১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তন

ক্ষতিগ্রস্তরা জোরালো আওয়াজ তুলুন

-

জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। এই পরিবর্তন মানুষের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব না ফেললে, এটা খুব একটা আলোচনার বিষয় হতো না। বাস্তবে বিশ্ববাসীর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব দ্রুত বাড়ছে। প্রধানত বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়ে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাচ্ছে। এটি আবার এই গ্রহের উষ্ণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। পৃথিবী বসবাসের উপযোগিতা হারাচ্ছে। শীতপ্রধান দেশে তাপমাত্রা রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। অন্য অঞ্চলেও তাপ বাড়ছে। উপকূলীয় জনবসতি সাগরগর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে অনেক দ্বীপ তলিয়ে গেছে। বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘ উপকূল। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশের উপকূলে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ক্ষতি বেড়ে গেছে। এ জন্য এককভাবে বাংলাদেশ যতটা দায়ী, তার চেয়ে বেশি দায়ী উন্নত দেশগুলো। এ ধরনের নেতিবাচক প্রবণতা রোধের জন্য ধনী দেশগুলো প্রয়োজনীয় সাড়া দিচ্ছে না।
জলবায়ু পরিবর্তনের যে গতি, সে হারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়েনি। অর্থাৎ এ জন্য মানুষের যা করণীয় তা করা হচ্ছে না। এর ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি সেটা বহুগুণে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বিপদ বাড়ছে। এ বিপদ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। জোয়ারের পানিতে বেশি করে বাড়িঘর ও আবাদি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। দেশের মধ্যাঞ্চলে ভূগর্ভে নোনাপানির উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। মিঠাপানির উদ্ভিদ ও মাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ বঙ্গোপসাগরের সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা আধা মিটার বাড়বে। এতে সুন্দরবনের ৪২ শতাংশ ডুবে যাবে। উপকূলীয় ১৯ জেলার ২৫ লাখ মানুষ বাস্তুহারা হবে। এর প্রভাবে প্রতি বছর আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। বিশেষ করে প্রতি বছর বাস্তুহারা হবে হাজার হাজার মানুষ। নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়ে সেসব এলাকা ও তার আশপাশে পানিবাহিত রোগবালাই ছড়িয়ে পড়বে। এখনই এসবের আলামত দেখা যাচ্ছে। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে।
এ জন্য ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো নিজেদের সাধ্যের মধ্যে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। ক্ষতির পরিমাণ সীমার মধ্যে রেখে পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলার চেষ্টা করতে পারে। করতে পারে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণসহিষ্ণু ফল-ফসলের আবাদ। ঝড় ও জলোচ্ছ্বাস থেকে রক্ষা পেতে উপযুক্ত বাড়িঘর নির্মাণ করতে পারে। প্রয়োজনীয় শেল্টার স্থাপন, উদ্বাস্তু হতে যাওয়া মানুষদের পুনর্বাসনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ছড়িয়ে পড়া রোগব্যাধি থেকে বাঁচতে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে। একক প্রচেষ্টায় এর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করা সম্ভব নয়। সে জন্য দরকার সমন্বিত বৈশ্বিক উদ্যোগ। আমরা দেখেছি, সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থানবার্গের উদ্যোগ। তার আন্দোলন এখন ছড়িয়ে পড়ছে পুরো বিশ্বে। এই স্কুলছাত্রী বিশ্বনেতাদের জোরালো আহ্বান জানাচ্ছে, তারা যেন উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
এখন পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য প্রধানত কার্বন নিঃসরণকে দায়ী করা হচ্ছে। এ জন্য দায়ী হচ্ছে শিল্পোন্নত দেশগুলো। সর্বাধিক কার্বন নিঃসরণ করে যুক্তরাষ্ট্র। তারপরই রয়েছে ইউরোপ ও চীন। কিন্তু এদেশগুলো তাদের দায়িত্ব যথেষ্টভাবে পালন করছে না। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব জলবায়ু চুক্তি থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অন্য দিকে বাংলাদেশসহ অনেক গরিব দেশ ভুগছে তাদের সৃষ্ট উষ্ণতাজনিত বৈশ্বিক ক্ষতিতে। এ ছাড়াও পুরো বিশ্ব জলবায়ু হুমকির মুখোমুখি পড়ছে। ভবিষ্যতে একটি নির্মল প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য শিশুরা আজ আন্দোলনে নামছে। সারা বিশ্বে লাখ লাখ শিশু জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিবেশের অধিবেশন উপলক্ষে তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছে, জলবায়ু উষ্ণতা রোধে বাস্তব পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা। আমরাও আশা করব, বিশ্ব নেতৃত্ব বৈশ্বিক উষ্ণতা রোধে কার্যকর চুক্তিতে উপনীত হবেন।


আরো সংবাদ



premium cement