কিন্তু এই খাতে অরাজকতা বন্ধ করা না গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা কঠিন হবে এবং তা জাতির জন্য আত্মঘাতী হবে; বিশেষজ্ঞরা বারবার সেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন।
সর্বশেষ জানা যাচ্ছে, ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছ থেকে বিশেষ সুবিধা আদায় করেছে সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা। এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত দেড় বছরে এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়নের কথা বলে ব্যাংকগুলো যে সুযোগ সুবিধা নিয়েছে, তার পরিমাণ সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা। অথচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বাইরে মাত্র দু-একটি বেসরকারি ব্যাংক এক অঙ্কের সুদহার বাস্তবায়ন করেছে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যের বরাত দিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র দেড় বছরে ব্যাংকগুলোর নেয়া বিশেষ সুবিধার এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে আরেকটি পদ্মা সেতু প্রকল্প (প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা) কিংবা মেট্রোরেলের (২২ হাজার কোটি টাকা) মতো আরেকটি জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অথবা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (১২ হাজার কোটি টাকা) মতো দু’টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেত।
সরকার জনগণ তথা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ব্যাংকঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়। এ জন্য সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও বারবার অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয় এবং সে অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়। সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার শর্ত হিসেবে ব্যাংকগুলো তথা বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) সরকারের কাছে কিছু বিশেষ সুবিধা দাবি করে। দাবি মেনে সরকার তাদেরকে বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছে।
পত্রিকার প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত দেড় বছরে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক দফায় দফায় ৯টি সুবিধা দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে। কিন্তু সরকারি ব্যাংক এবং কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক ছাড়া বাকিগুলো ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামায়নি। সুদহার এক অঙ্কে না এলেও ৯টি সুবিধার চারটিতেই ব্যাংকগুলো ২৫ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা পেয়েছে। ব্যাংকগুলো যে চারটি বিশেষ সুবিধার আওতায় সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকা নিজেদের পকেটে পুরেছে সেগুলো হলোÑ করপোরেট করহার কমানো, নগদ জমা সংরক্ষণ হারে সুবিধা, কৃষি খাতে রক্ষিতব্য সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণের হারে সুবিধা এবং গৃহায়ন খাতে রক্ষিতব্য সাধারণ প্রভিশন সংরক্ষণ হারে সুবিধা। এই চারটি সুবিধার কোন খাতে ব্যাংকগুলো কত টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, তারও সবিস্তার তুলে ধরেছে পত্রিকাটি।
এ ছাড়াও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সরকারি তহবিল জমার হার বাড়ানো, পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত থাকার মেয়াদ ও একক পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো, ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টে ১০ বছর মেয়াদে পুনঃতফসিল এবং ঋণ শ্রেণীকরণ নীতিমালা শিথিল করার মতো বেশ কিছু সুবিধা দিয়েছে সরকার। এসব সুবিধা ব্যাংকগুলোর কার্যক্রমে গতিশীলতা এনেছে, এমনটি কেউই মনে করেন না; বরং কোনো কোনো সুবিধা পুরো ব্যাংক খাত বিকাশের অন্তরায় বলেও মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। সব রকম সুবিধা নেবেন, কিন্তু সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনবেন না, এটা রীতিমতো অন্যায় এবং অনৈতিক।
সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রী একটি কমিটি গঠন করেছেন। কমিটির সুপারিশের আলোকে প্রয়োজনে সরকারের কঠোর হওয়া দরকার আছে বলে মনে করি। ব্যাংকগুলোর সুবিধা তুলে নিয়ে বরং খেলাপি ঋণ কমানোর দিকে মনোযোগ দিলে সুদহার এমনিতেই কমে আসতে পারে বলেও মনে করেন কেউ কেউ।


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাকায় কাতারের আমিরের নামে সড়ক ও পার্ক তেহরানের প্রধান বিমানবন্দরে পুনরায় ফ্লাইট চালু হামলায় কোনো ক্ষতি হয়নি : ইরানি কমান্ডার ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ‘কেন্দ্র’ ইস্ফাহান : সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা মিয়ানমারের বিজিপির আরো ১৩ সদস্য বাংলাদেশে রুমায় অপহৃত সোনালী ব্যাংকের সেই ম্যানেজারকে চট্টগ্রামে বদলি দুবাইয়ে বন্যা অব্য়াহত, বিমানবন্দর আংশিক খোলা ভারতে লোকসভা নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শুরু শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ শুক্রবার সকালে ঢাকার বাতাস ‘সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর’ ১৪ বছরেও হত্যাকাণ্ডের বিচার পায়নি এসআই গৌতম রায়ের পবিবার

সকল