২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অক্সফাম সম্মেলনে অর্থনীতিবিদদের অভিমত

বৈষম্য সামাজিক উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে

-

বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে প্রবল আয়বৈষম্য বিরাজ করছে। এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে একধরনের অর্থনৈতিক বৈষম্য। বাংলাদেশের সবচেয়ে গরিব প্রায় ২০ লাখ পরিবারের প্রতি মাসের গড় আয় মাত্র ৭৪৬ টাকা। একইভাবে সবচেয়ে ধনী পাঁচ শতাংশ পরিবারের মাসিক গড় আয় লাখের কাছাকাছি। দেশের সবচেয়ে ধনী ১৯ লাখ ৬৫ হাজার পরিবারের মাসিক গড় আয় ৮৯ হাজার টাকা। এর অর্থ, দেশের সবচেয়ে হতদরিদ্র পরিবারের চেয়ে ধনীরা প্রায় ১১৯ গুণ বেশি আয় করে। ২০১৬ সালের খানা আয় ও ব্যয় জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই চিত্র আমরা পাই। ২০১৮ সালে প্রতিবেদনটির প্রাথমিক তথ্য প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। গত ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকাশ করা হয় এই জরিপের বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত। গিনি সহগের মাধ্যমে আয়বৈষম্য চিহ্নিত করা হয়। ২০১০ সালে গিনি সহগ ছিল দশমিক ৪৫৮। ২০১৬ সালে এসে দাঁড়ায় দশমিক ৪৮৩। এর অর্থ, গত ছয় বছরে বাংলাদেশের মানুষের আয় ও সম্পদবৈষম্য বেড়েছে। আর তা এখন প্রায় উচ্চ বৈষ্যমের দেশে পরিণত হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কোনো দেশের গিনি সহগ দশমিক ৫০-এর বেশি হলে সে দেশকে উচ্চ বৈষ্যমের দেশ হিসেবে ধরা হয়।
এই প্রায় উচ্চ আয় ও সম্পদবৈষম্য সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন অর্থনীতিবিদেরা। গত পরশু ঢাকায় অক্সফাম আয়োজিত এই বৈষম্য সম্পর্কিত একটি সংলাপে অর্থনীতিবিদেরা বলেছেনÑ সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া, যাতে এই আয় ও সম্পদবৈষ্যমের প্রবণতা থামানো যায়। কারণ, এই বৈষম্যের ঊর্ধ্বগামী প্রবণতা দেশের সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘দেশে আয়বৈষম্য বাড়ছে, সামাজিক অনেক সূচকে বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে। যদি এই বৈষম্য বাড়তে থাকা অব্যাহত থাকে, তবে সামাজিক উন্নয়ন ব্যাহত হবে। উন্নয়ন নিয়ে গর্ব করার মতো আমাদের কিছু থাকবে না। জিডিপি অগ্রগতিকে টেকসই করা যাবে না।’
গবেষণা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন অন্বেষার চেয়ারপারসন অধ্যাপক রাশেদ আল-মাহমুদের বক্তব্যে একই ধরনের অভিমতের প্রতিফলন রয়েছে। তিনি বলেন, যদি বৈষম্যের অবসান ঘটানো না যায়, তবে দেশের সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেছেন, যখন প্রবৃদ্ধির হার বাড়ে, কিছু কারণে বৈষম্য বাড়তে পারে; কিন্তু সরকারের উচিত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে এই বৈষম্য দূর করা।
আমরা মনে করি, অক্সফাম আয়োজিত সংলাপে আয়বৈষম্য তথা সম্পদবৈষম্য নিয়ে অর্থনীতিবিদদের দেয়া অভিমত বা বক্তব্য যথার্থ। কারণ বাংলাদেশে চলমান আয়বৈষম্য ও সম্পদবৈষম্য দেশের সামগ্রিক অগ্রগতিকে থামিয়ে দিতে পারে। দেশে সামাজিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হলে সামাজিক অস্থিরতা বেড়ে যেতে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বেড়ে চলাটাই অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রমাণ বহন করে না। অর্থনীতির সামগ্রিক ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে উন্নয়ন টেকসই হয় না। আর আয়বৈষম্য বা সম্পদবৈষম্য জিইয়ে রেখে কখনো অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা যায় না। তাই বিদ্যমান আয়বৈষম্যের অবসান ঘটানোর জন্য সরকারকে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে মাঠে নামতে হবে। ইতোমধ্যে আমরা উচ্চ বৈষম্যের প্রায় কাছাকাছি অবস্থান করছি। আমরা আশা করব, অর্থনীতিবিদদের এই পরামর্শকে আমাদের নীতিনির্ধারকেরা গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নেবেন।


আরো সংবাদ



premium cement