২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রেলে বিপুল বিনিয়োগ

তবু লোকসান কেন?

-

বাংলাদেশ রেলওয়েতে গত এক দশকে প্রায় ৫৩ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। লাভ দূরে থাক, পরিচালন ব্যয়ই তুলতে পারছে না রাষ্ট্রীয় এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। এই সময়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা খরচে ২৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। বর্তমানে সোয়া লাখ কোটি টাকার ৪৮টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এর বেশির ভাগই অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এসব প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে রয়েছে বড় প্রশ্ন। চলতি অর্থবছরে রেলের জন্য বরাদ্দের প্রস্তাব রয়েছে ১৬ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা।
বিপুল অর্থ ব্যয়ের পরও গত ১০ বছরে রেলের আয় ৫৮৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে মাত্র এক হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। এই আয় বেড়েছে দুই দফা ভাড়া বাড়ানোর কারণে। বিনিয়োগ এবং ভাড়া বাড়লেও বাড়েনি সেবার মান। বিশাল বিনিয়োগের সুফল কবে পাওয়া যাবে, সে নিশ্চয়তাও নেই। ইতোমধ্যে লোকসানে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে সংস্থাটি। রেল এমন সময়ে লোকসানের রেকর্ড গড়ছে, যখন দিন দিন যাত্রীরসংখ্যা বাড়ছে। সংস্থাটির অপারেশন শাখার হিসাবে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রেলওয়ে ৯ কোটি ২৭ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে। আগের অর্থবছরে যাত্রী ছিলেন সাত কোটি ৭৮ লাখ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যাত্রী পরিবহন থেকে এক হাজার ৩১ কোটি ১৫ লাখ টাকা আয় হয়েছে।
সহযোগী একটি দৈনিকের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১০ বছরে রেলের পরিচালন ব্যয় হয়েছে ২০ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। এর বিপরীতে আয় হয়েছে ৯ হাজার ৫৩৬ কোটি টাকা। একই সময়ে লোকসান হয়েছে ১০ হাজার ৯৮১ কোটি টাকা। কেবল ২০১৮-১৯ অর্থবছরেই এক হাজার ৮১০ কোটি টাকা লোকসান গুনেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ওই অর্থবছরে পরিচালন বাবদ তিন হাজার ১৯৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। আয় হয়েছে এক হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরে রেলের পরিচালনা ব্যয় ছিল দুই হাজার ৭১৬ কোটি টাকা এবং আয় করেছে এক হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। লোকসান ছিল এক হাজার ৪১৮ কোটি। এ বছর লোকসান বেড়েছে ৪০০ কোটি টাকা। রেলের হিসাব শাখা এক হাজার ৩৮৯ কোটি টাকা আয়ের তথ্য দিলেও অপারেশন শাখা বলছে, আয় এক হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। অপারেশন শাখার তথ্য সঠিক বলে ধরে নিলেও লোকসান এক হাজার ৬০০ টাকার বেশি, যা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বাকি ২০৩ কোটি টাকা কোথায়, এর সঠিক কোনো জবাব নেই।
এই সংস্থায় বিপুল খরচের পরও রেলওয়ে ২৭৮টি ইঞ্জিনের ১৯৫টি মেয়াদোত্তীর্ণ। যাত্রীবাহী এক হাজার ৬৩৫টি বগির ৯০০টি মেয়াদোত্তীর্ণ। অবকাঠামোগত উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়া হলেও বগি ও ইঞ্জিন সংগ্রহে ধীরগতি দেখা গেছে। ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত যাত্রীবাহী বগি কেনা হয়েছে ২৭০টি। পণ্যবাহী ওয়াগন কেনা হয়েছে ৪৪৬টি। ইঞ্জিন সংগ্রহ করা হয়েছে ৪৬টি। পণ্যবাহী আট হাজার ৬৮০টি ওয়াগনের মধ্যে তিন হাজার ৯৩৯টি মেয়াদোত্তীর্ণ।
জাতীয় এই সেবা সংস্থাটির দুর্নীতি নিয়ে বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে বেশুমার প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। রেলের ‘কালো বিড়াল’ শনাক্ত করে ধরার ব্যাপারে অতীতে কর্তৃপক্ষ মুখরোচক অনেক কথা বলেছে। তবে কার্যকর কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে দিন দিন সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে। অথচ অনিয়ম-দুর্নীতি ও অপচয় রোধ করা গেলে বাংলাদেশ রেলওয়ে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়া অসম্ভব নয়। যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যাওয়াই এর স্পষ্ট প্রমাণ। লাভজনক করতে প্রয়োজন পণ্য পরিবহন বৃদ্ধির জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেয়া। তাহলে লোকসান কমিয়ে রেলওয়ের লাভের মুখ দেখা অসম্ভব নয় বলেই আমরা মনে করি।


আরো সংবাদ



premium cement