২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
দুর্নীতির সর্ব বিস্তার

ব্যবস্থা নিতে হবে সবার বিরুদ্ধে

-

ক্ষমতাসীন দলের ঘুম যেন হঠাৎ করে ভাঙল। দুর্নীতি-অনিয়মের মধ্যে আকণ্ঠ নিমজ্জিত নিজেদের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আওয়াজ উঠেছে। প্রথমে ছেঁটে ফেলা হলো তাদের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাকে। তাদের বিরুদ্ধে এখন জানা যাচ্ছে অনেক অভিযোগ। এরপর ক্ষমতাসীনদের অন্যতম শক্তি যুবলীগের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার রব উঠল। দলটির কোনো নেতার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে রাজধানীর কয়েক জুয়ার আসরে অভিযান চালানো হলো। সেখান থেকে অনেককে গ্রেফতার করা হলো, মাদক ও অস্ত্রসহ আটক হলো যুবলীগের এক শীর্ষস্থানীয় নেতা। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জানা গেল, রাজধানীর জুয়ার বাজারটি এখন বিশাল বড়। প্রতি রাতে সব মিলিয়ে ঢাকার জুয়ার আসরে লেনদেন শত কোটি টাকা।
দুই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে এগুলো বর্তমানে চলা দুর্নীতি ও অনিয়মের আইসবার্গের দেখা যাওয়া সেই সামান্য চূড়া। চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, দুর্নীতি, অনিয়ম ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের ব্যাপক বিস্তার সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের শীষ দুই নেতা আলাদাভাবে দুর্নীতি করছেন ব্যাপারটা কোনোভাবে এমন নয়। এর সাথে দেশব্যাপী তাদের যে সংগঠন রয়েছে তার মাধ্যমে তা পুরো দেশে বিস্তার লাভ করেছে। লাখ লাখ টাকা দিয়ে ছাত্রসংগঠনটির পদ কেনার খবর নতুন কিছু নয়। একটি পদ যখন কয়েক লাখ টাকা দিয়ে এক ছাত্র কিনছেন তিনিও ওই পদ ব্যবহার করে অর্থ কামাবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য চাঁদা তো তাদের দিতে হবে। এর সাথে দোকানপাট ও বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্যও তাদের চাঁদা দিতে হয়Ñ এমন খবর এখন সাধারণ ব্যাপার।
অভিযান চালানোর পর ঢাকায় জুয়ার বাজারটি কত বড় সে খবর পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিদিন শত কোটি টাকা ঢাকায় জুয়ার আসরে হাতবদল হয়। এর সাথে রয়েছে মাদকের ব্যাপক বিস্তার। খবরে জানা যাচ্ছে, ঠিক থানার পাশে এমন কর্মকাণ্ড হচ্ছে। যুবলীগের নেতাদের সামনে রেখে এ ব্যবসা যে চলছে সেটি সচেতন মহলের সবার জানা ছিল। কিন্তু একটি অবৈধ কাণ্ড হিসেবে এটি এরপরও মহাসমারোহে কেন চলছিল সেটি অভিযানে অংশ নেয়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট, র্যাবের কর্মকর্তার বক্তব্য এবং গ্রেফতার হওয়া যুবলীগের নেতাকে জিজ্ঞাসাবদে জানা গেল। এটা এখন স্পষ্ট হচ্ছে জুয়ার আসরের অর্থ ভাগাভাগি হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্নপর্যায়ের নেতা, পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও আন্ডারওয়ার্ল্ড সন্ত্রাসীদের মধ্যে। এর অর্থে যেমন পুলিশের সিপাহির ভাগ ছিল একইভাবে ভাগ পেত শীর্ষ সারির রাজনৈতিক নেতা। এমনকি অনেকে গাড়ির মতো উপহার পেতেন জুয়ার আসর থেকে। অর্থাৎ সমাজের বিশাল একটি শ্রেণী যারা ক্ষমতাসীনদের কেন্দ্র করে আবর্তিত তাদের যোগসাজশে এটা হতে পারছে। এখন এক-দু’জনকে আলাদা করে বলির পাঁঠা বানিয়ে দুর্নীতি দমনের অভিযান প্রহসন ছাড়া অন্য কিছু হবে না।
জুয়ার বাজারের বিস্তৃতি এক দিনে হয়নি। বহু বছর ধরে এটি চলছে। প্রথম দিন যখন এটি শুরু হয়েছিল সে দিন যেমন এটি অন্যায় কাজ ছিল, একইভাবে সারা রাজধানীতে যখন এটি ৬০ ক্লাবের মধ্যে বিস্তার লাভ করেছে তখনো এটি অন্যায়। তবে ক্ষমতাসীনদের দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এখন এটি মহা অন্যায় হয়ে যাবে, আগে সব ঠিক ছিল এমনটি ভাবা সঠিক হবে না। বাংলাদেশে অনিয়ম-দুর্নীতির যে বিস্তার তা কেবল জুয়ার আসর জমিয়ে হচ্ছে এমন নয়। দুর্নীতি-অনিয়মের এমন আরো শত শত খাত রয়েছে। সরকার যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সততার সাথে অবস্থান নেয় তাহলে সব ধরনের দুর্নীতি ও সব দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। গুটিকয় দুর্নীতিবাজ ও অন্যায়কারীকে অভিযুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে বাকিদের সাফসুতরো করে দিলে সেটি সঠিক হবে না। দুর্নীতিবাজ যদি সরকারের ভেতরে উঁচুপর্যায়ের কেউ হয়ে থাকে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের তৃতীয় মেয়াদে এসে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে ধরনের কঠিন অবস্থা দেখাতে চাইছেন, তাহলেই কেবল সেটি সফল হতে পারে।


আরো সংবাদ



premium cement