নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই
- ২৩ অক্টোবর ২০১৯, ০০:০০
বাংলাদেশের জনজীবন ও অর্থনীতির ক্ষেত্রে ইলিশ মাছ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেহে আমিষের চাহিদা পূরণ ছাড়াও জাতীয় অর্থনৈতিক অঙ্গনে এই অতীব সুস্বাদু মাছের বিরাট ভূমিকা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইলিশের পর্যাপ্ত বংশ বৃদ্ধি নিরাপদ করার স্বার্থে সরকার ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ মাছ ধরা, মজুদ রাখা, সরবরাহ ও বিক্রয় করার ওপর ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে প্রশাসনের দৃশ্যমান তৎপরতা সত্ত্বেও অনেক জায়গায় এই আদেশ লঙ্ঘন করে ইলিশ নিধনের খবর পাওয়া গেছে। এমনকি এবার ভারতীয় জেলে বাংলাদেশের রাজশাহী সীমান্ত দিয়ে ঢুকে অবৈধভাবে ইলিশ শিকার করা নিয়ে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষীদের মাঝে সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা পর্যন্ত ঘটে যায়।
নয়া দিগন্তের সংবাদদাতা পাবনার বেড়া থেকে জানান, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার পদ্মা ও যমুনাসহ তিনটি নদীতে প্রসূতি ইলিশ শিকার করা হচ্ছে। অপর দিকে মৎস্যজীবীরা ইলিশ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে জীবিকার্জন করতে না পারা সত্ত্বেও সরকারের পক্ষ থেকে সাহায্য পাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ইলিশের চলতি প্রজনন মওসুমে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উল্লিখিত নদীগুলোর ১১৬ কিলোমিটার এলাকায় চলছে প্রসূতি ইলিশ শিকার। কর্তৃপক্ষের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান সত্ত্বেও বেআইনিভাবে ইলিশ নিধনের তাণ্ডব বন্ধ না হওয়ার কারণ, এলাকার কয়েকজন জনপ্রতিনিধিসহ প্রভাবশালী লোকজনের সহযোগিতা। এমনকি এই মাছ বিক্রির জন্য রাতে ১৫ থেকে ২০টি স্থানে বাজার বসছে। সেখানে রাত ১০টা থেকে একাধারে আট ঘণ্টা ধরে চলছে বিকিকিনি। নিষেধাজ্ঞা না মেনে ইলিশ ধরা হচ্ছে যমুনা সেতুর ভাটি থেকে দক্ষিণে ৬০ কি.মি., সেখান থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত পদ্মার ৫০ কি.মি. এবং হুরাসাগর নদীর ছয় কি.মি. এলাকায়। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে জেলেরা ইলিশ শিকার করছে এবং তাদের জালে ডিমওয়ালা ইলিশের সাথে ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়ছে জাটকাও। মাত্র এক ঘণ্টায় একেকটি জালে ধরা পড়ছে ১৫ থেকে ২০ কেজি ইলিশ। এসব মাছ আকারভেদে ১৫০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে। এমনকি অনেক ক্রেতার বাড়িতে ইলিশ পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। প্রশাসন প্রতিদিন অভিযান চালিয়ে জেলেদের জেল-জরিমানা এবং তাদের কারেন্টজাল পুড়িয়ে ধ্বংস করছে। তবু বেআইনি পন্থায় ইলিশ শিকার করার প্রবণতা কমছে না। বিস্ময়কর হলো, এ অভিযানের সংবাদ আগেভাগেই জেলেরা পেয়ে যাচ্ছে। অপর দিকে রাতে কর্তৃপক্ষ তৎপর না থাকায় তখন ইলিশ শিকার চলে অবাধে। এ জন্য প্রভাবশালী ব্যক্তি ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসৎ সদস্যদের জেলে নৌকাপ্রতি নির্দিষ্ট হারে ঘুষ দিতে হয়। এ দিকে জেলেদের বক্তব্য হলো, ইলিশ ধরার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকালে সরকারের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার কথা থাকলেও তারা পায়নি। ফলে বেঁচে থাকার জন্য বাধ্য হয়ে তারা ইলিশ মাছ ধরছে। চৌহালীর কয়েকজন মৎস্যজীবী জানায়, নির্বিঘেœ ইলিশ ধরার জন্য নৌকাপ্রতি তিন হাজার টাকা করে তারা দেড় লাখ টাকা দিয়েছে একজন জনপ্রতিনিধিকে। ‘তিনিই পুলিশ-প্রশাসনকে ম্যানেজ করবেন’।
ইলিশের প্রজনন নির্বিঘœ করতে অব্যাহত কঠোরতার বিকল্প নেই। এ জন্য জনসচেতনতা ছাড়াও পুলিশ-প্রশাসনের সদিচ্ছা ও আন্তরিক প্রয়াস জরুরি। কর্তৃপক্ষের অভিযান প্রয়োজনে রাতেও নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে। ইলিশ রক্ষার্থে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা জনপ্রতিনিধিদের একটা বড় দায়িত্ব। তা ছাড়া মৎস্যজীবীদের স্বাভাবিক জীবিকা নির্বাহের জন্য পর্যাপ্ত সাহায্য প্রদান করার বিষয়টি সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা