২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
অর্থনৈতিক দুরবস্থা

ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিপাকে

-

দেশে আয়বৈষম্য বেড়ে যাওয়ায় মানুষের কাছে চলার মতো প্রয়োজনীয় টাকা নেই। অর্থ চলে গেছে গুটিকয়েক মানুষের কাছে। বিশেষ করে মার্কেটগুলোর ব্যবসায়িক অবস্থা খুবই খারাপ। ফলে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। রাজধানীর মার্কেটগুলোয় কয়েক লাখ খুচরা দোকান থাকলেও লাভে রয়েছে মাত্র গুটিকয়েক। কয়েক বছরে রাজধানীর বহু দোকানদার ব্যবসায় ছেড়ে দিয়েছেন। এসব দোকান হাতবদলের পর কিছু দিন লোকসান গুনে নতুনেরাও ব্যবসায় গুটিয়ে নিচ্ছেন। রোজার ঈদের আগে-পড়ে যা বিক্রি হয়; তাতে দোকান খরচ ওঠে না। পারিবারিক ব্যয় চলছে পুঁজি ভেঙে। আয় কমে যাওয়ায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী অনেকে পরিবারকে গ্রামে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্ব, বিনিয়োগে খরা, শেয়ারবাজারের দুরবস্থা, পরিবহন এবং বিভিন্ন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় অর্থনীতিতে ও জনজীবনে দুরবস্থা এখন দৃশ্যমান।
এর প্রমাণ মেলে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদনে। সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৫তম। আগেরবার অবস্থান ছিল ১০৩। প্রতিবেদন তৈরিতে ১২টি সূচক ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০টিতেই পিছিয়েছে। সেগুলো হলো সামষ্টিক অর্থনীতি, শ্রমবাজার, তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার, অবকাঠামো, দক্ষতা, প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়বৈচিত্র্য, উদ্ভাবন এবং বাজারের আকার। বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে অবকাঠামো, দক্ষ মানবসম্পদ ও সুশাসনের অভাবের কথা জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদেরা। একই অবস্থা বিনিয়োগচিত্রেও। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৩১ কোটি ডলার, সেখানে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কমে হয়েছে ৫২৫ কোটি ডলার; অর্থাৎ এক বছরে বিদেশী বিনিয়োগ অর্ধেকে নেমে এসেছে। অথচ সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষণের ক্ষেত্রে ওই অর্থবছরে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ছিল শীর্ষে। দেশী বিনিয়োগের চিত্রও হতাশাজনক। বিগত অর্থবছরে আগের অর্থবছরের তুলনায় অনেক কম বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন করা হয়েছে।
রাজনৈতিক সঙ্ঘাত ও অনিশ্চয়তাকে বিনিয়োগ কমে যাওয়ার জন্য দায়ী করা হতো। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ না পাওয়া এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতাকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং দীর্ঘসূত্রতাও দায়ী। সব উদ্যোক্তাকে চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ দেয়া হচ্ছে না। ফলে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। ব্যবসায়িক দুরবস্থায় ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার এবং মাত্রাতিরিক্ত খেলাপি ঋণের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ছয় মাসেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১৮ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা।
বৈষম্যভিত্তিক অর্থনীতি সাধারণ মানুষের মধ্যে বঞ্চনাবোধের জন্ম দেয়। সমাজে প্রথমে এক ধরনের অস্থিরতা দেখা দেয়। তা একসময় পুরো জনগোষ্ঠীর মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেশের সামগ্রিক অবস্থা চরমভাবে অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে। এটা কারো জন্যই কল্যাণকর নয়। তাই পরিস্থিতি উন্নত করার জন্য অর্থনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন।


আরো সংবাদ



premium cement