২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঋণের কারণে পরিবারসহ আত্মহনন

প্রয়োজন অর্থনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠা

-

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অগ্রগতির খবর প্রতিদিন প্রচার হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা এবং সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে দেশের দ্রুত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এক দশকের কম সময়ে দেশের অর্থনীতির আকার প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অচিরেই মধ্যম আয়ের দেশ হতে চলেছে বাংলাদেশ। উন্নত দেশ হওয়ার পথেও বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে।
এত সব প্রচারণা চলছে ঠিকই। কিন্তু সমাজে এর যথার্থ প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। একটি দেশের উন্নয়ন হলে যেমন সমগ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়ে যাওয়ার কথা, তেমনটা দেখা যাচ্ছে না। এমন অনেক মানুষ আছেন যারা অর্থনীতির উন্নয়নের সুফল পাওয়ার বদলে শিকার হচ্ছেন বঞ্চনার। বুধবার রাজধানী ঢাকাতে একটি পরিবারের সব সদস্যের লাশ পাওয়া গেল। বলা হচ্ছে, পাওনাদারের চাপ সইতে না পেরে সপরিবারে আত্মহননের পথ বেছে নেন পরিবারের কর্তা ব্যক্তিটি। কোন পরিস্থিতিতে পৌঁছলে একটি পরিবারের সব সদস্য একসাথে আত্মহননের পথ বেছে নিতে পারে সেটি ভেবে দেখা দরকার।
খবরে প্রকাশ হয়েছে, রাজধানীর মিরপুরে একটি ফ্ল্যাটে বাবা-মাসহ কলেজপড়–য়া একটি ছেলের লাশ পাওয়া গেছে। স্ত্রী ও সন্তানের লাশ বিছানায় পাওয়া গেছে। আর বাবার লাশ পাওয়া গেছে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝোলানো। পুলিশের ধারণা, স্ত্রী ও সন্তান বিষপানে মারা যায়। অন্য দিকে বাবা মো: বায়েজিদ নিজে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করেন। ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে জানা যাচ্ছে, প্রায়ই বায়েজিদের কাছে দেনার টাকা চাইতে বিভিন্নজন আসত। গত বৃহস্পতিবার সকালে তিন চারজন লোক আসে তার সাথে দেখা করতে। বিকেলে আসেন এক বন্ধু তার খোঁজে। দরজা বন্ধ পেয়ে ফিরে যান। তিনি বায়েজিদের শ্যালককে জানান, বায়েজিদের বাসার ধরজা ভেতর থেকে বন্ধ। তার শ্যালক একটি নকল চাবি এনে বাসার দরজা খুলে তিনটি লাশ দেখতে পান। বায়েজিদের কাছে লোকেরা দেনার টাকা চাইতে আসছিলেন। তিনি নিয়েছিলেন ব্যাংক থেকে ঋণ। সেই ঋণের টাকা যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারায় তার বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা হয়েছে। এ নিয়ে হতাশায় ছিলেন তিনি।
আলামত দেখে পুলিশ ধারণা করছে, স্ত্রী-সন্তানকে বিষ পান করানোর পর নিজে আত্মহত্যা করেছেন বায়েজিদ। ঘরের ভেতরে পাওয়া চিরকুট থেকে জানা যাচ্ছে, তার আর্থিক অবস্থা খুবই সঙ্কটাপন্ন হয়ে পড়ে। একজন মানুষ ব্যবসা কিংবা অন্য কোনো অর্থনৈতিক কাজ করতে গিয়ে কতটা বিপদের মধ্যে পড়ছেন তা এ ঘটনায় কিছুটা আঁচ করা যায়। এ অবস্থায় কারো কাছ থেকে কোনো ধরনের সহযোগিতা হয়তো পাননি তিনি। পরিবর্তে নিশ্চয়ই ঋণের টাকা পরিশোধের জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল তার ওপর। পরিস্থিতি এমন যদি হয় যে কেউ দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে সে কিভাবে দেনা পরিশোধ করবে। এ ধরনের বিপদগ্রস্ত লোকদের জন্য প্রয়োজন সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় সাহায্য। কোনো দিকে উপায়ান্তর না দেখলেই কেবল একজন মানুষ পরিবারসহ নিজে আত্মবিনাশী হয়ে উঠতে পারেন।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে ফানুস ওড়ানো হচ্ছে তার বাস্তবতা বাংলাদেশের সমাজে দেখা যাচ্ছে না। বরং আমরা দেখতে পাচ্ছি কিছু মানুষের কাছে সম্পদের বিস্ময়কর পাহাড়। বর্তমানে চলা ক্যাসিনো-বিরোধী অভিযানে যা উন্মোচন হচ্ছে। হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ঋণখেলাপিরা ছাড় পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আটকা পড়ে যাচ্ছে বায়েজিদের মতো সাধারণ মানুষেরা। অন্য দিকে ব্যবসা-বাণিজ্যে চলছে একচেটিয়া দৌরাত্ম্য ও ফটকাবাজি। এগুলোর সুযোগ পাচ্ছে ক্ষমতাসীন বলয়ের লোকেরা। বায়েজিদের মতো লোকেরা কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছে না। তারা ঋণ পুনঃতফসিলেরও সুযোগ পাচ্ছে না। তাদের সামনে একটি মাত্র বিকল্প বড় হয়ে দেখা দেয়, তারা মনে করে পরিবারসহ আত্মবিনাশী হলে এর থেকে মুক্তি মিলবে। এ ধরনের অসংখ্য বঞ্চনার খবর প্রায় প্রতিদিন আসছে গণমাধ্যমে। সরকারের উচিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সাম্য প্রতিষ্ঠা করা ও ধনী, গরিবের বৈষম্য নিরসনে উদ্যোগী হওয়া।

 


আরো সংবাদ



premium cement