১৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৪ বৈশাখ ১৪৩১, ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আবার ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা

রেলপথও এখন অনিরাপদ

-

আমাদের দেশে সড়ক ও নৌপথ সাধারণত দুর্ঘটনাপ্রবণ। বিশেষ করে সড়কপথে দুর্ঘটনা হরহামেশাই হয়ে থাকে। এতে প্রতি বছর বহু লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। আহত হচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। সেই তুলনায় রেলপথ নিরাপদ, আরামদায়ক আর সাশ্রয়ী। টিকিটপ্রাপ্তির ঝামেলা এবং সময়সূচিতে গোলযোগ সত্ত্বেও বিপুল যাত্রী এখনো রেলপথে যাতায়াতে আগ্রহী মূলত নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায়। বাংলাদেশ রেলওয়ের তথ্য মতে, সারা দেশে মোট রেললাইন রয়েছে চার হাজার ৪৪৩ কিলোমিটার। রেলপথে সাড়ে তিন শতাধিক ট্রেনে প্রতি বছর গড়ে চলাচল করেন ৪২ লক্ষাধিক যাত্রী। এই বিপুল যাত্রীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কতটুকু নিষ্ঠা ও দায়িত্বের সাথে কাজ করছে রেলওয়ে, তা গুরুতর প্রশ্নবিদ্ধ। একের পর এক ব্যয়বহুল প্রকল্প হাতে নিলেও দেশের রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে সবচেয়ে কম। ফলে ইদানীং রেল দুর্ঘটনা মাত্রা বেড়ে গেছে। আর একটি দুর্ঘটনা ঘটলে কিছু দিনের জন্য কর্তৃপক্ষ নড়েচড়ে বসে। কিছু দিন না যেতেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। ফলে ট্রেনে যাতায়াত করাও হয়ে উঠেছে অনিরাপদ। সেই প্রমাণ আবার মিলল সোমবার দিবাগত গভীর রাতে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ দুর্ঘটনায়। এমন দুর্ঘটনায় প্রতীয়মান হলো, রেল যোগাযোগের নিরাপত্তায় বিদ্যমান ব্যবস্থায় মস্তবড় ফাঁক রয়ে গেছে। এই দুর্ঘটনায় এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত ১৬ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, একটি ট্রেনের চালক সিগন্যাল উপেক্ষা করায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মন্দবাগ স্টেশনে দু’টি ট্রেনের সংঘর্ষ ঘটে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলরুটে।
চলতি বছরের জুনে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় কয়েকটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে একটি সেতু থেকে ছড়ায় পড়ে গেলে ঘটনাস্থলে চারজন নিহত ও শতাধিক যাত্রী আহত হয়েছিলেন। ওই দুর্ঘটনার পরও রেলের নিরাপত্তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ঘুম ভাঙেনি। তাই এরপরও দেশে আরো কয়েকটি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে অক্টোবরের গোড়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী জালালাবাদ এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত হয়েছিল। কসবার এই দুর্ঘটনার মাত্রার সাথে অন্যান্য ট্রেনের লাইনচ্যুতি, এমনকি কুলাউড়ার ঘটনারও তুলনা চলে না। এখানে সোমবার রাতে যেভাবে দু’টি ট্রেনের সংঘর্ষ ঘটেছে, তা বাংলাদেশে রেলপথের সবচেয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনাগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত। আমাদের দেশে ১৯৯৫ সালে হিলির ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর এমন সংঘর্ষ আর হয়নি।
নয়া দিগন্তসহ গণমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায়, সিলেট থেকে ছেড়ে ‘উদয়ন’ এক্সপ্রেস নামের ট্রেনটি যাচ্ছিল চট্টগ্রামে। আর আন্তঃনগর তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটি চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসছিল ঢাকায়। মন্দবাগে দুই ট্রেনের ক্রসিং হওয়ার কথা। সিগন্যাল পেয়ে উদয়ন মূল লাইন থেকে লুপ লাইনে ঢুকছিল। ৯টি বগি লুপ লাইনে চলেও গিয়েছিল। ওই সময় এর দশম বগিতে আঘাত করে তূর্ণা নিশীথা। রাত পৌনে ৩টায় মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। প্রচণ্ড সংঘর্ষের পর তূর্ণা নিশীথার একাধিক বগি উদয়নের কয়েকটি বগির ওপর উঠে যায়। দু’টি বগি দুমড়ে-মুচড়ে গেছে।
যেকোনো দুর্ঘটনার নেপথ্যে সাধারণত অসচেতনতা কিংবা দায়িত্বে অবহেলা বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হয়। এ দুর্ঘটনার পেছনেও রয়েছে অসতর্কতা এবং দায়িত্বে মারাত্মক অবহেলা। দুর্ঘটনার পর নিয়মানুযায়ী তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে। বহু ক্ষেত্রে দেখা যায়, তদন্ত হয় নামকাওয়াস্তে। অনেক ক্ষেত্রে ওই সব তদন্ত প্রতিবেদন কোনো দিন আলোর মুখ দেখে না। এই দুর্ঘটনা তদন্তে রেলের পক্ষ থেকে চারটি এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের পক্ষে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো, আগের দুর্ঘটনার কারণগুলো শনাক্ত করে যদি ওই আলোকে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া হতো; তাহলে একই ধরনের দুর্ঘটনা বারবার ঘটার কথা নয়। বেশির ভাগ সময়ই দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দায়ী করা হয় চালকদের। অথচ একটি ব্যবস্থাপনায় যুক্ত থাকেন আরো অনেকে। তাই সংশ্লিষ্ট কোনো কর্মকর্তার দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। দেশবাসী দেখতে চান কসবার দুর্ঘটনায় গঠিত কমিটিগুলো নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তদন্ত সম্পন্ন করে প্রতিবেদন জমা দেবে। অতীতের পুনরাবৃত্তি না ঘটিয়ে প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুযায়ী দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই সাথে আহতরা যাতে সর্বোচ্চ ও যথাপ্রয়োজন চিকিৎসা পান, তা সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে। দীর্ঘ মেয়াদে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কথাও ভাবতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত সব পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়ার উদ্যাগ নিতে হবে সরকারকেই। ট্রেনযাত্রীদের প্রতি সবচেয়ে বড় সহায়তা হবে রেলপথে দুর্ঘটনা রোধ করার মাধ্যমে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতা ও সতর্কতা খুবই জরুরি।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাকা লিগে মোহামেডানকে হারাল শাইনপুকুর বিশাল ব্যবধানে ব্রাদার্স ইউনিয়নকে হারালো গাজী গ্রুপ চকরিয়ায় আধিপত্য বিস্তারে কুপিয়ে হত্যা আবারো বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে আইএমএফ বুয়েটে নতুন ছাত্রকল্যাণ পরিচালক নিয়োগ পঞ্চগড়ে নৌকা ডুবে নিহতদের পরিবারের সাথে জামায়াত আমিরের সাক্ষাৎ সখীপুরে সাংবাদিকের ওপর হামলাকারী সেই আ'লীগ নেতা কারাগারে ফরিদপুরে দুর্ঘটনায় মা-ছেলে নিহত, আহত বাবা-মেয়ে দিরাইয়ে বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিশ্বমানের পাঠ্যক্রম গ্রহণের আহ্বান রাষ্ট্রপতির বগুড়ায় পুলিশ পরিচয়ে ট্রাকভর্তি কলা ছিনতাই : গ্রেফতার ৪

সকল