২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
নতুন সড়ক পরিবহন আইনের প্রথম দিন

দৃশ্যপট আগের মতোই কেন?

-

দেশের সড়কে দীর্ঘ দিন ধরে বিদ্যমান সীমাহীন বিশৃঙ্খলা দূর করতে চলতি নভেম্বরের প্রথম দিন থেকে কার্যকর করা হলো নতুন সড়ক পরিবহন আইন। বলা হয়েছে, নতুন আইন কার্যকর করার মধ্য দিয়ে সড়ক পরিবহনে শুরু হলো শুদ্ধি অভিযান। কিন্তু এটি কার্যকর করার প্রথম দিনেও এর প্রয়োগ হতে দেখা যায়নি। দৃশ্যপট যেন রাজধানীতে একটুও বদলায়নি। যেখানে সেখানে বাস থামানো, যাত্রী ওঠানামা, গাড়িগুলোর মধ্যে অবাঞ্ছিত প্রতিযোগিতার চিত্রই গত শুক্রবার চোখে পড়েছে। বন্ধ হয়নি বেপরোয়া গাড়ি চালানো। তদুপরি, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে কমপক্ষে ৯ জনের।
অভিযানের মধ্যেও বেপরোয়া চাঁদাবাজি অব্যাহত রয়েছে, টার্মিনাল-ভিত্তিক সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে করা হয়েছে অর্থ আদায়। ঢাকা নগরীর চার টার্মিনাল, বিভিন্ন পয়েন্ট ও সড়ক থেকে আদায় হচ্ছে মাসে ৬০ কোটি টাকা; অর্থাৎ প্রতিদিন দুই কোটি টাকা। গণপরিবহন এবং অবৈধ লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের কাছ থেকে আদায় করা চাঁদার বিপুল অর্থের ভাগ যাচ্ছে অনেক দূরে। মোট কথা, নতুন এ আইন চাঁদাবাজির অবসান ঘটাবে বলে মনে হচ্ছে না। তা ছাড়া, এর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আছে নানা ধরনের দ্বন্দ্ব।
১ নভেম্বর থেকে নতুন পরিবহন আইন কার্যকর হওয়ার কথা। ওই দিন বিভিন্ন স্থানসহ রাজধানী ও চট্টগ্রামের ট্রাফিক পুলিশ এই আইন লঙ্ঘনের বিভিন্ন বিধানের কথা যাত্রীসাধারণ ও পরিবহনের সংশ্লিষ্ট মহলের মাঝে প্রচার করতে দেখা গেলেও কোনো যাত্রী বা পরিবহন থেকে কোনো জরিমানা আদায় করতে দেখা যায়নি, যদিও পত্রিকার খবর মতে, চাঁদাবাজি চলছে আগের মতোই।
‘সড়ক পরিবহন আইন প্রণীত হয়েছিল এক বছর আগে। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের দাবির বহু কাক্সিক্ষত আন্দোলনের মুখে সরকার এ আইন প্রণয়ন করে, যা কার্যকর করা হলো মাত্র গত শুক্রবার। এক বছর আগে এ আইন প্রণীত হলেও পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের অন্যায় বাধার মুখে সরকার তখন তা বাস্তবায়ন করেনি। গত শুক্রবার এ আইন কার্যকর হলেও এটি সম্পর্কে খোদ প্রয়োগকারী সংস্থা, জনসাধারণ ও পরিবহন মালিক-চালক-হেলপার ও পথচারীদের তেমন কোনো ধারণা নেই। আইনটির বিধিবিধান মানুষকে জানানোর জন্য যতটা প্রচার চালানো দরকার, সরকার তা করেনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর ফলে প্রতিদিনের মতো এখনো সড়কে নানা অনিয়ম চোখে পড়ছে। পুলিশ সদস্যের উল্টোপথে বাইক চালানো, হেলমেট ছাড়াই বাইক চালানো, বাস-সিএনজির সামনে দিয়ে রাস্তা পারাপার হওয়া, গাড়ি চালানোর সময় মোবাইলে কথা বলাÑ এ ধরনের নানা বিশৃঙ্খলা এখনো অব্যাহত রয়েছে।
আগের আইনের চেয়ে নতুন সড়ক পরিবহন আইনে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি আরো কঠোর করা হয়েছে। কিন্তু তা বাস্তবায়নের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে সাহসী ও আন্তরিক হতে হবে। এই আইনের সার্থকতা তখনই প্রমাণ হবে, যখন এ আইন পুরোপুরি কার্যকর হতে পারবে। তা ছাড়া, আইনটি যুগোপযোগী কি না, তা-ও ভেবে দেখা দরকার। যা হোক্, আইনটি কার্যকর করার ব্যাপারে শিথিলতা প্রকাশ করা ঠিক হবে না। বিআরটিএ ও ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ বলছে, নতুন সড়ক পরিবহন আইন ১ নভেম্বর থেকে কার্যকর হলেও প্রয়োগ করা হবে পুরনো আইনটিই। পর্যায়ক্রমে ‘সহনীয় মাত্রা’য় নতুন আইনটির প্রয়োগ শুরু হবে। এ ধরনের আপসকামী মনোভাব সড়কপথে বিশৃঙ্খলা অবসানের পথে বড় বাধা। আমরা মনে করি, এখন থেকেই নতুন আইনের যথাযথ প্রয়োগ হওয়া দরকার; তবে যদি ফেরে বাংলাদেশের সড়ক পরিবহনে শৃঙ্খলা।


আরো সংবাদ



premium cement