প্রয়োজন স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন
- ০৯ নভেম্বর ২০১৯, ০০:০০
সরকার বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ কমিশনের লক্ষ্য হবে ব্যাংক খাতে ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ ও অনিয়মে জর্জরিত ব্যাংক খাতের প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন। দুর্নীতি, লুটপাট ও নানা অনিয়মে ডুবে থাকা ব্যাংক খাতে সংস্কার প্রয়োজনÑ এমন দাবি বিভিন্ন মহল থেকে উচ্চারিত হচ্ছে দীর্ঘ দিন থেকে। সে দিক বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল দাবি জানিয়ে আসছে, একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে হবে। সে প্রেক্ষাপটে সরকার এবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটি ব্যাংকিং সংস্কার কমিশন গঠন করা হবে। তবে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সেটি গঠন করা হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে।
ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তকে বিভিন্ন মহলের সাথে একমত পোষণ করে স্বাভাবিক কারণেই আমরা স্বাগত জানাই। কারণ দেশের ব্যাংক খাত যে অনিয়ম আর বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে চলছে, তা আর কিছুতেই চলতে দেয়া যায় না। প্রয়োজনীয় সংস্কারের মধ্য দিয়ে ব্যাংক খাতকে এ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে হবে। আর সে জন্য একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন আসলেই সময়ের দাবি। সে জন্যই ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করার কোনো কারণ থাকতে পারে না। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত প্রশ্নে আপত্তিটা অন্য জায়গায়। আপত্তির কারণ হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে গঠিত হতে যাচ্ছে এ ব্যাংকিং কমিশন। অনেকের সাথে আমরা মনে করি, প্রত্যাশিত এই ব্যাংকিং কমিশন বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে গঠন করা হবে পুরোপুরি অর্থহীন ও অপরিণামদর্শী একটি পদক্ষেপ। কেননা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে থাকা আমাদের ব্যাংকিং খাত সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরোপুরি ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে ব্যাংক খাত অব্যাহতভাবে নানা সমস্যা আর সঙ্কটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করছে, কিন্তু তা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যকর নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করতে পারেনি এ কথা বিতর্কাতীত সত্য। একইভাবে যারা ব্যাংক খাতের এই অনিয়ম বিশৃঙ্খল ও সমস্যা সঙ্কটের জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তাই সহজেই ধরে নেয়া যায়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে ব্যাংকিং কমিশন প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধনে আগের মতোই একই ধরনের ব্যর্থতার পরিচয় দেবে। তাই সঙ্গত কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বাধীন কোনো ব্যাংকিং কমিশন গঠনের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। তবে ব্যাংক কমিশন গঠনে সরকারের সিদ্ধান্তকে আমরা সমর্থন করি এবং আমরা চাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বাধীন ব্যাংকিং কমিশন গঠন করে যথাসম্ভব দ্রুত ব্যাংক খাতের সংস্কার শুরু করা হোক। ব্যাংক খাতের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য এর কোনো বিকল্প আছে বলে আমরা মনে করি না।
সম্প্রতি দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্র্যান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ তথা টিআইবি একই ধরনের অভিমত প্রকাশ করেছে। গত পরশু এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়Ñ ব্যাংক খাত সংস্কারে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে একটি ব্যাংকিং কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। এ খাতের সংস্কারে বিভিন্ন মহলের দাবির প্রেক্ষাপটে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের সিদ্ধান্তটি ইতিবাচক। কিন্তু আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে এ কমিশন গঠন করা হবে দায়সারা, অর্থহীন ও অপরিণামদর্শী এক সিদ্ধান্ত। ব্যাংকিং খাতে গঠিতব্য এই কমিশন হতে হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন।
বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে আমাদের সুপারিশ হচ্ছেÑ অবিলম্বে এই ব্যাংক কমিশন গঠিত হোক, সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে। কোনো মতেই তা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেতৃত্বে নয়। একটি কার্যকর ব্যাংকিং কমিশনের জন্য তা অপরিহার্য। আশা করি, সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা আমাদের এই ছোট্ট পরামর্শটুকু আমলে নেবেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা