২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আবরার হত্যার অভিযোগপত্র

বিচারের পুরো প্রক্রিয়াই স্বচ্ছ হোক

-

৩৭ দিন তদন্ত শেষে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ বুয়েটের আলোচিত ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার অভিযোগপত্র দিয়েছে। অপরাধের সঠিক বিচারের প্রত্যাশা এর মাধ্যমে বেড়ে গেল জনগণের মধ্যে। শীর্ষস্থানীয় দুই মন্ত্রী এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাবি করেছেন, নির্ভুল তদন্ত করে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, ১৩৫ দিনের মধ্যে বিচারকাজ শেষ হবে। সরকারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের এসব বক্তব্য এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে যে, মানুষের মনে অনাস্থা অনেক বেড়ে গেছে। কারণ, অন্যায় অনিয়ম দুর্নীতি অনেক বেশি প্রাধান্য বিস্তার করেছে সমাজে। একটি জঘন্য অপরাধ ঘটা যে অনেক সহজ হয়ে গেছে। অন্য দিকে, অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি পাওয়া অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে গেছে বাংলাদেশে। ফলে বড় বড় অপরাধ উপর্যুপরি ঘটছে। অপরাধপ্রবণতার রাশ টেনে ধরার জন্য আবরার হত্যার সুষ্ঠু বিচার একটি টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। তাহলে মানুষের মনে এ আস্থা ফিরিয়ে আনা যেতে পারে যে, আইনের শাসন এ দেশে শেষ হয়ে যায়নি।
বুয়েটের মেধাবী ছাত্ররাই তাদের মেধাবী বন্ধু আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেছে। হত্যার বিবরণ থেকে বোঝা যাচ্ছে, আমাদের সমাজে বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা ও পৈশাচিকতার বিস্তার কতটা ঘটেছে। তদন্তে পাওয়া গেছে, তাকে ক্রিকেট ব্যাট ও প্লাস্টিকের স্কিপিং দড়ি দিয়ে নির্মমভাবে পেটানো হয়েছে। রাত ১০টায় শুরু হয়ে থেমে থেমে পুরো মধ্যরাতে তার ওপর নির্যাতন চলেছিল। কথিত বন্ধুদের আক্রোশ কতটা পাশবিক ছিল, ক্রিকেট ব্যাট ভেঙে তারা সেটি প্রমাণ করেছে। আবরার চাইলেও তাকে পানি পর্যন্ত দেয়া হয়নি। তিনি কয়েকবার বমি করার পরও চরম নির্যাতন বন্ধ করা হয়নি। চিকিৎসা দেয়ার বদলে আবরারের নিস্তেজ দেহটি তারা ফেলে রাখে সিঁড়ির ওপর। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ১১ জন সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে। আরো ১৪ জন নানাভাবে এ অপরাধে সহযোগী হয়েছে। এদের মধ্যে একজন বিবেকবান ব্যক্তিও পাওয়া গেল না যারা সামান্য পানি বা চিকিৎসাসেবা দেয়া কিংবা মারধর বন্ধ করে তাকে বাঁচানোর তাগিদ অনুভব করবেন।
এই অপরাধের মোটিভ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আরো জরুরি বিষয় হচ্ছে, জাতির সবচেয়ে সংবেদনশীল ও মেধাবী তরুণরা কেন এমন নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে, তা অনুসন্ধান করা। তদন্ত প্রতিবেদন থেকে বোঝা যায়, ক্ষমতাশ্রিত ছাত্রলীগের নেতাদের মধ্যে চরম স্বেচ্ছাচারী মনোভাব জন্ম নিয়েছে। অন্য ছাত্ররা সালাম না দিলে, কোনো কারণে হাসলে কিংবা ‘উপযুক্ত সমীহ’ না করলে সেটিকে তারা ভালোভাবে নিত না। হলের ছাত্ররা যাতে ‘জি হুজুর’ আচরণ করে, সেটিই তাদের কাম্য ছিল। আবরারের ওপর নির্যাতন চালাতে তারা দুইবার হল কেন্টিনে সম্মিলিত মিটিং করেছে। উদ্দেশ্য ছিল, নির্মম নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করে অন্যদের মধ্যেও যাতে ভীতি ছড়িয়ে দেয়া যায়। ফেসবুকে আবরার যে পোস্ট দিয়েছেন, সেটিকে অজুহাত করে কাজটি তারা করতে চেয়েছিল। আবরার হত্যার মাধ্যমে বুয়েটে একদল যুবকের বর্বরোচিত অপরাধ উন্মোচ হয়েছে। মূলত দেশের বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতারা এই জঘন্য আচরণই করে আসছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সম্প্রীতিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এ মামলার বিচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবিলম্বে আবরার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিই পারে অন্য অপরাধীদের সুপথে ফেরাতে।
যা হোক, হত্যাকারীদের দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। এ জন্য দৃশ্যত, পুলিশ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। দেশের সাম্প্রতিক সময়ে অপরাধী পাকড়াও করার ক্ষেত্রে এমন নজির খুব কমই দেখা গেছে। মামলার বিচারিক কাজও যাতে সুচারুরূপে শিগগির সম্পন্ন হয়, এখন সেই প্রত্যাশা দেশবাসীর। অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে এবং যারা বেশি অপরাধ করেছে, তারা শাস্তি বেশি পাবে। আরেকটি ব্যাপার হচ্ছে, মাফ পেয়ে যাওয়ার সুযোগ। সাধারণত ‘দলীয় কোটা’য় এমন মাফের আয়োজন করা হয়। সবাই প্রত্যাশা করে, এটি সরকারের কোনো আইওয়াশ কার্যক্রম হবে না।


আরো সংবাদ



premium cement