২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`
শিল্পায়নে গুরুত্বারোপ

সময়োচিত একটি আহ্বান

-

একসময়ের কৃষিনির্ভর দেশের পরিচয় থেকে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ক্রমেই শিল্পায়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণ, জাতীয় পর্যায়ে ব্যাংক ঋণ বিতরণ এবং ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগÑ সবই দেয়া হচ্ছে শিল্প খাতে। শিল্পায়নের জন্য যত প্রতিষ্ঠান কাজ করছে, যেভাবে কূটনৈতিক মিশনগুলোকে কাজে লাগানো হচ্ছে এবং যেসব প্রণোদনা ও সুবিধা দেয়া হচ্ছে, তার ছিটেফোঁটাও কৃষি খাতের জন্য নেই। অবশ্য শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি বাড়ছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।
স্বাধীনতার পর থেকে সব সরকারই শিল্পায়নে বিশেষ জোর দিয়েছে। সরকার আগামী ১৫ বছরের মধ্যে প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান করার পরিকল্পনা নিয়ে সারা দেশে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। এরই মধ্যে ৯০টির বেশি অঞ্চলের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৮টি অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে।
শিল্প খাতে জোর দেয়ায় জিডিপিতে এই খাতের অবদান বাড়ছে। ১৯৭৩-৭৪ সালে জিডিপিতে শিল্পের অবদান ছিল মাত্র ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। সেটি ২০১৮-১৯ সালে এসে দাঁড়াচ্ছে প্রায় ৩১ দশমিক ৩১ শতাংশে। সরকারগুলো যত প্রয়াস চালিয়েছে ও পুঁজি বিনিয়োগ করেছে তাতে শিল্প খাতের এই অগ্রগতি খুব যে বেশি কিছু, এমন মনে করার কারণ নেই। কিন্তু এটি করতে গিয়ে কৃষির প্রতি হয়তো কিছুটা অবহেলাই করা হয়েছে। ফল দাঁড়িয়েছে ১৯৭৩-৭৪ সালে জিডিপিতে যে কৃষি খাতের অবদান ছিল ৫১ দশমিক ০৩ শতাংশ, সেটি কমতে কমতে ২০১৮-১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশে।
কৃষি খাতে সর্বশক্তি বিনিয়োগের সুযোগ আমাদের কম। কারণ, দেশে কৃষিজমির সীমাবদ্ধতা আছে। দিন দিন জমির পরিমাণ কমছেও। নির্দিষ্ট পরিমাণ জমিতে সর্বোচ্চ মাত্রার ফলনের দিক থেকেও এখন সম্ভবত খুব বেশি অর্জনের সুযোগ কম। কারণ, উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ করে আমরা এরই মধ্যে চীন, জাপানের কাছাকাছি পরিমাণে ধান উৎপাদন করতে পারছি। স্বাভাবিকভাবেই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য আমাদেরকে শিল্পায়নের ওপর গুরুত্ব দিতেই হবে। সেই সাথে, বিশ্বজুড়ে বিকাশমান সেবা খাতের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।
আমরা জানি, ২০০০-২০০১ অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ। পরের বছরগুলোতে এর অবদান বাড়তে থাকে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এ হার বেড়ে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৮ শতাংশে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ খাতের অবদান দাঁড়ায় ৩৩ দশমিক ৭ শতাংশে। চলতি অর্থবছরে শিল্প খাতের অবদান ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশ বলে প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ খাতে অবদান ৩৫ দশমিক ৫ শতাংশ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিল্প খাতে গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এই আহ্বান সময়োচিত ও যথাযথ। তবে কৃষি খাতকে যেন কোনোভাবেই উপেক্ষা করা না হয় সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, রাতারাতি আমাদের শিল্প খাত এতটা শক্তিশালী হয়ে উঠবে না, যাতে করে আমরা খাদ্যচাহিদার পুরোটা বিদেশ থেকে আমদানি করে পূরণ করতে পারব। আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে এবং খাদ্যচাহিদাও। দক্ষিণ কোরিয়া বা মালয়েশিয়ার উন্নয়নের দৃষ্টান্ত লক্ষ করলেই বোঝা যায়, গত ৫০ বছরে আমাদের রাজনীতিকরা দেশকে শিল্পায়ন তথা উন্নয়নের দিকে খুব সামান্যই এগিয়ে নিতে পেরেছেন। অনেকে বলে থাকেন, জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান বাড়লে অর্থনীতিতে টেকসই উন্নয়ন হচ্ছে ধরে নেয়া যায়। দুই দশক ধরে জিডিপিতে কৃষির অবদান কমছে, বাড়ছে শিল্প খাতের অবদান। এতে মনে হতে পারে, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ইতিবাচক ধারায় রয়েছে।
গত এক দশকে দেশে যে রাজনৈতিক অস্থিরতাশূন্য কথিত শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি বিদ্যমান রয়েছে, তাতে অর্থনৈতিক সূচকগুলোর রীতিমতো উল্লম্ফন দেখতে পাওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি, বরং অনেক সূচকই নেতিবাচক ধারায় আবর্তিত হচ্ছে। সব দিক বিবেচনা করে শিল্পায়নের ক্ষেত্রেও নির্দিষ্টকরণের দরকার আছে। শুধু গার্মেন্ট শিল্পের ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। এর পাশাপাশি, ফার্মাসিউটিক্যালসহ বিকল্প একাধিক পণ্য খুঁজে বের করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement