২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`
উঠছে না উৎপাদন খরচ

ধানের দামে হতাশ কৃষক

-

আমন ধানের ফলন ওঠার মৌসুমে দেশে ধানের দাম কমে গেছে। চলতি আমন মৌসুমের ধানকাটা বেশ কিছু দিন আগে শুরু হলেও ধানের বাজারদর ক্রমেই নিম্নমুখী। ফলে দেশে আমন ধানের ভালো ফলন হলেও কাক্সিক্ষত দাম পাচ্ছেন না ধানচাষিরা। দাদন এবং মহাজনদের থেকে ঋণ করে হাড়ভাঙা পরিশ্রমে শস্য ফলান চাষিরা। আমন ধান কাটার শুরুতেই বহু কৃষক উঠান থেকে উৎপাদন খরচের কমে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। নতুন আমন ধান বাজারে আসার আগে যে দাম ছিল, তার চেয়েও কম দামে এখন বেচাকেনা হচ্ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে, এক মণ আমন ধান বিক্রির টাকায় মাত্র তিন কেজি পেঁয়াজ কেনা যাচ্ছে। বর্তমান বাজার দরে উৎপাদন খরচ অনুযায়ী প্রতি মণে কমপক্ষে ২০০ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
যে দামে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক, সেই দর উৎপাদন খরচের তুলনায় কম। দেশের নানা প্রান্ত থেকে খবর পাওয়া যাচ্ছে, ধানের দাম কমে যাওয়ায় কৃষককুল হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন। চলতি বছর বোরো মৌসুমেও ধানে লোকসান গুনতে হয়েছে কৃষককে। ওই সময় ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে পাকা ধানক্ষেতে আগুন লাগিয়ে প্রতিবাদ জানানোর ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া রাস্তায় ধান ঢেলে অভিনব কায়দায় প্রতিবাদ জানানো হয়।
আমন মৌসুমে এবার সরকার প্রতি কেজি ২৬ টাকা এবং প্রতি মণ ধানের দর এক হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ করেছে। একজন কৃষকের কাছ থেকে এক টন করে ধান কেনা হবে। তবে সব কৃষক ওই সুবিধা পাচ্ছেন না। সরকারি গুদামে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা হলেও তা দেয়াটা কঠিন। এ ছাড়া বরাদ্দের পরিমাণও কম। এই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছেন ফড়িয়ারা। তারা ধানের দাম বলছেন মণপ্রতি ৫৫০-৬৫০ টাকা। অসহায় চাষিকে ওই দামেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে। গেল বছর একই সময় প্রতি মণ আমন ধানের দর ছিল ৮০০-৮৫০ টাকা।
মাঠপর্যায়ের চাষিদের কাছ থেকে জানা যায়, এবার এক মণ ধান উৎপাদনে বীজ বপন থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত খরচ দিনমজুরি ও সার-কীটনাশকসহ ৭০০ টাকার মতো। প্রতি মণ ধান কমপক্ষে এক হাজার টাকায় বিক্রি হলে ধানচাষিদের কিছুটা লাভ থাকে। বর্তমানে বাজারদর উৎপাদন খরচের তুলনায় কম। ফলে কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে। মাঠপর্যায়ে কৃষকের বিঘাপ্রতি ধান আবাদে খরচ পড়েছে ১০-১২ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে কৃষক এক বিঘা জমিতে উৎপাদিত ধান বিক্রি করতে পারছেন ৮-৯ হাজার টাকায়। ফলে চাষিদের লোকসান গুনতে হচ্ছে বিঘাপ্রতি দুই থেকে তিন হাজার টাকা। ধান মজুদ করতে পারলে চাষিরা হয়তো কিছুটা লাভবান হতেন; কিন্তু সেই উপায় না থাকায় কৃষককে পানির দরেই ধান বিক্রি করতে হচ্ছে।
শঙ্কার কথা হচ্ছে, প্রতি বছর লোকসান দিয়ে চাষিরা আর কত দিন ধান চাষ করবেন? উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম না পেলে কৃষকরা ধান আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। লোকসানের মুখে একসময় তাদের ধান চাষে বিমুখ হওয়াই স্বাভাবিক। বাধ্য হয়ে টিকে থাকার তাগিদে আগামীতে ধানের পরিবর্তে লাভজনক শস্য চাষ করবেন কৃষক। ধানের আবাদ কমে গেলে আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হবে। আমাদের খাদ্যে স্বয়ংস¤পূর্ণতার দাবি তখন মুখ থুবড়ে পড়বে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য সুখকর হবে না। তাই সময় থাকতেই ধানসহ কৃষকের উৎপাদিত সব শস্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকারকে বাস্তবতার আলোকে পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে কৃষি খাতে ভর্তুকি দিয়ে হলেও দেশের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যশস্য উৎপাদন স্থিতিশীল রাখতে হবে। আর তাৎক্ষণিকভাবে ধানের দর যেন উৎপাদন খরচের চেয়ে কোনোভাবে কম না হয়, সে জন্য বাজারে সরকারের কঠোর নজরদারি থাকতে হবে, যাতে কৃষককে লোকসান গুনতে না হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement