২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
সীমান্ত হত্যা

অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে

-

সীমান্তে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশীদের হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। একের পর এক হত্যার ঘটনা ঘটছে আর ভারত কেবল মৌখিক আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। গত সোমবার শেরপুর জেলার সীমান্তে দুই বাংলাদেশীকে গুলি করে হত্যা করেছে বিএসএফ। এ ঘটনায় নিয়মমাফিক পতাকা বৈঠক হয়েছে। সে বৈঠকে বিজিবির ভাষায় ‘তীব্র প্রতিবাদ’ এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। বিএসএফও স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্যে ঘটনার জন্য ‘দুঃখ প্রকাশ’ করে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনায় আরো সতর্কতা অবলম্বন করা হবে বলে ‘আশ্বস্ত’ করেছে বিজিবিকে।
সীমান্তে হত্যা নিয়ে বিএসএফের এই আশ্বস্ত করা আর বিজিবির আশ্বস্ত হওয়া যেন একধরনের বালখিল্যে পরিণত হয়েছে। এর কারণ বাংলাদেশের নেতৃত্বের দুর্বলতা। সরকার যেন ধরেই নিয়েছে, ভারত বড় দেশ, বড় শক্তি, তাদের সাথে সমমর্যাদার ভিত্তিতে বসবাসের অবস্থা বাংলাদেশের নেই। তাই অবনত হয়েই চলতে হবে। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য-বিবৃতি থেকে এমন মনোভাবের আভাস পাওয়া যায়। তিনি সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যার ঘটনা কমিয়ে দেখানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। গত ১১ জুলাই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে পরিসংখ্যান দিয়ে বলেছিলেন, ২০০৯ সাল থেকে গত ১০ বছরে বিএসএফের হাতে ২৯৪ জন বাংলাদেশী নিহত হয়েছেন। তবে হত্যার ঘটনা ‘কমে আসছে’ বলে উল্লেখ করে তিনি জানান, ২০১৮ সালে নিহতের সংখ্যা তিনে নেমে আসে। তবে এ তথ্য সত্য নয়। বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র বা আসকের হিসাবে ২০১৮ সালে সীমান্তে নিহত বাংলাদেশীর সংখ্যা ১৪। শক্তিশালী কোনো দেশের অপরাধ খাটো করে দেখানোর অর্থ হলো নিজ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে খর্ব করা।
সীমান্তে বিএসএফের নির্বিচার হত্যা মোটেই কমেনি, বরং আরো বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠন আসক ও অধিকার-এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৮ জন বাংলাদেশী। আরো দু’জন বিএসএফের নির্যাতনে মারা গেছেন বলে আসকের এক প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে গত ১০ মে সাতক্ষীরার কুশখালী সীমান্তের কাছে কবিরুল ইসলাম নামের একজনকে পায়ুপথ ও মুখে পেট্রল ঢেলে হত্যা করা হয়, যা পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমেও প্রকাশ পেয়েছে। আসকের তথ্য অনুযায়ী, এই ছয় মাসে সীমান্তে আহত হয়েছেন পাঁচজন এবং অপহরণের শিকার হন ১৯ জন। এর মধ্যে গত ২৭ মে নওগাঁর সাপাহার সীমান্তে আজিম উদ্দিন নামের এক বাংলাদেশী রাখালের দুই হাতের ১০ আঙুলের নখই উঠিয়ে নেয়া হয়। অস্বীকার করার উপায় নেই, সীমান্তে চোরাচালানিরা সক্রিয়; কিন্তু ওদের গুলি করে মেরে ফেলতে হবে, এমন কোনো আইন কি আছে? আইন অনুযায়ী, চোরাচালানিকে ধরতে পারলে স্থানীয় বেসামরিক প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। প্রশাসন তাদের বিচার করবে। চোরাচালানি বা অবৈধভাবে সীমান্ত পেরোনো কাউকে গুলি করে মারার এখতিয়ার বিশ্বের কোনো দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নেই। তাই বিএসএফেরও নেই। কিন্তু তারা বাংলাদেশ সীমান্তকে বিশ্বের সবচেয়ে প্রাণঘাতী সীমান্তে পরিণত করেছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতিই এর একমাত্র কারণ বলে জনগণ মনে করে।
গত জুন মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সম্মেলনে ভারতীয় পক্ষ দাবি করেছিল, বিএসএফ সদস্যরা ‘প্রাণ বাঁচাতে’ মারণাস্ত্র ব্যবহার করে। এই দাবি নিঃসন্দেহে সত্যের অপলাপ। বিএসএফ কারো হাতে সশস্ত্র হামলার শিকার হয়েছে, এমন ঘটনা অতি বিরল। বরং আমাদের সীমান্তের ভেতরে অনুপ্রবেশ করে বিএসএফ বাংলাদেশী নাগরিকদের ধরে নিয়ে গিয়ে পরে লাশ ফেরত দিয়েছে, এমন দৃষ্টান্ত অনেক। মোট কথা, ভারতের এই আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং তা অবিলম্বে বন্ধ হতেই হবে। সীমান্ত হত্যা শুধু কমানো নয়, সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। আর সে জন্য চাই নেতৃত্বের বলিষ্ঠতা এবং স্বাধীন দেশের মর্যাদা সম্পর্কে সচেতনতা।


আরো সংবাদ



premium cement
বস্ত্র-পাট খাতে চীনের বিনিয়োগ চায় বাংলাদেশ জামালপুরে সাব রেজিস্ট্রারকে হত্যার হুমকি মামলায় আ’লীগ নেতা গ্রেফতার গাজায় অনাহার যুদ্ধাপরাধ হতে পারে : জাতিসঙ্ঘ ‘প্রত্যেককে কোরআনের অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করতে হবে’ মতলব উত্তরে পানিতে ডুবে ভাই-বোনের মৃত্যু প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের শেষ ধাপের পরীক্ষা শুক্রবার লম্বা ঈদের ছুটিতে কতজন ঢাকা ছাড়তে চান, কতজন পারবেন? সোনাহাট স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করলেন ভুটানের রাজা জাতীয় দলে যোগ দিয়েছেন সাকিব, বললেন কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই কারওয়ান বাজার থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে ডিএনসিসির আঞ্চলিক কার্যালয় এলডিসি থেকে উত্তরণের পর সর্বোচ্চ সুবিধা পেতে কার্যকর পদক্ষেপ নিন : প্রধানমন্ত্রী

সকল