১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
বস্তি, আবর্জনা ও ভাঙনের কবলে কুয়াকাটা

সৈকতের সৌন্দর্য অক্ষুণœ রাখুন

-

গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে পর্যটনের ক্ষেত্রে ‘সাগরকন্যা’ কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত বিশেষ আকর্ষণ সৃষ্টি করেছে এবং দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু গভীর উদ্বেগের কারণ হলো, কুয়াকাটার প্রচার ও পরিচিতি যত বাড়ছে, দখল-দূষণের কারণে এর সৌন্দর্য ততই কমছে। পটুয়াখালী জেলার উপকূলে অবস্থিত কুয়াকাটা সৈকতের অনন্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখান থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তÑ উভয়ই উপভোগ করা যায়। নয়া দিগন্তের কলাপাড়া সংবাদদাতার পাঠানো রিপোর্টে কুয়াকাটার ক্রমবর্ধমান অপরিচ্ছন্ন ও হতশ্রী দশার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সাথে প্রকাশিত ছবিতে দেখা যায়, বস্তির মতো বাড়িঘর আর ময়লা আবর্জনায় ভরে আছে সৈকতভূমি।
প্রতিবেদনটিতে শুরুতেই উল্লেখ করা হয়, ‘কুয়াকাটা সৈকত বস্তিবাসীর দখলে চলে যাচ্ছে। ধু-ধু সাদা বালুর উপরে একের পর এক ঘর তৈরি করায় ময়লা আবর্জনায় নাকাল গোটা সৈকত। এতে কুয়াকাটা সৌন্দর্য হারাচ্ছে বলে অভিযোগ বেড়াতে আসা হাজার হাজার পর্যটকের। ’
উল্লেখ্য, দুই শতাধিক পরিবার কুয়াকাটা সৈকতে ঘর তোলার অনুমতি চাইলে স্থানীয় পৌরসভা এ ব্যাপারে তাদের নিষেধ করেছে। তবুও বস্তি গজিয়ে উঠছে সেখানে। অবিলম্বে এগুলো না সরালে পর্যটকরা কুয়াকাটা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানা গেছে, বেড়িবাঁধের দুই শতাধিক ঘর রাতের আঁধারে সৈকতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই বাঁধ সংস্কারের কাজ পেয়ে চীনের একটি কোম্পানি কাজটি হাতে নেয়। এ দিকে, ক্ষতিপূরণের অর্থ পেলেও অনেক পরিবার সাগরে মাছ ধরার জন্য, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সৈকতে বাস করছে। কর্তৃপক্ষ বারবার উচ্ছেদ অভিযান চালালেও তার ফল স্থায়ী হয়নি। তা ছাড়া, ভাঙনের কারণেও কুয়াকাটা সৈকত অনেক ক্ষেত্রে বিপন্ন হয়ে পড়ছে বলে পত্রপত্রিকার খবরে জানা যায়।
আলোচ্য প্রতিবেদনে নমুনা হিসেবে ঢাকার এক পর্যটকের উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে, ‘শুনেছিলামÑ কুয়াকাটা অনেক সুন্দর। কিন্তু এখানে এসে যা দেখেছি, তা আশা করিনি। নোংরা পরিবেশ আর সৈকতে বস্তি। সাগরপাড়ে মাছ ধরার জাল থেকে বের হচ্ছে দুর্গন্ধ। এসব থাকলে দেশী বা বিদেশী পর্যটকরা আসবেন না।’ স্থানীয় পর্যটন ব্যবস্থাপনা সংগঠনের প্রধানের বক্তব্য, ‘ঝুপড়ি আর নোংরা পরিবেশ সৈকতে অব্যবস্থাপনার ফল। কোনো দেশের সৈকতে এসব নেই। দ্রুত সৈকত পরিষ্কার করা প্রয়োজন। দরকার হলে আমরা এতে সাহায্য করব।’ কুয়াকাটার পৌরমেয়র জানান, বালুচরে ঘর ওঠাতে নিষেধ করা হলেও তা লোকজন শোনেনি। অবশ্য সৈকত ব্যবস্থাপনায় জড়িত, কলাপাড়ার ইউএনও আশ্বাস দিলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব সৈকতের ঝুপড়ি সরিয়ে দেয়া হবে।’
স্থানীয় পর্যটন ব্যবসায়ী, এলাকাবাসী এবং বেড়াতে আসা নারী-পুরুষসহ সবাই মনে করেন, কুয়াকাটার প্রাকৃতিক পরিবেশ ও ঐতিহ্যবাহী সৌন্দর্য অক্ষুণœ রাখার স্বার্থে প্রশাসনের ত্বরিত ও কঠোর পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এ জন্য সৈকত থেকে বস্তি অপসারণের পর যাতে ভবিষ্যতে এগুলো আবার গড়ে উঠতে না পারে, কিংবা কেউ বালুচর দখল করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সৈকতের ভূমিক্ষয়রোধ এবং নিকটবর্তী বন রক্ষার কার্যকর উদ্যোগও গ্রহণ করা উচিত।


আরো সংবাদ



premium cement